—প্রতীকী ছবি।
খুচরো মূল্যবৃদ্ধি ফের চড়ার তথ্য সামনে এসেছে কিছু দিন আগে। বৃহস্পতিবার শ্রম মন্ত্রকের পরিসংখ্যানে স্পষ্ট, নভেম্বরে কৃষি ক্ষেত্র এবং গ্রামাঞ্চলের কর্মীদের ব্যবহৃত পণ্য ও পরিষেবার মূল্যবৃদ্ধিও মাথা তুলেছে। দু’ক্ষেত্রেই তা ৭ শতাংশের বেশি। সব থেকে বড় দুশ্চিন্তার কথা, গাঁ-গঞ্জের এই সব মানুষের জীবনযাপনের খরচ বৃদ্ধির প্রধান কারণও সেই খাদ্যপণ্যের বেড়ে যাওয়া দর। যা ৯% পেরিয়েছে।
মন্ত্রকের বিবৃতি অনুসারে, দেশ জুড়ে খুচরো বাজারে কৃষি এবং গ্রামীণ শ্রমিকদের ক্ষেত্রে চাল, গমের আটা, ডাল, পেঁয়াজ, গোটা হলুদ, রসুন, নানা রকম মশলাপাতি ইত্যাদির দাম চড়েছে। বেড়েছে পান-সুপারি, জুতো, জামা-কাপড়ের দামও। তবে রাজ্যের হিসেব আলাদা ভাবে দেখলে এই দুই মূল্যবৃদ্ধির হার কমেছে শুধু পশ্চিমবঙ্গ ও হিমাচলপ্রদেশে। কৃষি শ্রমিক এবং গ্রামীণ শ্রমিক, খুচরো বাজারের দুই মূল্যসূচকই সব থেকে বেশি কমেছে (১৪ পয়েন্ট) এ রাজ্যে। সরকারি তথ্য বলছে, এর কারণ বাংলার গ্রামীণ বাজারে আদা, কাঁচালঙ্কা, আনাজ (বিশেষত বেগুন এবং ঢেঁড়শ), ফল, জ্বালানি কাঠ ইত্যাদির দাম কমে আসা। তবে দেশের বাকি সমস্ত জায়গায় মূল্যসূচক দু’টি ঊর্ধ্বমুখী।
নভেম্বরে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি ছিল তিন মাসের মধ্যে সব থেকে বেশি, ৫.৫৫%। আনাজ, চাল-গম সমেত বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে ৮.৭% হারে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, এরই ছায়া গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দাদের প্রতি দিনের খরচ-খরচায় প্রকট। সরকারি পরিসংখ্যানে জানানো হয়েছে, কৃষি শ্রমিকদের ব্যবহৃত পণ্য ও পরিষেবার মূল্যবৃদ্ধির হার নভেম্বরে দাঁড়িয়েছে ৭.৩৭%। অক্টোবরে ছিল ৭.০৮%। আর আগের বছরের নভেম্বরে ৬.৮৭%। অন্য দিকে, গ্রামাঞ্চলের শ্রমিকদের ক্ষেত্রে তা ৬.৯২% থেকে বেড়ে হয়েছে ৭.১৩%। আগের বছর ছিল ৬.৯৯%। কৃষি এবং গ্রামীণ শ্রমিকদের ক্ষেত্রে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে যথাক্রমে ৯.৩৮% এবং ৯.১৪% হারে। অক্টোবরে এই হার ছিল যথাক্রমে ৮.৪২% এবং ৮.১৮%, গত বছর নভেম্বরে ৬.১৯% ও ৬.০৫%।
সংশ্লিষ্ট মহলের বক্তব্য, কোভিড গ্রামীণ অর্থনীতির কোমর ভেঙে দিয়েছিল। সেই অভিঘাত ছিল এতটাই তীব্র যে, শহরাঞ্চল কিছুটা ঘুরে দাঁড়াতে পারলেও গ্রামে চাহিদা এখনও শ্লথ। সম্প্রতি সমীক্ষা দেখিয়েছে, সবেমাত্র চা, চিনি, বিস্কুট, সাবান, শ্যাম্পুর মতো স্বল্পমেয়াদি ভোগ্যপণ্যের বিক্রিবাটা একটু বাড়তে শুরু করেছে। কিন্তু অনিয়মত বৃষ্টি তাতেও জল ঢালে। কৃষি উৎপাদন ইতিমধ্যেই ধাক্কা খেয়েছে। নভেম্বরে বাজারে তাই খাদ্যপণ্যের জোগান কমেছে। বেড়ে গিয়েছে দাম। বিশেষজ্ঞদের মতে, গ্রামাঞ্চলের বহু সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন খরচ বেড়ে যাওয়ায় তাঁদের যে নাভিশ্বাস ওঠার মতো অবস্থা হয়েছে, তা কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট। সব থেকে বড় সমস্যা খাবারের খরচ বৃদ্ধি।