Reserve Bank of India (RBI)

চ্যালেঞ্জ চড়া মূল্যবৃদ্ধি, লগ্নিতেও সতর্ক নজর

লোকসভা নির্বাচনের আর এক বছরও বাকি নেই। তার আগে রয়েছে পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। ফলে মোদী সরকারের কপালেও চিন্তার ভাঁজ।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০২৩ ০৮:৫৪
Share:

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। —ফাইল চিত্র।

জুলাইয়ে দেশের খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার যে চড়বে তা আঁচ করা গিয়েছিল আগে থেকে। কিন্তু তা যে ৭.৪৪ শতাংশে পৌঁছে যাবে তা অনেকেই ভাবতে পারেননি। মূল্যবৃদ্ধির এই হার ১৫ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ফলে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক ফের সুদ বাড়াতে পারে, এই আশঙ্কায় এখন দিন গুনছে শিল্প ক্ষেত্র এবং শেয়ার বাজার। উদ্বেগের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে আরও কয়েকটি কারণে।

Advertisement

লোকসভা নির্বাচনের আর এক বছরও বাকি নেই। তার আগে রয়েছে পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। ফলে মোদী সরকারের কপালেও চিন্তার ভাঁজ। জিনিসপত্রের দামকে নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য তাই তড়িঘড়ি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের চেষ্টা করছে তারা। চেষ্টা চলছে রাশিয়া থেকে কম দামে গম আমদানির। দেশের বাজারে সরবরাহ নিশ্চিত করে দাম কমানোর উদ্দেশ্যে রফতানি শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে কোনও কোনও পণ্যের। কিন্তু দেশব্যাপী প্রতিকূল আবহাওয়া চলায় মূল্যবৃদ্ধির হার যে খুব দ্রুত রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক নির্ধারিত সহনসীমার (২%-৬%) মধ্যে ঢুকে পড়বে, তেমনটাও আশা করছেন না কেউ। ফলে অর্থনীতি নিয়ে সরকার যতই ঢাক পেটাক, পরিস্থিতি মোটেই অনুকূল নয়। যেমন—

  • জুলাইয়ে রফতানি কমেছে ১৫.৮৮%।
  • নতুন করে সুদ বৃদ্ধির সম্ভাবনা জোরাল হওয়ায় ১০ বছর মেয়াদি সরকারি ঋণপত্রের ইল্ড বেড়ে পৌঁছে গিয়েছে ৭.২১ শতাংশে। এতে ঋণের উপরে সুদ বাবদ খরচ বাড়বে।
  • টাকার নিরিখে ডলারের দাম পৌঁছেছে রেকর্ড উচ্চতায়। শুক্রবার আমেরিকার মুদ্রাটি হাতবদল হয়েছে ৮৩.১০ টাকায়। এর ফলে আমদানির খরচ বাড়বে।
  • এরই মধ্যে অশোধিত তেলের দামও বাড়তে শুরু করেছে ফের। ব্যারেল প্রতি তা ঘোরাফেরা করছে ৮৪ ডলারের আশপাশে। অনেক দিন ধরে তেলের দাম কম থাকা সত্ত্বেও সরকার দেশে পেট্রল এবং ডিজ়েলের দাম কমায়নি। এখন তো কার্যত আর কমানোর প্রশ্নই নেই। মূল্যবৃদ্ধির হার কিছুটা নির্ভর করে এই দুই জ্বালানির দামের উপরে।
Advertisement

দেশের স্বল্পমেয়াদি আর্থিক পরিস্থিতি যে তেমন স্বস্তিদায়ক জায়গায় নেই, তা ধরা পড়েছে শেয়ার সূচকের ব্যবহারেও। গত কয়েক দিনের অস্থির বাজারে সেনসেক্স ২০ জুলাইয়ের রেকর্ড উচ্চতা (৬৭,৫৭২) থেকে ২৬২৩ পয়েন্ট হারিয়ে নেমে এসেছে ৬৪,৯৪৯ অঙ্কে। গত সপ্তাহের শেষ দু’দিনে তা নেমেছে ৫৯০ পয়েন্ট, নিফ্‌টি ১৫৫। বাজার যদিও এখনও ভাল উচ্চতায়। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে অনেকেই শেয়ার এবং ফান্ড বিক্রি করে পড়ে থাকা মুনাফা ঘরে তুলতে চাইছেন। এখন প্রশ্ন হল, সেই টাকা কোথায় খাটাবেন? কেউ কেউ শেয়ার এবং ফান্ড বিক্রির টাকা ব্যাঙ্কে রেখে তা ফের এসআইপির মাধ্যমে বাজারে লগ্নি করছেন। মেয়াদি জমায় সুদ বাড়লেও কর দেওয়ার পরে তার আকর্ষণ অনেকটাই কমে যায়। সে কারণে কেউ কেউ লাভের টাকা স্থাবর সম্পত্তিতে লগ্নি করছেন। সম্পত্তির চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের বড় শহরগুলিতে সম্প্রতি ফ্ল্যাটের দাম বেশ খানিকটা বেড়েছে। এর মধ্যে কলকাতাও আছে।

লগ্নি সংক্রান্ত অন্যান্য খবরের মধ্যে রয়েছে—

  • বাজারে বিদেশি সংস্থার লগ্নি কমেছে। গত সপ্তাহের শেষ দু’দিনে তারা নিট ৯৮৭ কোটি এবং ২৬৭ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছে।
  • রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ় থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া জিয়ো ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেস আজ শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত হবে। কী দামে তা নথিভুক্ত হয় তা জানার জন্যও মুখিয়ে আছেন লগ্নিকারীরা।
  • ব্যাঙ্কে পড়ে থাকা বিশাল পরিমাণ দাবিহীন জমার তথ্য নিয়ে এক বিশেষ পোর্টাল খুলেছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক। এখন যে সাতটি ব্যাঙ্কের তথ্য এখানে পাওয়া যাচ্ছে, তার মধ্যে রয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক, পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক এবং সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক। এই পোর্টালে দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দাবিহীন জমা আদায় করা সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

(মতামত ব্যক্তিগত)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement