—প্রতীকী চিত্র।
কম খরচে আরও উন্নত রাস্তা তৈরির পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়েছিল এ রাজ্যেই। সেই প্রযুক্তির কারিগরি বিষয়বস্তু ইন্ডিয়ান রোড কংগ্রেসের (আইআরসি) অধিবেশনে সম্মতি পেল। শুধু তা-ই নয়, আরও আধুনিক পদ্ধতিতে সেতু-উড়ালপুলের নির্মাণ এবং পথ দুর্ঘটনা রোধেও নতুন বিধি গ্রহণ করেছে আইআরসি। বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, নির্দিষ্ট সময় অন্তর আইআরসি-র অধিবেশন হয়। সেতু-সড়ক পরিকাঠামো তৈরির প্রশ্নে গোটা দেশে যে গবেষণা হচ্ছে, সেগুলি উপস্থাপিত করেন বিশেষজ্ঞেরা। তার থেকেই কিছু পদ্ধতি চূড়ান্ত করে আইআরসি। যা সব রাজ্য মেনে চলে। গত মাসে শিলিগুড়িতে আইআরসি-র সম্মেলনে সংশ্লিষ্ট বিধিগুলি মান্যতা পেয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়ক-সেতু নির্মাণ বা তার রক্ষণাবেক্ষণ খরচসাপেক্ষ। গোটা দেশের জন্য এই খাতে প্রতি বছর কয়েক লক্ষ কোটি টাকা খরচ করে কেন্দ্র। সে কারণেই বিশ্বের প্রেক্ষিতে গুণমান বাড়িয়ে সেই খরচ কমানোর লক্ষ্য নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে ওই সমস্ত পরিকাঠামোর গুণমান বাড়লে পথ দুর্ঘটনার হারও কমানো সম্ভব। ইতিমধ্যে যা নিয়ে নড়েচড়ে বসতে হয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালতকেও।
পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, ২০১২ সালে পানাগড় এবং মানকরের কয়েকটি এলাকায় রাস্তা তৈরিতে প্রয়োগ হয়েছিল ‘শর্ট স্ল্যাব কংক্রিট পেভমেন্ট’ প্রযুক্তি। তাতে কংক্রিটের তৈরি ছোট ছোট অংশ জুড়ে রাস্তা তৈরি হয়েছিল। দেখা গিয়েছে, চিরাচরিত পদ্ধতিতে কংক্রিটের যে রাস্তা তৈরি হয়, তার থেকে অনেক কম খরচে এবং কম সামগ্রী দিয়ে রাস্তা বানানো সম্ভব। পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, সেই রাস্তা তুলনায় বেশি টেকসই। সেই প্রযুক্তিকে হাইওয়ে বা এক্সপ্রেসওয়ে তৈরিতে কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইআরসি। সংশ্লিষ্ট মহল জানাচ্ছে, এ বার থেকে সার্বিক ভাবে এই প্রযুক্তি ব্যবহারে বাধা থাকবে না। প্রসঙ্গত, সড়কের হাল নিয়ে নিয়মিত সরব হন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নির্মাণকারী সংস্থাকে রাস্তার রক্ষণাবেক্ষণে বাধ্য করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই প্রযুক্তির ব্যবহার হলে সেই ঝক্কি আর সামলাতে হবে না। ঠেকানো যাবে দুর্ঘটনাও।
একই সঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়েও পৃথক প্রস্তাব পাশ করেছে আইআরসি। তাতে সিগন্যাল ভঙ্গকারীকে ধরার বিশেষ পদ্ধতি চালু করা হচ্ছে। পূর্ত এবং পুলিশের মধ্যে সমন্বয়ে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাগুলিতে নিয়মিত সংস্কারের কাজ হয়ে থাকে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ইতিমধ্যে তৈরি হয়েছে ‘রোড কাউন্সিল কমিটি’। ফলে বড় সড়কে দুর্ঘটনা রোখার প্রশ্নে এই বিধিও কার্যকর হবে বলে আশা।
পাশাপাশি, সেতু বা উড়ালপুলের মূল কাঠামো (ফাউন্ডেশন) তৈরির ক্ষেত্রেও প্রযুক্তির বদল ঘটানোর প্রস্তাব পাশ করেছে আইআরসি। সেতু-বিশেষজ্ঞদের মতে, সেই প্রযুক্তিতে সেতুর স্থায়িত্ব এবং নিরাপত্তা বাড়ানো সম্ভব। অতীতে এ রাজ্যে একাধিক সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটেছিল। দেশের অন্যান্য প্রান্তেও এমন ঘটনা ঘটছে হামেশাই। সে দিক থেকে নির্মাণ-নীতির বদল গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।