দেশের শহরাঞ্চলে কর্মহীন মানুষের হার পৌঁছল ১১ শতাংশের দোরগোড়ায়। প্রতীকী ছবি।
উপদেষ্টা সংস্থা সিএমআইই-র প্রকাশিত বেকারত্বের পরিসংখ্যান ফের দুশ্চিন্তা বাড়াল। আর্থিক কর্মকাণ্ড যখন পুরোদমে খুলেছে এবং মূল্যবৃদ্ধি মাথা নামাচ্ছে বলে হিসাব দিচ্ছে সরকার, তখন গত রবিবার শেষ হওয়া সপ্তাহে (১৮ ডিসেম্বর) দেশের শহরাঞ্চলে কর্মহীন মানুষের হার পৌঁছল ১১ শতাংশের দোরগোড়ায়। তার আগের সপ্তাহের ৯.৫০% থেকে কমলেও, স্বস্তি দিল না গোটা দেশের ৮.৮৫% বেকারত্ব। গ্রামাঞ্চলে তা তুলনায় কম। তবে মুখ এখনও ৮ শতাংশের দিকেই। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, সাপ্তাহিক পরিসংখ্যান থেকে কাজের বাজারের ছবিটা পুরো স্পষ্ট হয় না। তবে অন্য অংশ দেখাচ্ছেন, ৩০ দিনের গড় বেকারত্ব। শহুরে এলাকায় তা-ও পেরিয়েছে ১০%। চড়া গ্রামও শহরেও।
এর জন্য আর্থিক বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দত্ত সুদের খরচ বাড়ায় পুঁজির ঘাটতিতে পড়া বহু সংস্থার সম্প্রসারণ থমকানো, প্রকল্প পিছনো, আর্থিক কর্মকাণ্ডের মাত্রা কমানো এবং মেটা, টুইটার, অ্যামাজ়নের মতো পরিষেবা সংস্থার কর্মী ছাঁটাইকে দায়ী করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘চড়া মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম পরাতে শুধু সুদের হার বাড়ানো হচ্ছে। অগ্রাহ্য করা হচ্ছে আর্থিক কর্মকাণ্ডের অন্যান্য বিষয়কে। ফলে এটা হওয়ারই ছিল। রফতানি কমেছে। ভারতে শিল্পোৎপাদন আরও কমার আশঙ্কা বেড়েছে। তাই কাজ কমছে শহরে।’’
বণিকসভা বেঙ্গল চেম্বারের আর্থিক বিষয় সংক্রান্ত কমিটির চেয়ারপার্সন অজিতাভ রায়চৌধুরীর বক্তব্য, ইউক্রেনে যুদ্ধ, চিনে কোভিডজনিত অনিশ্চয়তা এবং আমেরিকায় সুদ বৃদ্ধি চাহিদা এবং জোগানকে কমিয়েছে। ফলে ধাক্কা খেয়েছে আর্থিক বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই এর সুরাহায় ভারতে সুদের পরিবর্তে পণ্যের জোগান বাড়িয়ে মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানার পক্ষে। অজিতাভবাবুও সরবরাহে জোর দেন। যদিও তাঁর দাবি, মূল্যবৃদ্ধির মতো বেকারত্বের তীব্রতা আগের থেকে কমেছে।
পটনা আইআইটি-র অর্থনীতির অধ্যাপক রাজেন্দ্র পরামানিক অবশ্য মনে করেন মূল্যবৃদ্ধির ঝুঁকি বহাল। চড়া সুদে ঢিমে আর্থিক বৃদ্ধিও। তাই কাজের বাজার ঝিমিয়ে। অথচ সেখানে ভিড় বাড়ছে। তিনি বলছেন, ‘‘সুদের খরচে ভুগছে পরিকাঠামো প্রকল্প থেকে ছোট ব্যবসা। আগামী দু’মাস উৎসবের মরসুমের সুযোগ নিতে পারলে কর্মসংস্থানের উন্নতি হবে। কাজ হবে আরবিআই সুদ বৃদ্ধির পথ থেকে সরলেও। অনির্বাণের দাবি, ভারতে আরও বাড়তে পারে সুদ। আর এই আতঙ্কেই বহু বেসরকারি সংস্থা সাম্প্রতিক কালে বড় মাপের লগ্নি থেকে হাত গুটিয়ে রয়েছে। দেশে ব্যাপক হারে উৎপাদন চালানোর মতো এমন কোনও কল-কারখানা তৈরিও হচ্ছে না, যেখানে অদক্ষ বা আধা-দক্ষ কর্মীরাও কাজ পাবেন। ফলে গ্রামেও বেকারত্ব চড়া।