Coronavirus

এই সুরাহায় কল্যাণ-মঙ্গল কতখানি, প্রশ্ন একাংশের

ভারতীয় সংস্থাগুলিকে বিদেশের বাজারে নথিভুক্ত হওয়ার যে সুযোগ রবিবার খুলে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন নির্মলা, তাতেও আদতে হাতে গোনা কিছু বড় সংস্থাই সুবিধা পাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২০ ০৫:৪৭
Share:

নির্মলা সীতারামন

পঞ্চম দফার ত্রাণ প্রকল্প ঘোষণা করতে বসে দেউলিয়া বিধি সরল করা, কোম্পানি আইনে বদল আনার মতো বিভিন্ন ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। দাবি করেছেন, করোনা যুঝতে জারি করা লকডাউনের জেরে চূড়ান্ত ক্ষতিগ্রস্ত ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পকেও সুরাহা দেবে সরকারের এই পদক্ষেপ। সেই সঙ্গে এর লক্ষ্য, দেশে ব্যবসার পরিবেশ আরও উন্নত করা। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের অনেকেরই মতে, অর্থমন্ত্রী ছোট শিল্পের সুরাহার কথা বললেও, এ দিনের ঘোষণায় উল্টে বহু ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়বে ওই সব ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি সংস্থাই। তার উপরে কোম্পানি আইনে যে সমস্ত বদল আনা হচ্ছে, তা দীর্ঘস্থায়ী হলে ধাক্কা খাবে সমাজকল্যাণ। অনেক ক্ষেত্রে তা সুবিধা করে দেবে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীকে।

Advertisement

ভারতীয় সংস্থাগুলিকে বিদেশের বাজারে নথিভুক্ত হওয়ার যে সুযোগ রবিবার খুলে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন নির্মলা, তাতেও আদতে হাতে গোনা কিছু বড় সংস্থাই সুবিধা পাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাদের পক্ষে সহজ হবে বিদেশে শেয়ার ছেড়ে টাকা তোলা। ছোট শিল্পের হাতে সে ভাবে কিছু আসবে না।

এর আগে মার্চে ১.৭ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণার সময়েই নির্মলা বলেছিলেন, দেউলিয়া আইনে মামলা করতে হলে কমপক্ষে ১ কোটি টাকা ঋণ খেলাপের অভিযোগ থাকতে হবে। এখন যা ১ লক্ষ টাকা। তার সঙ্গে রবিবার তিনি বলেছেন, করোনার জেরে তৈরি হওয়া পরিস্থিতিতে ঋণ আদায়ের জন্য ১ বছর দেউলিয়া আইনে মামলা করা যাবে না। লকডাউনের সময়ে কোনও সংস্থা ঋণ শোধ করতে না-পারলে তাকে ঋণখেলাপিও বলা যাবে না।

Advertisement

আরও পড়ুন: পেনশনে এ বার একই নিয়ম সব ব্যাঙ্কে

দেউলিয়া আইন বিশেষজ্ঞ ও ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের পূর্বাঞ্চলের প্রাক্তন চেয়ারম্যান অনির্বাণ দত্ত বলেন, “বিষয়টি যদি ব্যাঙ্কের ঋণ আপাতত না-মেটানোর ব্যাপার হয়, তা হলে অর্থমন্ত্রীর প্রস্তাব ছোট-বড় সব শিল্পকেই সাহায্য করবে। কিন্তু দেউলিয়া আইনে মামলা করার জন্য কমপক্ষে ১ কোটি বকেয়া থাকার যে কথা বলা হয়েছে, তাতে আখেরে ক্ষতি বেশি হবে ছোট-মাঝারি সংস্থাগুলিরই। কারণ, তাদের সিংহভাগ বড় সংস্থায় পণ্য জোগায়। বরাতের অঙ্ক অধিকাংশ ক্ষেত্রে কয়েক লক্ষ টাকার মধ্যে থাকে। খুব কম ক্ষেত্রেই তা ১ কোটি ছাড়ায়। জাতীয় কোম্পানি আইন ট্রাইবুনালে (এনসিএলটি) যাওয়ার সুযোগ না-থাকলে, নতুন ব্যবস্থায় বড় সংস্থাগুলি তাদের বকেয়া না-মেটালেও ছোট সংস্থাগুলির কিছু করার থাকবে না। আমার মনে হয়, এতে বড় সংস্থাই আদতে বেশি সুবিধা পাবে।’’

শর্মা অ্যান্ড শর্মা অ্যাসোসিয়েটসের পার্টনার এবং দেউলিয়া আইন বিশেষজ্ঞ উজ্জ্বয়িনী চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “করোনা পরিস্থিতিতে দেউলিয়া আইনে মামলার জন্য বকেয়া ঋণের ক্ষেত্রে যে সমস্ত ছাড় দেওয়া হয়েছে, তাতে সব ধরনের ছোট-বড় সংস্থাই উপকৃত হবে। কিন্তু দেখতে হবে, করোনাকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে যাতে কেউ নতুন আইনি ব্যবস্থার অপব্যবহার করতে না-পারে। আশা করব সরকার সে বিষয়টি মাথায় রাখবে।’’ সেই সঙ্গে তিনি জানান, ‘‘সরকার সংস্থাগুলির সমাজকল্যাণমূলক কাজের রিপোর্ট জমা থেকে ছাড় দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু তার সুযোগ নিয়ে যেন সংস্থাগুলি যে সমাজকল্যাণের কাজই পুরো বন্ধ না-করে দেয়। এই রিপোর্টিংয়ের কাজও দীর্ঘ দিন বন্ধ রাখা ঠিক নয়।’’

আরও পড়ুন: ডিজিটালে জোর শিল্প মহলের

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement