জিএসটি যোগ করলে সোনার দাম ৬০ হাজারের থেকে মাত্র ৪৬৬ টাকা কম। প্রতীকী ছবি।
বিয়ের ভরা মরসুম। তার মধ্যেই ফের নজিরবিহীন উচ্চতায় পৌঁছে গেল সোনার দাম। বহু ক্রেতা-বিক্রেতাকে কার্যত অথৈ জলে ফেলে শুক্রবার কলকাতার বাজারে ১০ গ্রাম পাকা সোনা (২৪ ক্যারাট) এই প্রথম ছুঁয়েছে ৫৭,৮০০ টাকা। জিএসটি যোগ করলে দাম ৬০ হাজারের থেকে মাত্র ৪৬৬ টাকা কম। গয়না ব্যবসায়ীদের দাবি, এর ফলে কোভিড কাটিয়ে সোনার বাজারে ফেরা সাধারণ ক্রেতার নাগাল ছাড়িয়ে চড়ছে গয়নাও। কাঁপুনি ক্রমশ বাড়ছে। খদ্দেরের অভাবে পাড়ার বহু ছোট দোকানে তালা ঝুলেছে। ক্রেতা-বিক্রেতা সকলের একটাই প্রশ্ন, শেষ পর্যন্ত কোথায় পৌঁছবে দাম?
স্বর্ণশিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যকরী সভাপতি সমর দে বলেন, ‘‘বিয়ের মরসুম বলে কিছু ক্রেতা আসছেন। তাঁদের মধ্যে একাংশের বাড়ির বিয়ের জন্য কেনাকাটা না করে উপায় নেই। তবে বেশিরভাগই সোনা কেনার পরিমাণ কমিয়েছেন বা বাড়ির গয়না ভাঙিয়ে কিছুটা টাকা বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। কেউ কেউ আবার তড়িঘড়ি গয়না কিনে রাখছেন দাম আরও বাড়ার আশঙ্কায়।’’ তবে গয়না ব্যবসায়ী বিনয় সিংহ এবং টগর পোদ্দারের দাবি, একান্ত বাধ্য না হলে কেউ বাজারমুখো হচ্ছেন না। তাঁরা বলছেন, রোজকার প্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি জিনিসের বেড়ে যাওয়া দামের জেরে বেশিরভাগ গৃহস্থ পরিবারই বাড়তি খরচ কমাতে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ তার সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো করে আয় বাড়ছে না। ফলে এত দামি সোনা বিকোবে কী করে? বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতিতে বিয়ে-অন্নপ্রাশনের উপহার হিসেবে সোনা দেওয়ার যে ঐতিহ্য রয়েছে, তা রক্ষা করাও কঠিন হয়ে পড়ছে।
বিনয়ের দাবি, সিংহভাগ ক্রেতা এখন হালকা গয়নার দিকে ঝুঁকছেন। তাই সোনার দোকানগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে কে কতটা কম সোনায় ভাল নকশার গয়না তৈরি করতে পারেন। ইতিমধ্যেই এই রকম হালকা গয়না তৈরির জন্য কারিগরদের সঙ্গে আলোচনা করতে শুরু করেছেন তাঁরা, বলছেন সমরবাবু।
বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্ব বাজারে মন্দার আশঙ্কা যত বাড়ছে, তত সেখানে দামি হচ্ছে সোনা। কারণ সুরক্ষিত লগ্নি হিসাবে ধাতুটির চাহিদা বাড়ছে। এ দিনই তা আউন্স পিছু ১৯৩২ ডলার হয়েছে। ফলে ভারতেও পাল্লা দিয়ে উঠছে দাম। তলানিতে নামছে গয়নার চাহিদা। নতুন বছরে পা রেখে বহু বিশেষজ্ঞ সোনার দাম ৬০,০০০ ছুঁতে পারে বলে সতর্ক করেছিলেন। তা বছরের প্রথম মাসেই সত্যি হতে বসায় উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্ট মহল।