—প্রতীকী চিত্র।
ফাঁকফোকর চিহ্নিত হয়েছিল আগেই। সেগুলি ভরাটের কাজ শুরু হতেই বৃত্তিকর (প্রফেশনাল ট্যাক্স) আদায়ে জোয়ার এসেছে রাজ্যে।
অর্থ দফতর জানিয়েছে, বৃত্তিকর বাবদ এই অর্থবর্ষে এখন পর্যন্ত ৬৪২ কোটি টাকারও বেশি এসেছে। এই গতি থাকলে আদায় গত অর্থবর্ষের চেয়ে (৭৩১ কোটি) অনেকটা বাড়বে। দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘রাজ্যের জনমুখী পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে বাড়তি অর্থের জন্য বৃত্তিকর আদায়ের হাতিয়ার ধারালো করা হচ্ছে।’’
মাসিক ১০,০০০-১৫,০০০ টাকা বেতনের কর্মীদের বৃত্তিকর ১১০ টাকা। ১৫,০০১-২৫,০০০ টাকা আয়ে ১৩০ টাকা, ২৫,০০১-৪০,০০০ টাকা আয়ে ১৫০ টাকা, ৪০,০০০ টাকার বেশি হলে ২০০ টাকা। বেতন থেকে তা কেটে জমা দেয় সংস্থা। চিকিৎসক, আইনজীবীর মতো পেশাদারেরাও বৃত্তিকর দেন। বার্ষিক লেনদেন ৫ লক্ষ টাকার বেশি হলে ব্যবসায়ীদের দিতে হয়। লেনদেন ৫০ লক্ষ ছাড়ালে বছরে কর চোকাতে হয় সর্বোচ্চ ২৫০০ টাকা।
অর্থ দফতর সূত্রে খবর, এই কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা তৈরি হচ্ছিল। করোনা-উত্তর পর্বে খেলাপির সংখ্যা ও করের আওতার বাইরে থাকা ক্ষেত্র চিহ্নিত করার কাজ শুরু হয়। বকেয়া আদায় ও কর ফাঁকি রুখতে রাজ্য বাণিজ্য কর দফতরের কমিশনার খালিদ আনোয়ারের নির্দেশে বৃত্তিকর কর্তাদের নিয়ে গড়া হয় বিশেষ বিভাগ। বহু নিয়োগকর্তা কর ফাঁকি দিতে কর্মীদের বেতন কম দেখিয়েছেন বলে নানা সূত্রে খবর আসে। গত এপ্রিল থেকে তাঁদের বিরুদ্ধে শুরু হয় তদন্ত।
দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘এক ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম ট্রেনের প্যান্ট্রিকারে ঠিকা সংস্থার অধীনে কাজ করা রাঁধুনির মাসিক বেতন দেখানো হয়েছিল মাত্র ৯০০ টাকা। বাস্তবে তা অনেক বেশি। এমন অজস্র উদাহরণ আছে।’’ আবার, ভিন্ রাজ্যের কিছু সংস্থা পশ্চিমবঙ্গে নিয়োজিত কর্মীদের বেতন থেকে কাটা কর রাজকোষে না দিয়ে তা পকেটে পুরছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এর পরেই ই-মেল এবং এসএমএস করে খেলাপিদের বকেয়া শোধ করতে বলা হয়। না হলে জরিমানা বা এফআইআর করা হবে বলে বার্তা যায়। তাতেই কাজ হয়েছে বলে মনে করছেন কর্তারা।
বৃত্তিকর বিভাগের সদ্য প্রাক্তন অতিরিক্ত কমিশনার সৌভিক চৌধুরী জানান, নানা সূত্র থেকে খবর সংগ্রহ, খেলাপি এবং ‘অসাধু’ নিয়োগকর্তাদের অফিসে গিয়ে তদন্ত হয়েছে। পরীক্ষা হয়েছে খাতা। তদন্তের আওতায় থাকা কয়েকশো ক্ষেত্র থেকে আদায় হয়েছে বেশ কয়েক কোটি টাকা। নবান্ন সূত্রের খবর, গত দু’বছরে আদায় বেড়েছে ১৩৫ কোটির বেশি। ২০২২-২৩ সালে এসেছিল ৭৩১ কোটি। ২০২০-২১ সালে ৫৯৬ কোটি। গত দু’অর্থবর্ষে বৃদ্ধি যথাক্রমে ১১.৩৫% ও ১০.২৬%।