প্রতীকী ছবি।
আগের পতনের জের সবে কাটিয়ে উঠছিল বাজার। নিফ্টি আবার গুটি গুটি এগোচ্ছিল ১০ হাজারের পথে। এমন সময়ে এল আচমকা ধাক্কা। তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিসের সিইও পদ থেকে পদত্যাগ করলেন বিশাল সিক্কা। যার প্রভাব আছড়ে পড়ল দেশের দুই প্রধান সূচকের উপরে।
বাজার থেকে নিজেরাই নিজেদের শেয়ার কিনে ফিরিয়ে নিতে পারে ইনফোসিস, এই খবরে যখন সংস্থার শেয়ার দর উঠতে শুরু করেছিল, তখনই সিক্কার পদত্যাগে ছবিটা গেল উল্টে। এই তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার শেয়ারের সঙ্গে সঙ্গে পড়তে দেখা গেল আরও বহু শেয়ারকে। এ যেন টাটাদের সঙ্গে সাইরাস মিস্ত্রির কাজিয়া পর্বের পুনরাবৃত্তি। তবে বাজারমহলের আশা, টাটা গোষ্ঠীর শেয়ার যেমন গা ঝাড়া দিয়ে মাথা তুলতে বেশি সময় নেয়নি, তেমন ইনফোসিসও কাটিয়ে উঠবে ‘বিশাল-ধাক্কা’। তবে আশার কথা এটাই, এত কিছুর মধ্যেও বাজার থেকে শেয়ার ফেরানোর সিদ্ধান্ত শনিবার চূড়ান্ত করেছে সংস্থার পর্ষদ।
অনেকেই মনে করেন, যে-শেয়ারে লগ্নি করা হয়েছে, তা একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় উঠলে বিক্রি করে লাভ ঘরে তুলবেন। দাম সেই জায়গায় উঠে আসার পরেও বাজারের তেজি ভাব দেখে অনেকে আবার আরও একটু বেশি আশা করেন। আর ঠিক তখনই হয়তো নেমে আসে পতনের খাঁড়া। ঠিক যেমন গত সপ্তাহে ঘটল।
একই অভিজ্ঞতা হতে পারে কিনতে গিয়েও। অভীষ্ট দামে কেনার আগেই বাজার উঠতে শুরু করতে পারে। ফলে হাতছাড়া হতে পারে বেশ কিছু ভাল শেয়ার কম দামে কেনার সুযোগ। আসলে চঞ্চল বাজারে অভীষ্ট দামে কেনা-বেচা বেশির ভাগ সময়েই সম্ভব হয় না। তাই সেরা দামের জন্য বসে না-থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ।
এখন প্রশ্ন হল, বর্তমান জায়গা থেকে বাজারের ভবিষ্যৎ কী? অর্থনীতি সম্পর্কে আশার কথা শোনা যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে, ভাল বর্ষা। জিএসটি রূপায়ণে সরকারের আয় বৃদ্ধি ও তার হাত ধরে উন্নয়নমূলক কাজকর্ম বাড়ার আশা। পরিসংখ্যান বলছে, ভারতের রফতানি বাড়ছে ও কমছে চলতি খাতে লেনদেন ঘাটতি।
কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে যে, সহ্যের সীমা ছাড়িয়েছে ব্যাঙ্কগুলির অনুৎপাদক সম্পদ। যার সুরাহায় মোটা টাকা ঢালতে হবে কেন্দ্রকে। চিন-পাকিস্তানকে নিয়ে মাথাচাড়া দিয়েছে সীমান্ত সমস্যা। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সমস্যা দানা বেঁধেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক ঘিরে। এই সমস্যাগুলি যে-কোনও দিন বড় বজ্রপাত ঘটাতে পারে। বয়ে আনতে পারে সূচকের বড় পতন। কাজেই বাজার নাগাড়ে উঠবে ভাবা ঠিক নয়। শেয়ার কেনা-বেচার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে এটা মাথায় রেখেই। ফলে সেরা দামের লক্ষ্যে ছুটলে হবে না।
সবাই মানছেন, বড় মেয়াদে অর্থনীতি ভাল জায়গায় থাকবে। এই কারণে যাঁরা লগ্নি বেশি দিন ধরে রাখতে আগ্রহী, তাঁরা প্রতিটি পতনে বাছাই করা ভাল শেয়ার একটু একটু করে কিনতে পারেন। চঞ্চল বাজারে এসআইপি-র পথে লগ্নি করা যেতে পারে মিউচুয়াল ফান্ডেও। ক’দিন আগে শেষ হল আয়কর রিটার্ন দাখিল পর্ব। এ বার শুরু করতে হবে ২০১৭-’১৮ অর্থবর্ষে কর সাশ্রয়ের জন্য সঞ্চয়। ফান্ডের ইএলএসএস প্রকল্পে খোলা যেতে পারে এসআইপি অ্যাকাউন্ট।
আগামী দিনে অর্থনীতি তথা শেয়ার বাজার ভাল জায়গায় থাকবে ধরে নিয়ে নতুন ইস্যু আনতে চলেছে বেশ কিছু সংস্থা। এদের মধ্যে থাকবে একগুচ্ছ বিমা সংস্থা। থাকতে পারে এনএসই-র মেগা ইস্যু, ভারত সরকারের নতুন এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড। বাকিদের মধ্যে থাকতে পারে মহীন্দ্রা লজিস্টিকস, ম্যাট্রিমনি ডট কম, গোদরেজ অ্যাগ্রোভেট, ভারত রোড নেটওয়ার্ক ইত্যাদি। সব মিলিয়ে মার্চের মধ্যে বাজার থেকে তোলা হতে পারে প্রায় ৮০,০০০ কোটি টাকা। বড় ইস্যুগুলির মধ্যে কে কত টাকা বাজার থেকে তুলতে চায়, তার সম্ভাব্য হিসেব দেওয়া হল সঙ্গের সারণিতে।