নির্মলা সীতারামন। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই।
ব্যাঙ্ক আছে দশটি। হয়ে যাচ্ছে চারটি।
ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণের এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে নরেন্দ্র মোদী সরকার আজ জানিয়েছে, এর ফলে দেশে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সংখ্যা ১৮ থেকে কমে ১২-য়ে নেমে আসবে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের দাবি, অর্থনীতির ঝিমিয়ে পড়া দশা কাটাতে এবং ২০২৪-এ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতির লক্ষ্য পূরণ করতে সরকার যে-সব পদক্ষেপ করছে, আজকের ‘সংস্কার’ তারই অঙ্গ। এর ফলে অনাদায়ী ঋণের (এনপিএ) বোঝায় দুর্বল হয়ে পড়া ব্যাঙ্কগুলিতে সরকার যে-পুঁজি ঢালছে, তা আরও ভাল ভাবে কাজে লাগানো যাবে।
অর্থমন্ত্রীর আশ্বাস, অন্য ব্যাঙ্কের সঙ্গে মিশে যাওয়া ব্যাঙ্কে যাঁদের অ্যাকাউন্ট রয়েছে, তাঁদের চিন্তার কোনও কারণ নেই। কোনও কর্মীকে ছাঁটাইও করা হবে না। তবে ব্যাঙ্ক ইউনিয়নগুলির সংযুক্ত ফোরাম জানিয়েছে, শনিবার দেশ জুড়ে কালো ব্যাজ পরে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হবে।
আজ বিকেলে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে আর্থিক বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশে নেমে আসার কথা ঘোষণার ঠিক আগেই ব্যাঙ্কের সংযুক্তিকরণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করায় প্রশ্ন উঠেছে, অর্থনীতির করুণ দশা থেকে নজর ঘোরাতেই কি এই সিদ্ধান্ত?
সরকারের অবশ্য যুক্তি, বিজেপি ক্ষমতায় এসেই বড় ব্যাঙ্কের সঙ্গে অপেক্ষাকৃত ছোট, অনাদায়ী ঋণের ভারে দুর্বল ব্যাঙ্কগুলি মিশিয়ে দেওয়ার কর্মসূচি নিয়েছে। ২০১৭-য় দেশে ২৭টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ছিল। এর পরে স্টেট ব্যাঙ্কের সঙ্গে পাঁচটি সহযোগী ব্যাঙ্ক ও ভারতীয় মহিলা ব্যাঙ্ক মিশিয়ে দেওয়া হয়। গত বছর ব্যাঙ্ক অব বরোদার সঙ্গে মিশে যায় বিজয়া ও দেনা ব্যাঙ্ক। আইডিবিআই ব্যাঙ্কের অধিকাংশ শেয়ার কিনে নেয় এলআইসি।
মিশছে কারা?
• পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক + ওরিয়েন্টাল ব্যাঙ্ক অব কমার্স + ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক
মোট ব্যবসা: ১৭,৯৪,৫২৬ কোটি টাকা
• ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক + এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক
মোট ব্যবসা: ৮,০৭,৮৫৯ কোটি টাকা
• ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক + অন্ধ্র ব্যাঙ্ক + কর্পোরেশন ব্যাঙ্ক
মোট ব্যবসা: ১৪,৫৯,৪৩৪ কোটি টাকা
• কানাড়া ব্যাঙ্ক + সিন্ডিকেট ব্যাঙ্ক
মোট ব্যবসা: ১৫,২০,২৯৫ কোটি টাকা
সংযুক্ত আগেই
• স্টেট ব্যাঙ্ক + স্টেট ব্যাঙ্ক অব পাটিয়ালা + স্টেট ব্যাঙ্ক অব বিকানের অ্যান্ড জয়পুর + স্টেট ব্যাঙ্ক অব মহীশূর + স্টেট ব্যাঙ্ক অব ত্রিবাঙ্কুর + স্টেট ব্যাঙ্ক অব হায়দরাবাদ + ভারতীয় মহিলা ব্যাঙ্ক
• ব্যাঙ্ক অব বরোদা + দেনা ব্যাঙ্ক + বিজয়া ব্যাঙ্ক
বাকি রইল যারা
• ইউকো ব্যাঙ্ক • সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া • ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া • ইন্ডিয়ান ওভারসিজ় ব্যাঙ্ক • পঞ্জাব অ্যান্ড সিন্দ ব্যাঙ্ক • ব্যাঙ্ক অব মহারাষ্ট্র
ঠিক ৫০ বছর আগে ইন্দিরা গাঁধী ব্যাঙ্ক জাতীয়করণ করেছিলেন। দেশের দ্বিতীয় মহিলা অর্থমন্ত্রী নির্মলার দাবি, আজকের সিদ্ধান্তের ফলে বড় মাপের ব্যাঙ্ক তৈরি হবে। অর্থনীতির বহর বাড়াতে, শিল্পের প্রয়োজনে ব্যাঙ্কগুলি আরও ঋণ দিতে পারবে। ব্যবসার খরচ কমবে। ব্যাঙ্কগুলি আরও ঝুঁকি নিতে পারবে। গ্রাহকদের নানা সুবিধা দিতে পারবে। কিন্তু ইন্দিরার উল্টো পথে হেঁটে ব্যাঙ্কে সরকারি মালিকানা ৫১ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য থেকে সরকার সরে আসছে কি না, তা স্পষ্ট করেননি নির্মলা।
রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির মাথায় এখন ৭.৯০ লক্ষ কোটি টাকা এনপিএ-র বোঝা রয়েছে। ফলে নতুন ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে তারা সাবধানি। অনেক ব্যাঙ্কে নতুন ঋণ বিলির উপরে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। বড় মাপের, অপেক্ষাকৃত কম অনুৎপাদক সম্পদ থাকা ব্যাঙ্কের সঙ্গে দুর্বল ব্যাঙ্কগুলিকে মিশিয়ে সেই সমস্যারও সমাধানের চেষ্টা করেছে কেন্দ্র। ব্যাঙ্ক মেশানোর পাশাপাশি তাদের জন্য নতুন পুঁজির কথাও ঘোষণা করেছে অর্থ মন্ত্রক। ঠিক হয়েছে, প্রশাসনিক স্তরেও সংস্কার করা হবে। ঋণে ঝুঁকি খতিয়ে দেখতে সব ব্যাঙ্কে এক জন বিশেষ অফিসার নিয়োগ করা হবে।
যে সব ব্যাঙ্ক আর থাকছে না, অন্য ব্যাঙ্কের সঙ্গে মিশছে, তাঁদের গ্রাহকদের কী হবে? অর্থ মন্ত্রকের দাবি, আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। অ্যাকাউন্ট নম্বর, কাস্টমার আইডি, আইএফএসসি কোড, পাসবই, চেক বই বদলাতে পারে। কবে তা হবে, সে জন্য ব্যাঙ্কের এসএমএসে নজর রাখলে চলবে। মন্ত্রকের দাবি, নতুন করে কেওয়াইসি করার দরকার পড়বে না। যাঁরা ঋণ নিয়েছেন, তাঁদের সুদ বা অন্য শর্তও বদলাবে না।
তবে কবে থেকে সংযুক্তিকরণ হয়ে নতুন চেহারায় চারটি ব্যাঙ্ক চালু হবে, তার দিনক্ষণ এখনও ঘোষণা হয়নি। অর্থসচিবের জবাব, ব্যাঙ্ক অব বরোদার ক্ষেত্রে নতুন ব্যাঙ্ক ১ এপ্রিল থেকে কাজ শুরু করেছিল। যাতে ব্যবসায় কোনও অসুবিধা না হয়।