ফাইল চিত্র।
এমনিতেই বাজারে বিক্রিবাটায় এখনও গতি আসেনি। ফলে শিল্পপতিরা নতুন লগ্নি করতে চাইছেন না। এই পরিস্থিতিতে মূল্যবৃদ্ধিতে লাগাম পরানোর লক্ষ্যে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক আচমকা সুদের হার বাড়ানোয় আর্থিক বৃদ্ধি ধাক্কা খাবে, মেনে নিচ্ছেন অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা। তবে তাঁদের বক্তব্য, বছর শেষে নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহর রাজ্য গুজরাতে ভোট। তার আগে মূল্যবৃদ্ধিকে অস্ত্র হিসেবে বিরোধীদের হাতে তুলে দেওয়ার ঝুঁকি নেওয়া যায় না। ফলে বৃদ্ধি মার খাওয়ার আশঙ্কা সত্ত্বেও আরবিআইয়ের পদক্ষেপ মেনে নিতে হচ্ছে। বিশেষত মোদী সরকার নিজে যেহেতু মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে।
যদিও প্রশ্ন উঠছে, এর ফলে কোভিডের গ্রাস থেকে অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়াতেও বাধা আসবে কি না। কারণ তাকে চাঙ্গা করতে সরকার শুধু ঋণের জোগান বাড়ানোতেই নজর দিয়েছিল। বাজারে কেনাকাটা বা চাহিদা বাড়াতে মানুষের হাতে নগদ টাকা তুলে দেওয়ার রাস্তায় হাঁটেনি। লক্ষ্য ছিল, ছোট-মাঝারি শিল্পের জন্য সস্তায় ঋণের পথ তৈরি। তা শোধ না হলে সরকারের গ্যারান্টি। এখন রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের পদক্ষেপে ঋণে সুদের হার বাড়লে এবং বাজারে নগদের জোগান কমলে সরকারের সেই দাওয়াইতে কতখানি কাজ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
এ বার বাজেট পেশ হওয়ার আগে আর্থিক সমীক্ষা পূর্বাভাস করেছিল, চলতি অর্থবর্ষে দেশে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৮ থেকে ৮.৫ শতাংশের মধ্যে থাকবে। কিন্তু এখন মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা ভি অনন্ত নাগেশ্বরনই বলছেন, তা রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের অনুমান মতো ৭.২ শতাংশেও নামতে পারে। কারণ, রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ কতদিন চলবে, তার কতখানি প্রভাব পেট্রল-ডিজ়েল ও গ্যাসের দামে পড়বে, সার-খাদ্যপণ্যের দামই বা কতটা বাড়বে, তা এখনই আন্দাজ করা কঠিন।
মূল্যবৃদ্ধির হার তিন মাস ধরে ৬% সহনসীমার উপরে। সেই হিসেবে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক তাতে রাশ টানার লক্ষ্যে মাঠে নামতে দেরিই করেছে বলে মত অর্থনীতিবিদদের। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, কেন্দ্র মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানতে পারেনি। অর্থ মন্ত্রক পেট্রল-ডিজ়েলে শুল্ক কমাতে রাজি হয়নি। ভোজ্য তেল, খাদ্যপণ্যের দামও কমানো যায়নি। উল্টো দিকে শীর্ষ ব্যাঙ্ক সূত্রও বলছে, অর্থ মন্ত্রককে তেলে উৎপাদন শুল্ক ছাঁটতে রাজি করানো যায়নি। অথচ ২২ মার্চ থেকে ১৬ দিনের মধ্যে তার দাম রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে। তার ঠেলায় দামি হয়েছে অন্যান্য পণ্য। আরবিআই সরকারকে অনুনয়-বিনয় করে বোঝানোর চেষ্টা করলেও লাভ হয়নি।
এ বার সুদের খরচ বৃদ্ধিতে ব্যাঙ্কের ঋণ বিলি ধাক্কা খাবে, মানছেন অর্থ মন্ত্রক ও আরবিআই কর্তারা। একই বার্তা আর্থিক উপদেষ্টা ইন্ডিয়া রেটিংসের। সে ক্ষেত্রে অর্থনীতিতে গতি আনতে মোদী সরকারের ঋণ বিলি ও ঋণ গ্যারান্টির উপরে বাজি ধরার নীতির কী হবে, প্রশ্ন থাকছেই।