আভাস ছিল, বাজেটের আগে একটি ‘বুল র্যালি’ হতে পারে। এই ষাঁড়ের দৌড় ইতিমধ্যে বেশ ভাল রকমই হয়েছে। বাজেটের দূরত্ব আর মাত্র তিন দিন। স্বাভাবিক কারণেই এই ক’দিন অস্থির থাকতে দেখব দুই সূচককে। যাঁরা মনে করছেন বাজারের দম এখনও ফুরোয়নি, এই উচ্চতাতেও সম্ভবত সওদা করবেন তাঁরা। অন্য দিকে আর এক শ্রেণির মানুষ মনে করছেন, যথেষ্ট হয়েছে, এই বেলা লাভ ঘরে তোলা যাক। এঁদের আশঙ্কা, বাজেট থেকে যা যা আশা করা হয়েছে তা যদি না মেলে, তবে ৩৬/১১ হাজারের উচ্চতা থেকে হুড়মুড়িয়ে নামতে পারে সেনসেক্স/নিফটি।
গত বৃহস্পতিবার বাজার কিছুটা পড়েছে এই কারণেই। বাজেট নিয়ে বহু আশা ও আশঙ্কার কথা আমরা শুনছি গত কয়েক দিন ধরে। এর কতটা মিলবে, তা কেউই জানি না। জিএসটি চালুর কারণে আমদানি শুল্ক ছাড়া পরোক্ষ করের বিষয়টি প্রায় বিদায় নিয়েছে বাজেটের এক্তিয়ার থেকে। অর্থাৎ জেটলির হাতে আছে শুধু প্রত্যক্ষ কর। আশা-আশঙ্কার কথা দেওয়া হল সঙ্গের সারণিতে।
আগামী অর্থবর্ষটি নির্বাচনের বছর হওয়ায় অনেকেই মনে করছেন, বাজেটে দরাজ হতে পারেন অরুণ জেটলি। এটাও মনে রাখতে হবে, কেন্দ্রের আয় ভাল রকম কমেছে বিভিন্ন সূত্র থেকে। বিশেষ করে জিএসটি খাতে। অর্থাৎ বাজেটের মাধ্যমে আয় ও ছাড়ের ভারসাম্য রাখতে হবে কেন্দ্রকে। অবশ্যই চাপ থাকবে কৃষি, পরিকাঠামো এবং কর্মসংস্থানে মোটা টাকা বরাদ্দের। তবে ইঙ্গিত যা-ই থাকুক না কেন, যেমন বাজেট হবে, সেই অনুযায়ী বাজার নিজেকে গুছিয়ে নেবে।
• ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে করশূন্য আয়ের সীমা বাড়া। তা ২.৫ লক্ষ থেকে
বেড়ে ৩ লক্ষ টাকা হলে ফায়দা মাত্র ২,৫০০ টাকা
• বড় মাপের সংস্থার ক্ষেত্রে কোম্পানি কর কমতে পারে।
ব্যাপারটি কিন্তু বাজার আগে থেকেই ধরে নিয়েছে
• উত্তরাধিকার কর বসতে পারে, বাজারের পক্ষে যা নেতিবাচক
• শেয়ারে মূলধনী লাভকরের নিয়ম বদলাতে পারে। নতুন নিয়ম
লগ্নিকারীদের আঘাত করলে ধাক্কা আসবে বাজারেও
• ডিভিডেন্ডে কর ছাড়ের নিয়মেও বদলের আভাস
শুধু বাজেট নয়, বড় মেয়াদের লগ্নিকারীদের তাকাতে হবে অর্থনীতির গতিপ্রকৃতির দিকে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বর্তমান পরিস্থিতিকে একটু মেপে নেওয়া যাক:
• পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি নিম্নমুখী হলেও এখনও উঁচুতে খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার। ফলে ফেব্রুয়ারিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমাবে, এমন আশা করা হচ্ছে না।
• তৃতীয় ত্রৈমাসিকে সংস্থার ফল এ পর্যন্ত মোটের উপর ভালই।
• রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে মূলধন জোগানোর প্রথম কিস্তির কথা ঘোষিত হয়েছে গত সপ্তাহে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে ব্যাঙ্কের রেটিং-এ।
• ডিসেম্বরে জিএসটি আদায় বেড়েছে। আরও কিছু পণ্য, পরিষেবায় কর কমানোর কথা ভাবা হচ্ছে।
• বিদেশি আর্থিক সংস্থার লগ্নি বজায় আছে। ডলারে টাকা শক্তিশালী হচ্ছে।
• বড় তথ্যপ্রযুক্তি, ইস্পাত, সিমেন্ট, গাড়ি সংস্থাগুলি শক্তি ফিরে পাচ্ছে।
সব মিলিয়ে বড় মেয়াদে অর্থনীতি ভালই করবে বলে মনে করা হচ্ছে। বাজেট এই গতিকে কতটা মদত দেয়, তা-ই এখন দেখার। ফলাফল ও বাজেট নিয়ে সপ্তাহভর কিছুটা চঞ্চল থাকবে দুই শেয়ার সূচক।