প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
বিশ্ব মঞ্চে ভারতের উন্নয়নের ‘গল্প’ শোনাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। লগ্নির ডাকে মিশছে তাঁর জমানার সাফল্য। তাতে নয়া সংযোজন এপ্রিল-জুনে ৭.৮% আর্থিক বৃদ্ধি। কিন্তু জি২০ সম্মেলনের মুখে সেই বৃদ্ধি নিয়েই প্রশ্নের মুখে পড়ল মোদী সরকারের হিসাবের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং দাবির সারবত্তা। প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক আর্থিক নীতির অধ্যাপক অশোক মোদীর দাবি, ভারতীয় তথ্যের উপর যদি আমেরিকার সরকারি আর্থিক বিশ্লেষণের পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়, তা হলে বৃদ্ধির হার ৭.৮% থেকে ৪.৫ শতাংশে নামবে। কারণ, সেই হিসাব আয় এবং খরচ দুয়ের ভিত্তিতেই কষা হয়। বিরোধীদের অভিযোগ, ভাবমূর্তি রক্ষার খাতিরে তথ্য চাপা দিতে কেন্দ্র মিথ্যে বৃদ্ধির হিসাব দিয়েছে। হিসাব বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে বলে ক’দিন আগেই একদফা আক্রমণ শানিয়েছে কংগ্রেস।
এক্স হ্যান্ডেলে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির তোপ, ভাবমূর্তি বাঁচাতে সত্য চাপা দিচ্ছে মোদী সরকার। তাঁর কথায়, ‘‘আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় তথ্য-পরিসংখ্যান সংগ্রহের ক্ষেত্রে ভারতের যে সুখ্যাতি ছিল দুঃখজনক ভাবে তা ধ্বংস করে দিয়েছে কেন্দ্রের তথ্য লুকিয়ে রাখা এবং বদলে দেওয়ার কৌশল। জিডিপির ঝকঝকে সংখ্যার পিছনে দেশ খাবি খাচ্ছে বাড়তে থাকা বৈষম্য এবং বেকারত্বে।’’ বিজেপির বিক্ষুব্ধ নেতা সুব্রমনিয়ান স্বামীর মন্তব্য, ‘‘আমি সপ্তাহ তিনেক আগেই লিখেছিলাম মোদী সরকারের পরিসংখ্যান আসলে নিরক্ষরদের, কারণ তাতে বর্তমান বাজারদরের (ভিত্তিতে হিসাব করা জিডিপি) এবং ভিত্তিবর্ষের (নিরিখে হিসাব করা) মধ্যে পার্থক্য রাখা হয় না।’’
জিডিপি বৃদ্ধির পরিসংখ্যানের অসঙ্গতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞদের অনেকেই। অতীতে বিশ্ব ব্যাঙ্ক এবং আইএমএফে কাজের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন অশোক বলেন, বৃদ্ধির ৭.৮% হার বিভ্রান্তিকর। আয় এবং খরচ, দু’দিক থেকেই বিচার করার পদ্ধতি প্রয়োগ করলে অনেক কমে যাবে। তাঁর দাবি, ভারতকে বিশ্বের দ্রুততম হারে বৃদ্ধির অর্থনীতি বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু এই বিজ্ঞাপনী প্রচারের আড়ালে রয়েছে সাধারণ মানুষের বিপুল যন্ত্রণা। প্রকৃতপক্ষে দেশে আর্থিক বৃদ্ধির হার শ্লথ, বৈষম্য বাড়ছে এবং বাজারে কাজের অভাব এখনও তীব্র।