টাটা-র মোবাইল নেটওয়ার্ক কিনে কনজিউমার বেস অনেক বাড়িয়ে নিচ্ছে এয়ারটেল। —প্রতীকী ছবি।
দেওয়াল লিখন স্পষ্ট হচ্ছিল অনেক দিনই। শেষমেশ নিজেদের মোবাইল পরিষেবা ব্যবসা ভারতী এয়ারটেলের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে টাটারা।
সম্প্রতি এ ধরনের সিদ্ধান্তের ইঙ্গিত মিলেছিল সংবাদমাধ্যমকে টাটা গোষ্ঠীর কর্ণধার এন চন্দ্রশেখরনের দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে। আর বৃহস্পতিবারই টাটারা জানাল, আগামী দিনে তাদের মোবাইল পরিষেবা মিশে যাবে সুনীল ভারতী মিত্তলের সংস্থা এয়ারটেলের সঙ্গে।
এই নিয়ে চুক্তি হয়েছে টাটা গোষ্ঠী ও ভারতী এয়ারটেলের। প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে টাটা টেলির হাতে থাকা স্পেকট্রাম ও ৪ কোটি মোবাইল গ্রাহক যাওয়ার কথা এয়ারটেলের ঝুলিতে। তবে এন্টারপ্রাইজ (বিভিন্ন সংস্থাকে দেওয়া টেলি পরিষেবা), ফিক্সডলাইন, ব্রডব্যান্ড, টাওয়ার ও অপটিক ফাইবারের পরিকাঠামোর মতো ব্যবসা থাকছে টাটাদের হাতেই। কর্মীদের অনেকে সেখানে থাকবেন। অনেকে আবার চুক্তি মেনে চলে যাবেন এয়ারটেলের আওতায়।
উন্নত দেশে টেলিকম পরিষেবায় হাতে গোনা কয়েকটি সংস্থা থাকলেও, ভারতে এক সময়ে তা ছিল ১২-১৩টি। কিন্তু স্পেকট্রাম কেনা, পরিকাঠামো তৈরিতে বিপুল খরচ করা সবার পক্ষে কতটা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন ছিলই। ওই খরচের জেরে বিপুল ধারের বোঝা চেপে বসতে শুরু করে সংস্থাগুলির উপরে। ফলে সংযুক্তি বা অধিগ্রহণের মাধ্যমে সংস্থা সংখ্যা কমা ছিল সময়ের অপেক্ষা। তাতে ইন্ধন জোগায় বাজারে রিলায়্যান্স জিও আসার পরে মাসুলের তীব্র লড়াই। কিছু সংস্থা ব্যবসায় ঝাঁপ ফেলেছে। কিছু হেঁটেছে গাঁটছড়ার পথে।
চুক্তি প্রসঙ্গে মিত্তল বলেন, ‘‘টেলি শিল্পে সংযুক্তিকরণে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ।’’ চন্দ্রশেখরন বলেন, ‘‘টাটা গোষ্ঠী ও তার অংশীদারদের জন্য সবচেয়ে ভাল চুক্তি।’’
যে-সংস্থা প্রথম থ্রি-জি পরিষেবা এনেছিল, চালু করেছিল সেকেন্ড-পিছু কথা বলার খরচ, ১৪ হাজার কোটিতে যাদের ২৬% অংশীদারি কিনেছিল জাপানি বহুজাতিক ডোকোমো, সেই টাটা টেলি ব্যবসার মাঠ ছাড়ল কেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, শুরুতে সিডিএমএ ব্যবসায় সফল না-হওয়া, ক্রমশ প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়া, স্পেকট্রাম বিতর্কের আঁচ, বিপুল ধারের বোঝার মতো কারণে মোবাইল পরিষেবা গুটিয়ে দেওয়ার কথা অনেক দিনই ভাবতে শুরু করে টাটারা। মাঝে গাঁটছড়া ভাঙে ডোকোমোর সঙ্গেও। এ দিনের ঘোষণা তাই একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল না।