ওয়ালমার্ট ঢোকায় ভারতের অনলাইন শপিং ফিরে পাবে ডিসকাউন্ট বোনানজা

ভারত হল বিশ্বের বৃহত্তম বাজার। ১৩০-১৪০ কোটি জনতা। তাঁদের মধ্যে একটা বড় অংশের হাতে বেশ ভাল ডিসপোজেবল আয়, যা সত্যি খরচ করা হয়।

Advertisement

কুমার শঙ্কর রায়

শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৮ ১৬:২৫
Share:

কম্পিউটার বা মোবাইলে যখন অনলাইন শপিং করতেন তখন কি ভেবেছিলেন যে ইন্টারনেটে বাজারের কী দাম? আজ বোঝা গেল। এক লাখ কোটি খরচ করে ফ্লিপকার্টকে কিনছে আমেরিকার ওয়ালমার্ট। ফ্লিপকার্টের ভাগীদারদের জন্য এ তো মেঘ না চাইতেই জল! ওয়ালমার্ট ভারতের ই-কমারস বা ই-বাণিজ্য ক্ষেত্রে পেল এক মজবুত পা রাখার জায়গা।

Advertisement

কিন্তু তাতে আপনার বা আমার লাভ কোথায়? লাভ আছে। আমেরিকার আর এক কোম্পানি আমাজন ভারতের ফ্লিপকার্ট, স্ন্যাপডিলের মতো অনলাইন শপিং সংস্থাগুলির সময় খারাপ করে দিচ্ছিল। তাই বছর তিন-চার আগের সেই লোভনীয় ডিসকাউন্ট আস্তে আস্তে হারিয়ে যাচ্ছিল। এখন ওয়ালমার্ট আসাতে আশা করা হচ্ছে যে— অনলাইন শপিং ফিরে পাবে সেই ডিসকাউন্ট বা বিশেষ ছাড়ের বোনানজা।

ভারত হল বিশ্বের বৃহত্তম বাজার। ১৩০-১৪০ কোটি জনতা। তাঁদের মধ্যে একটা বড় অংশের হাতে বেশ ভাল ডিসপোজেবল আয়, যা সত্যি খরচ করা হয়। কিন্তু এই মানুষের সমুদ্র দোকান বা শপিং মলে যেতেই ভালবাসত। এই নিয়ম ভাঙতে অনলাইন শপিং কোম্পানিরা শুরু করে নানা কৌশল। ফ্রি ডেলিভারি। আগে টাকাও দিতে হত না, পচ্ছন্দ নাহলে ফেরত দিন। এরকম নানান অবিশ্বাস্য অফার ছিল সেই সময়ে। আকর্ষণীয় ডিসকাউন্ট আছেই। একটা কিনলে, অন্যটা ফ্রি। ৫০-৭৫% ছাড় দিচ্ছিল জামাকাপড়ে। দোকানে গেলেই দর-কষাকষি আমাদের স্বভাবের মধ্যে পরে। মা হোক বা মাসিমা, বাবা হোক বা নাতি, বউ হোক বা জামাই, কম পয়সায় বেশি জিনিস পাওয়ার ইচ্ছেটাই আমাদের বাজার করার আসল উদ্দেশ্য। বলতে লজ্জা নেই, এটাই ভারতীয় মানসিকতা।

Advertisement

বিশেষ ছাড়ের প্রতিযোগিতা শুরু করে ফ্লিপকার্ট, স্ন্যাপডিল এবং অন্যরা। কিন্ত আমাজন ভারতের অনলাইন শপিংকে অন্য ভাবে দেখতে চায়। তাই উচ্চতর গ্রাহক সেবা, ভারতীয়দের জন্য বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ড এবং অন্যান্য সফল কৌশল ব্যবহার করে অ্যামাজন ভারতীয় বাজারকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হচ্ছিল। একটা কথা মনে রাখতে হবে যে ডিসকাউন্ট বোনানজা দিতে অনেক টাকা খরচ হয়। কারণ ন্যায্য দামের থেকে কমে বিক্রি করা মানে অর্থনৈতিক ক্ষতি। সেই ক্ষতিপূরণ কাউকে না কাউকে করতে হবেই। এদিকে এত টাকা কে দেবে? তাই ফ্লিপকার্ট এবং অন্য সংস্থারা লড়বার যে রসদ তার অভাবে ধীরে ধীরে কম আক্রমনাত্মক হয়ে উঠছিল।

আমেরিকার ওয়ালমার্ট আসাতে ভারতের অনলাইন শপিং নামক দাবার খেলা বদলে যাবে। কারণ ওয়ালমার্ট কোন আঙ্গুল ফুলে কলা গাছের নাম নয়। এই কোম্পানির আছে ১১,৭০০ টি স্টোর ২৮টি দেশে এবং আছে নানান ধরনের ই-কমারস ওয়েবসাইট। ২৩ লাখ লোককে চাকরি দিয়েছে ওয়ালমার্ট। বিশ্বের বৃহত্তম খুচরা বিক্রেতা হল ওয়ালমার্ট, কিন্তু তাঁদের ব্যবসার ধরন বিশাল আকারের স্টোর-কেন্দ্রিক। এটা মানতে হবে যে অ্যামাজন নিয়েছিল অনলাইন শপিং ক্ষেত্রে অগ্রণী। কিবোর্ড এবং মাউসের সাহায্যে বাজার করাতে সক্ষম হয় অ্যামাজন। এঁর ফলে ওয়ালমার্টকে বিশাল বিশাল স্টোর থেকে একটু চোখ সরিয়ে রাখতে হয় অনলাইন শপিং-এর উপর দৃষ্টি। এক দীর্ঘ প্রতিযোগিতা চলছে ওয়ালমার্ট এবং অ্যামাজনের মধ্যে। একদিকে ১৯৬২ সালে গড়া ওয়ালমার্ট এবং অন্যদিকে তথ্য প্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকা 'কালকের ছোকরা' অ্যামাজন।

যে কোনও ব্যবসার কিছু নিয়ম থাকে। ই-কমার্স বা ই-বাণিজ্য আলাদা নয়। যেহেতু ই-কমারসে মার্জিন বা লাভ কম, এই শিল্পের ক্ষেত্রে বিজয়ী পুরো বাজার নিয়ন্ত্রন করে, যাকে বলে 'উইনার টেকস অল'। বিজয়ী হওয়ার জন্যে নিতে হবে সব ক্রেতাদের। এক লাখ কোটি খরচ আসলে ফ্লিপকার্টের কোটি কোটি ক্রেতাদের কিনছে আমেরিকার ওয়ালমার্ট। কারণ ফ্লিপকার্টের ক্রেতাই হল ফ্লিপকার্টের সব থেকে বিশেষ সম্পদ। ওয়ালমার্টের সব থেকে সফল কৌশল হল - 'এভরি ডে লো প্রাইসেস' অর্থাৎ রোজ কম দাম। ফ্লিপকার্টকে কেনার পর ঠিক এই কৌশল ব্যবহার করবে ওয়ালমার্ট, এবং এর ফলে ভারতের সব ই-কমারস সংস্থাকে এই রাস্তায় হাঁটতে হবে আবার।

ভারতের অনলাইন শপিং কাস্টোমার,বা ক্রেতাদের, এখন সুবর্ণ সুযোগ। কারণ যখন বাজারের দুই সেরা প্রতিযোগী লড়াই করছে, লাভ হবে আপনাদের। নতুন করে নিজেদের কাছে টানতে আসবে নানান অফার। ডিসকাউন্ট বোন্যানজা আসবে। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে আপনাকে অনলাইন শপিং-এর মিষ্টি মায়াজালে আনার জন্য মরিয়া হয়ে লাফাবে কোম্পানিরা। হয়ত, এই ভাবেই আসবে 'আচ্ছে দিন'!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement