প্রতীকী ছবি।
সুদের হার যে বাড়বে জানাই ছিল। মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানতে পাঁচ সপ্তাহে মোট ৯০ বেসিস পয়েন্ট রেপো রেট বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিল রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ঋণনীতি কমিটি। এই সুদে ব্যাঙ্কগুলিকে ধার দেয় তারা। মে মাসের শুরুতে তা বাড়ানো হয়েছিল ৪০ বেসিস পয়েন্ট, এ বার ৫০। ফলে বাড়ি, গাড়ি-সহ বিভিন্ন ঋণে সুদ বাড়তে শুরু করেছে। আশা ছিল, সুদ বাড়বে ব্যাঙ্ক জমাতেও। কিন্তু তা এখনও হয়নি। আসলে ঋণের চাহিদাই কম। সুদবাড়ায় তা আরও কমবে। সেটা হলে কমলে ব্যাঙ্কগুলির আমানতের দরকার হবে কম। আমানত টানার লক্ষ্যে বেশি সুদ দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না।
তা ছাড়া, কোভিডকালে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থায় যে টাকা জোগানো হয়েছিল, তার অনেকটা এখনও অবশিষ্ট আছে। অর্থাৎ সুদ বাড়িয়ে বাজার থেকে নতুন করে নগদ সংগ্রহের তেমন তাগিদ হয়তো এই মুহূর্তে নেই ব্যাঙ্কগুলির। ফলে মধ্যবিত্ত মার খাবেন ধার ও জমা, দু’দিক থেকেই। তবে ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক সংস্থাগুলি (এনবিএফসি) তাদের জমা প্রকল্পে সুদ বাড়াচ্ছে। এখানে ব্যাঙ্কের তুলনায় ১% থেকে ১.২৫% বেশি সুদ পাওয়া যেতে পারে।
রেপো বাড়ায় বন্ড ইল্ড ছুঁয়েছে ৭.৫২%। যা বর্তমানে ব্যাঙ্কের সুদের তুলনায় অনেকটাই আকর্ষণীয়। আরবিআই মূল্যবৃদ্ধির পূর্বাভাস বাড়ানোয় (পরিসংখ্যান সারণিতে) আঁচ করা হচ্ছে, অগস্টের ঋণনীতিতে আরও এক দফা সুদের হার বাড়াবে তারা। তখন বন্ডের ইল্ড পৌঁছবে আরও উঁচুতে। আশা করা যায়, জুলাই থেকে এনএসসি, পিপিএফ-এর মতো স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পে কিছুটা হলেও সুদ বাড়ানো হবে। এনএসসি-তে সুদ বাড়লে, তা বাড়বে ভারত সরকারের ফ্লোটিং বন্ড অর্থাৎ আরবিআই বন্ডেও।
অর্থনীতির দিক থেকে মাঝেমধ্যে একটি-দু’টি ভাল খবর এলেও, শেয়ার বাজারে তার প্রভাব স্থায়ী হচ্ছে না খারাপ খবর তুলনায় বেশি হওয়ায়। যেমন, গত সপ্তাহের শেষে জানা গেল চলতি অর্থবর্ষের প্রথম মাসে, অর্থাৎ গত এপ্রিলে শিল্পোৎপাদন বেড়েছে ৭.১%। যে সব ক্ষেত্রে উৎপাদন বৃদ্ধি বাজারকে ঠেলে তুলতে পারে তার মধ্যে ছিল মূলধনী পণ্য (১৪.৭%), মেয়াদি ভোগ্যপণ্য (৮.৫%), খনন (৭.৮%), কল-কারখানায় উৎপাদন (৬.৩%), বিদ্যুৎ (১১.৮%)। কিন্তু এই আনন্দে জল ঢেলে দেয় মে মাসে আমেরিকায় মূল্যবৃদ্ধির তথ্য। সে দেশে সুদের হার বৃদ্ধির পরেও মূল্যবৃদ্ধির হার আরও মাথা তুলে হয়েছে ৮.৬%, যা ৪০ বছরে সব থেকে বেশি। ফলে ধরেই নেওয়া যায় সে দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারাল রিজ়ার্ভ যথেষ্ট আগ্রাসী ভাবেই আরও সুদ বাড়াবে। একে ভাল চোখে দেখছে না ভারতীয় শেয়ার বাজার। লাগাতার বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি এখানে শেয়ার বিক্রি করে পুঁজি তুলে নিচ্ছে। অন্যান্য খারাপ খবরের মধ্যে আছে বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দামের ফের ব্যারেল পিছু ১২২ ডলার হয়ে যাওয়া, দেশে ঊর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণ।
সব মিলিয়ে তীব্র টানাপড়েনে শেয়ার বাজার অস্থির। যদিও সেখানে ফান্ডের লগ্নি বেড়েই চলেছে (পরিসংখ্যান সঙ্গের সারণিতে)। ফলে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি যখন নাগাড়ে ভারতে শেয়ার বিক্রি করছে, তখন দেশীয় ফান্ডের তহবিল শেয়ার বাজারে ঢুকে তাকে শক্তি জোগাচ্ছে। না হলে সূচক আরও নীচে নামত।
(মতামত ব্যক্তিগত)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ।