এশিয়া ও ইউরোপ জুড়ে চাহিদা বাড়ার হাত ধরে কল-কারখানার উৎপাদন ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত মিলেছে। শিল্পোৎপাদন চাঙ্গা হলে জাতীয় আয় বৃদ্ধিও গতি পাবে। আর, সে ক্ষেত্রে ইউরোপ ত্রাণ প্রকল্প থেকেও সরে আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি।
গবেষণা সংস্থা আইএইচএস মার্কিট অর্থনীতির উপর থেকে মেঘ কেটে যাওয়ার এই সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে। সদ্য শেষ হওয়া অগস্ট মাসে করা সমীক্ষার ভিত্তিতে তারা এই রুপোলি রেখার ইঙ্গিত দিয়েছে।
২০০৭ সালে বিশ্ব জুড়ে শুরু হওয়া আর্থিক মন্দার পর থেকেই ইউরোপের বিভিন্ন শীর্ষ ব্যাঙ্ক অর্থনীতিতে নগদের জোগান বাড়াতে আর্থিক ত্রাণ প্রকল্পের পথে হেঁটেছে। তার মধ্যে রয়েছে সুদের হার প্রায় শূন্যে নামিয়ে এনে শিল্পের হাতে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা, নিয়মিত বাজার থেকে ঋণপত্র কিনে নেওয়া ইত্যাদি। চাহিদায় ভর করে শিল্পের চাকা দ্রুত এগোলে ত্রাণ প্রকল্প ধাপে ধাপে গুটিয়ে নিতে পারে তারা।
আইএইচ এস মার্কিট-এর সমীক্ষা জানাচ্ছে, অগস্টে ইউরোপীয় অঞ্চলের জন্য তাদের হিসেব করা শিল্প বৃদ্ধির সূচক ম্যানুফ্যাকচারিং পার্চেজিং ম্যানেজার্স ইন্ডেক্স (পিএমআই) বেড়ে ছুঁয়েছে ৫৭.৪, গত ২০১১ সালের এপ্রিলের পর থেকে যা সবচেয়ে বেশি। এই সূচক ৫০-এর উপরে থাকা মানেই কারখানার উৎপাদন বাড়ার ইঙ্গিত। তার নীচে নেমে গেলে সেটা উৎপাদন সরাসরি কমার লক্ষণ। এই হিসাবের জন্য বেশ কিছু সংস্থার পণ্য-পরিষেবার চাহিদা, নতুন বরাত, মজুত ভাণ্ডার, উৎপাদন, জোগান ইত্যাদির উপর প্রতি মাসে সমীক্ষা চালানো হয়।
রুপোলি রেখা
•শিল্পে চাহিদার হাল ফেরার আশা ইউরোপে •কল-কারখানার চাকা দ্রুত ঘুরলে বাড়বে মন্দার প্রকোপ থেকে অবশেষে বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা •ইউরোপ আর্থিক ত্রাণ প্রকল্প থেকে সরে আসবে, দাবি বিশেষজ্ঞদের •এশিয়াতেও চিন, জাপান, ভারতে শিল্প বৃদ্ধি ছন্দে ফেরার আশা
সমীক্ষা কীসের ভিত্তিতে
•গবেষণা সংস্থা আইএইচএস মার্কিট শিল্প বৃদ্ধির সূচক পিএমআই হিসেবের জন্য বিভিন্ন সংস্থার পণ্য-পরিষেবার চাহিদা, নতুন বরাত, মজুত ভাণ্ডার, উৎপাদন, জোগানের উপর প্রতি মাসে সমীক্ষা চালায়
ব্রিটেনের অর্থনীতিও চাঙ্গা হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে মার্কিট-এর সমীক্ষা। সেখানে পিএমআই ২০১৭-র প্রথম ছ’মাসে ঢিমেতালে এগোলেও অগস্টে এক লাফে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬.৯। এর জেরে ব্যাঙ্ক অব ইংল্যান্ড ত্রাণ প্রকল্প কাটছাঁট করে সুদ বাড়ানোর পথে হাঁটতে পারে, মনে করছে মার্কিট।
এশীয় দেশগুলির মধ্যে চিনের জন্যও শিল্প সূচক পিএমআই বেড়ে অগস্টে ছুঁয়েছে ৫১.৬। তিন বছরে এটাই সর্বোচ্চ। জুলাইয়ে তা ছিল ৫১.১ অঙ্কে। প্রথমত, পরিকাঠামো খাতে বিপুল সরকারি ব্যয়কেই চিনের এই সাফল্যের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন অর্থনীতিবিদরা। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন শিল্পে কাজে না-লাগা উৎপাদন ক্ষমতায় রাশ টানছে চিনা সরকার। সেই কারণেই তারা বন্ধ করছে বেশ কিছু খনি ও কারখানা, যেখানে অদক্ষতাই মূল সমস্যা। এর জেরে চিন তার আর্থিক বৃদ্ধি ৬.৯ শতাংশে ধরে রাখতে পারবে বলেও আশা।
জাপানেও শিল্পে গতি ফিরেছে বলে দাবি করেছে সমীক্ষা। দেশের মধ্যে চাহিদা বাড়া ও রফতানির বরাত বাড়ার হাত ধরেই সে দেশের শিল্প ছন্দে ফিরছে বলে দাবি মার্কিটের।
ভারতেও অগস্টের পিএমআই কল-কারখানার উৎপাদন ছন্দে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছে। জুলাইয়ে জিএসটি-কে ঘিরে অনিশ্চয়তায় উৎপাদন সরাসরি কমার ইঙ্গিত দিলেও অগস্টে ব্যবসা বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে সমীক্ষা। তাদের হিসেবে ওই সূচক অগস্টে ছুঁয়েছে ৫১.২। জুলাইয়ে ছিল অনেকটাই নীচে, ৪৭.৯ অঙ্কে।