Sensex

উত্থান, তবু উত্তাল বিশ্ব বাজার, অপেক্ষায় ভারত

ইতিমধ্যেই ৩৫ হাজারের ঘরে নেমে যাওয়া সূচক কী আরও ধাক্কায় তলিয়ে যাবে? নাকি অন্তত কিছুটা ঘুরে দাঁড়াবে মঙ্গলবারের বিশ্ব বাজারের মতো।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০২০ ০৪:৩৩
Share:

বম্মে স্টক এক্সচেঞ্জ।

রঙের উৎসবে কালি লেপেছিল সোমবারের শেয়ার বাজার। লগ্নিকারীদের আনন্দে মেতে ওঠার সবটুকু ইচ্ছে কেড়ে নিয়ে দিনভর শুধু পতনের নতুন নতুন নজির গড়া দেখেছিল সেনসেক্স ও নিফ্‌টি। দিনের মাঝে যথাক্রমে ২৪৬৭ ও ৬৯৫ পয়েন্ট তলিয়ে যাওয়ার নজির। দিনের শেষে যথাক্রমে ১৯৪১.৬৭ ও ৫৩৮ পয়েন্ট নামার নজির। মঙ্গলবার হোলি উপলক্ষে বাজার বন্ধ। তবে সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, তা সত্ত্বেও কিছুটা হাঁফ ছেড়েছেন লগ্নিকারীরা। কারণ, বিশ্ব বাজারের বাকি সূচকগুলিকে এ দিন উঠতে দেখা গিয়েছে।

Advertisement

যদিও বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, ইউরোপ, এশিয়ার প্রায় প্রতিটি বাজারেই লেনদেন যে রকম উত্তাল ও অস্থির ছিল, তা সাধারণত দেখা যায় না। সূচক এই উঠেছে, তো পরক্ষণেই মুখ রেখেছে নীচের দিকে। তবে দিনের শেষে সেগুলির উত্থান কিছুটা স্বস্তিতে রাখে সকলে। বিশেষ করে ভারতীয় লগ্নিকারীদের, গত সপ্তাহ দুয়েকের বেশি নাগাড়ে সূচক পড়ায় যাঁরা বিপুল লোকসান গুনেছেন।

এ দিন ভারতের শেয়ার বাজার মহল অপেক্ষার প্রহর গুনেছে একটা প্রশ্নকে সামনে রেখেই, বুধবারের বাজার তাদের জন্য কী বয়ে আনবে? ইতিমধ্যেই ৩৫ হাজারের ঘরে নেমে যাওয়া সূচক কী আরও ধাক্কায় তলিয়ে যাবে? নাকি অন্তত কিছুটা ঘুরে দাঁড়াবে মঙ্গলবারের বিশ্ব বাজারের মতো।

Advertisement

বিশেষজ্ঞদের দাবি, করোনা সংক্রমণে বিশ্ব অর্থনীতির যে মাসুল গোনার আশঙ্কা, তা ঠেকাতে আন্তর্জাতিক নীতি প্রণেতারা হাতে হাত মিলিয়ে ত্রাণের রাস্তায় হাঁটতে পারে— এই ইঙ্গিতেই এ দিন কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায় ইউরোপ, এশিয়ার বাজারগুলি। যেমন, জ্বালানি জুগিয়েছে আমেরিকায় আর্থিক ত্রাণ প্রকল্প ঘোষণার আশাও। যে ইঙ্গিত দিয়েছেন খোদ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার তাঁর দেশের শেয়ার সূচককে করোনা-ধাক্কায় দিনে এক দশকেরও বেশি সময়ের তলানিতে নেমে যেতে দেখার পরেই। দ্বিতীয় ত্রাণ প্রকল্প আনার ইঙ্গিত দিয়েছে জাপানও। যদিও সংশ্লিষ্ট মহলের প্রশ্ন, শুধু এগুলিই কি সারা বিশ্বের শেয়ার বাজারকে ঠেলে তোলার যথেষ্ট কারণ হতে পারে? ভাইরাসের কামড়ে ফের আর্থিক মন্দার বলয়ে ঢুকে পড়ার ভয়ে যেগুলি কাঁপছে দিনের পর দিন!

একটু স্বস্তি


• সোমবার হুড়মুড়িয়ে পড়ার পরে মঙ্গলবার উঠেছে এশিয়ার প্রায় সব দেশের শেয়ার বাজার।

• মাথা তুলেছে ইউরোপের শেয়ার সূচকগুলিও।

• তবে ভারতে হোলি উপলক্ষে এ দিন লেনদেন বন্ধ ছিল।

• সোমবার বাজার দেখেছিল রেকর্ড পতন। সেনসেক্স ১৯৪১.৬৭ পয়েন্ট কমে হয় ৩৫,৬৩৪.৯৫। নিফ্‌টি ৫৩৮ নেমে ১০,৪৫১.৪৫। দিনের মাঝের পতনেও (সেনসেক্স ২৪৬৭, নিফ্‌টি ৭০০) রেকর্ড গড়তে দেখা যায় তাদের।

• মঙ্গলবার বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেল, ব্রেন্ট ক্রুডের দাম কিছুটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ব্যারেল পিছু ৩৭.৮৩ ডলার। সোমবার এক সময়ে তা নেমেছিল প্রায় ৩১ ডলারে।

সোমবার ভারত থেকে আমেরিকা, বাজার খোলার পর থেকেই সব সূচকের মুখ ছিল নীচের দিকে। মার্কিন সূচক এসঅ্যান্ডপি তো এক সময় এত পড়ে যায় যে, কিছুক্ষণ লেনদেন বন্ধ রাখতে হয়। ভারতে লগ্নিকারীরা এক দিনেই খুইয়ে বসেন প্রায় ৭ লক্ষ কোটি টাকার শেয়ার সম্পদ। বিশ্ব জুড়ে এমন পতনের কারণ— এক দিকে, করোনা-আতঙ্ক। অন্য দিকে, বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দর ব্যারেল প্রতি প্রায় ৩১ ডলার হয়ে ২৯ বছরের নীচে নেমে যাওয়া। এর ফলে সারা বিশ্বে আরও ঘনীভূত হয় আর্থিক মন্দার আতঙ্ক। কারণ, করোনা যত ছড়াবে, তত ধাক্কা খাবে বাণিজ্য। দেশে-বিদেশে সর্বত্র। অর্থনীতি যত ধাক্কা খাবে, তত চাহিদা কমবে তেলেরও। গত প্রায় এক দশকে এই চাহিদা প্রথম বার কমেছে বলে জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি। তেলের যত চাহিদা কমবে, তত কমবে দাম। ধাক্কা খাবে তেল রফতানিকারী দেশের আর্থিক স্বাস্থ্য। আরও শ্লথ হবে বিশ্ব অর্থনীতি।

ভারতে এখন টানা শেয়ার বেচছে বিদেশি লগ্নি সংস্থা। তবে পরিসংখ্যান বলছে, শুধু ভারতে নয়, তারা এশিয়ার কোনও দেশেই লগ্নি করতে সাহস পাচ্ছে না। কারণ করোনার প্রকোপ এই অঞ্চলেই সব থেকে বেশি। তথ্য বলছে, মার্চেই ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, তাইল্যান্ড, ভিয়েতনামের মতো দেশে এখনও পর্যন্ত লগ্নি সংস্থাগুলির শেয়ার বিক্রির অঙ্ক নিট ৯০০ কোটি ডলার (প্রায় ৬৬,৬০০ কোটি টাকা)। গত মাসে ছিল ৫৬০ কোটি ডলার।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement