করোনাভাইরাস লকডাউন পর্বের শুরু থেকে ঘরবন্দি ছিল দেশের অধিকাংশ মানুষ। সঙ্গে অধিকাংশ অফিস বাড়ি থেকে কাজ করতে বলেছিল তাঁদের কর্মীদের। ইন্টারনেটের ব্যবহার অবশ্যাম্ভাবী হয়ে পড়েছিল।
এতেই নতুন করে বুক বেঁধেছিল দেশের টেলিকম সংস্থাগুলি। জিয়ো-ভোডাফোন-এয়ারটেলের মতো টেলিকম সংস্থাগুলি ভেবেছিল তাদের গ্রাহক সংখ্যা বাড়বে।
কিন্তু টেলিকম রেগুলেটরি অথোরিটি অব ইন্ডিয়া (ট্রাই)-এর সাম্প্রতিক রিপোর্ট সামনে আসতেই দেখা গেল বাস্তব চিত্রটা ঠিক উল্টো।
এ রাজ্যে ব্যবসা বেড়েছে শুধু জিয়োর। জিয়োর গ্রাহক যখন বেড়েছে, তখন এয়ারটেল-ভোডাফোনের মতো সংস্থাগুলির গ্রাহক কমেছে। জাতীয় স্তরেও এই চিত্রটা একই রকম।
ট্রাইয়ের রিপোর্ট জানাচ্ছে, এ বছর মে মাসে পশ্চিমবঙ্গে জিয়োর গ্রাহক সংখ্যা বেড়েছে ২.৯ লক্ষ। সেখানে এয়ারটেল ও ভোডাফোনের মিলিত ভাবে প্রায় ৭ লক্ষ গ্রাহক কমেছে।
করোনা পর্বেও প্রতি মাসে গ্রাহক বৃদ্ধির জেরে, এ রাজ্যে মুকেশ অম্বানীর টেলিকম সংস্থার মোট গ্রাহক হয়েছে ১ কোটি ৮৯ লক্ষ। অর্থাৎ রাজ্যের মোট গ্রাহকের ৩৪.৫ শতাংশই জিয়োর দখলে।
আমপানের পর বেশ কিছু দিন টেলিকম নেটওয়ার্কের সমস্যা দেখা দিয়েছিল রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকায়। সংস্থার এক কর্তার দাবি, আমপান পরবর্তী পরিস্থিতিতে সব থেকে ভাল পরিষেবা দিয়েছে জিয়ো। সে জন্যও জিয়োয় ভরসা রেখেছেন রাজ্যবাসী। ফলে তাদের গ্রাহক বেড়েছে।
গ্রাহক বৃদ্ধির পাশাপাশি ব্যবসার অঙ্কেও জিয়োর ‘দাদাগিরি’ অব্যাহত। ২০২১ অর্থবর্ষের প্রথম কোয়ার্টারে জিয়োর ব্যবসা আগের কোয়র্টারের থেকে ১৪৯ কোটি টাকা বেড়েছে। এই বৃদ্ধির জেরে পশ্চিমবঙ্গ সার্কেলে তাদের ব্যবসা হয়েছে ৯৩৩ কোটি টাকার।
ওই একই সময়কালে, এয়ারটেলের ব্যবসা আগের কোয়ার্টারের থেকে ১০.৬ কোটি টাকা কমে হয়েছে ৫৬৯ কোটি টাকা। ভোডাফোন-আইডিয়ার ব্যবসা ৪৮ কোটি টাকা কমে হয়েছে ৫৬৪ কোটি টাকা।
জিয়োর যখন ব্যবসা ফুলে ফেঁপে উঠছে তখন ক্ষতির মুখে পড়েছে অন্যান্য টেলিকম সংস্থারা। বিএসএনএল এই কোয়ার্টারে নিজেদের আরএমএস রিপোর্ট জানায়নি। তবে বিএসএনএল এই তিনটি সংস্থার থেকে অনেক পিছিয়ে রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের মতো সর্বভারতীয় ক্ষেত্রেও চিত্রটা একই রকম। ভোডাফোন-এয়ারটেল যখন গ্রাহক হারাচ্ছে, তখন গ্রাহক বাড়ছে জিয়োর।
এই করোনা কালে সারা দেশের জিয়োর গ্রাহক সংখ্যা বেড়েছে ৩৬ লক্ষ। যার জেরে এই মুহূর্তে দেশে জিয়োর মোট গ্রাহক সংখ্যা ৩৯ কোটি ৩০ লক্ষ।
ট্রাইয়ের রিপোর্ট দেখিয়ে দিল, করোনা পরিস্থিতিতেও পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতে জিয়োর জয়যাত্রা অব্যাহত রয়েছে। লকডাউন দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন বিভাগে প্রভাব ফেললেও টেলিকম সেক্টরে সে রকম ধস নামাতে পারেনি।