শুল্কহীন রফতানির দরজা বন্ধ ৫ জুনই, ট্রাম্পের সঙ্গে কথা চায় দিল্লি

গত ৪ মার্চ ভারতের উপর থেকে জিএসপির সুবিধা প্রত্যাহারের ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। দিয়েছিলেন ৬০ দিনের নোটিস। মার্কিন কংগ্রেসের একাধিক সদস্য ও সে দেশের শিল্প মহলের একাংশ তাঁকে বিষয়টির পুনর্বিবেচনার আর্জি জানায়।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা 

ওয়াশিংটন ও নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৯ ০৪:২৪
Share:

হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তিন মাসে আগেই। এ বার ভারতের উপর থেকে ‘জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেস’-এর (জিএসপি) সুবিধা সত্যিই প্রত্যাহার করে নিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ৫ জুন থেকে তা কার্যকর হচ্ছে। জিএসপির মাধ্যমে উন্নয়নশীল দেশগুলিকে বিনা শুল্কে কয়েকটি পণ্য তাদের বাজারে প্রবেশের সুযোগ দেয় ওয়াশিংটন।

Advertisement

গত ৪ মার্চ ভারতের উপর থেকে জিএসপির সুবিধা প্রত্যাহারের ভাবনার কথা জানিয়েছিলেন ট্রাম্প। দিয়েছিলেন ৬০ দিনের নোটিস। মার্কিন কংগ্রেসের একাধিক সদস্য ও সে দেশের শিল্প মহলের একাংশ তাঁকে বিষয়টির পুনর্বিবেচনার আর্জি জানায়। কিন্তু শুক্রবার এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমেরিকার জন্যও তাদের বাজার সমান ভাবে খোলার ব্যাপারে ভারত আশ্বাস দেয়নি। সে কারণেই ৫ জুন থেকে তাদের উপর থেকে সুবিধাপ্রাপ্ত উন্নয়নশীল দেশের তকমা প্রত্যাহার করা হচ্ছে।’’

অনেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, অতীতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ‘বন্ধু’ আখ্যা দিলেও বাণিজ্য নিয়ে ভারতকে আক্রমণ করতে ছাড়েননি ট্রাম্প। বাণিজ্যের স্বার্থে ‘বন্ধু’ রাষ্ট্রকেও রেয়াত করা হবে না এ দিনের ঘোষণায় সেটাই বুঝিয়ে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। কংগ্রেসের বক্তব্য, জিএসপির সুবিধা না থাকায় আমেরিকায় রফতানিতে সমস্যায় পড়তে পারে দেশীয় সংস্থাগুলি। এই অবস্থায় দেশকে আশ্বস্ত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেছে তারা। ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রক শনিবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, অর্থনৈতিক সম্পর্ক কখনও এক জায়গায় থেমে থাকে না। আলাপ আলোচনার মাধ্যমেই এই ধরনের সমস্যার সমাধান করতে হবে।

Advertisement

জিএসপি কী?

• পুরো নাম: জেনারেলাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্সেস।
• আমেরিকার মাটিতে কোনও দেশকে বাণিজ্যে বিশেষ
সুবিধা দিতে ওয়াশিংটনের সবচেয়ে পুরনো ও বড় ব্যবস্থা।
• ১৯৭৪ সালে তৈরি মার্কিন বাণিজ্য আইন অনুযায়ী।
• ভারতও ওই সুবিধা পেয়েছে সত্তর দশকের মাঝ থেকে।

কাদের জন্য?

• এই প্রকল্প তৈরি হয়েছিল মূলত গরিব ও উন্নয়নশীল দেশগুলির কথা মাথায় রেখে।
• নিয়ম হল: কিছু শর্ত মানলে বস্ত্র, গাড়ির যন্ত্রাংশ-সহ প্রায় ২,০০০টি পণ্য বিনা শুল্কে আমেরিকায় রফতানি করতে পারে জিএসপি-প্রাপ্ত দেশ।
• লক্ষ্য, মার্কিন বাজার খোলা পাওয়ার সুবিধা নিয়ে যাতে অর্থনীতির উন্নতি করতে পারে ওই সমস্ত দেশ। উল্টো দিকে, ওই সমস্ত পণ্য সস্তায় আমেরিকা এলে, তা দিয়ে ব্যবসা করতে পারবে বিভিন্ন মার্কিন সংস্থা। তৈরি হবে কাজের সুযোগও।

ভারতের লাভ

• প্রায় পাঁচ দশক ধরে এই সুবিধা পেয়ে এসেছে ভারত।
• মার্কিন প্রশাসনের দাবি, ২০১৭ সালে এতে সব থেকে বেশি সুবিধা ঘরে তুলেছিল ভারতই। শুল্ক গুনতে হয়নি ৫৭০ কোটি ডলারের পণ্যে।
• যদিও দিল্লির মতে, আসল সুবিধা অনেক কম। যেমন, গত বছর ওই প্রকল্পের আওতায় ৫৬০ কোটি ডলারের পণ্য আমেরিকায় রফতানি করে নিট সুবিধা ১৯ কোটি ডলারের।

বন্ধ কেন?

• এই প্রকল্পের শর্ত হল—
♦ এই সুবিধা মূলত গরিব এবং উন্নয়নশীল দুনিয়ার জন্য।
♦ শিশু শ্রম বিরোধিতা, কর্মী অধিকার, মেধাস্বত্ব ইত্যাদি ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে চলতে হয়।
♦ নিজেদের দেশের বাজারও একই ভাবে খুলতে হয় মার্কিন সংস্থাগুলির জন্য।
• গরিব দেশ হিসেবে ভারত আর এই সুবিধা পায় কি না, তা নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধছিল কিছু দিন ধরেই। অনেকের প্রশ্ন, বিশ্বের পঞ্চম বৃহৎ অর্থনীতি এই সুবিধা পাবে কেন?
• সেই সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, বার বার বললেও শর্ত মেনে ভারতের বাজার মার্কিন পণ্যের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে খোলেনি দিল্লি।

রফতানিকারীদের সংগঠন ফিও অবশ্য বলেছে, যে সমস্ত পণ্য ৩ শতাংশের বেশি করছাড় পেত সেগুলি কিছুটা সমস্যায় পড়বে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement