হাতে বোনা তাঁতের শাড়িকে বাজি ধরেই নেট দুনিয়ায় অন্য সব রাজ্যকে পিছনে ফেলে দৌড়ে এগিয়ে গেল পশ্চিমবঙ্গ।
বিশ্বের প্রথম সারির ই-কমার্স সংস্থা অ্যামাজনের হাত ধরে এ বার আমেরিকা, কানাডা, মেক্সিকো-সহ দশটি দেশে পৌঁছবে রাজ্য সরকারি সংস্থা তন্তুজের শাড়ি। অ্যামাজন গ্লোবাল সেলিং প্রকল্পে হস্তচালিত তাঁত-বস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গই প্রথম রাজ্য। ২০১৬ সালে ১৩,৮০০ কোটি ডলার ব্যবসা করা সংস্থা অ্যামাজনের দাবি, পণ্যের গুণমানের কারণে বিশ্ব বাজারে তন্তুজকে ব্র্যান্ড হিসেবে বিপণন করা যাবে সহজেই।
নতুন ব্যবসা ও ক্রেতা টানতে নেট দুনিয়ায় আগেই পা রেখেছে তন্তুজ। অনলাইনে উপস্থিতি বাড়াতে নিজেদের ওয়েবসাইট ছাড়াও ফ্লিপকার্ট ও অ্যামাজন ইন্ডিয়ায় পণ্য সাজিয়েছে তারা। তবে তা সীমাবদ্ধ ছিল দেশের বাজারের মধ্যেই। বদলে যাওয়া চাহিদার দিকে তাকিয়েই নেট বাজারে জোর দেওয়া হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ। অনলাইন মাধ্যমে ২০১৬-’১৭ সালে ৬৫ লক্ষ টাকার ব্যবসা করেছে সংস্থা। এ বছর অনলাইন মাধ্যমে এক কোটি টাকার বেশি ব্যবসা করার লক্ষ্যে এগোচ্ছে সংস্থা। নেট বাজারের জন্য পণ্যের নকশা ও রঙের ক্ষেত্রেও রকমফের এনেছে তন্তুজ। বিদেশের বাজারে অ্যামোনিয়া-মুক্ত রং ব্যবহার করা হচ্ছে বলে সংস্থার দাবি।
১৯৫৪ সালে তৈরি সংস্থা তন্তুজ সবে লাভের মুখ দেখতে শুরু করেছে। মূলত বাজারের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে পা ফেলা ও বিপণনের জোরে ধুঁকতে থাকা এই সংস্থা ঘুরে দাঁড়িয়েছে বলে দাবি করছে সংশ্লিষ্ট মহল। তাঁত, তসর , সিল্কের শাড়ি ও অন্যান্য পণ্য বিক্রি করে ২০১৬-’১৭ সালে তন্তুজ ১৫৩ কোটি টাকার ব্যবসা করেছে বলে দাবি স্বপনবাবুর। চলতি আর্থিক বছরের শেষে এই ব্যবসা ২০০ কোটি টাকা ছুঁয়ে যাবে বলে আশা তাঁর।
অন্য দিকে বিশ্ব বাজারে নিজেদের বাজার দখল বাড়াতে অ্যামাজন ভারতে তৈরি পণ্যের দিকে নজর দিচ্ছে। অ্যামাজন ইন্ডিয়ার অন্যতম কর্তা গোপাল পিল্লাই জানান, অ্যামাজন গ্লোবাল মঞ্চে ২০ হাজার ভারতীয় সংস্থা রয়েছে। তবে আমুল, বিবা, টাইটান, লিবার্টির মতো নামী ব্র্যান্ড থাকলেও তৃণমূল স্তরের উৎপাদক এখনও কম। পিল্লাইয়ের দাবি, সরাসরি আরও বেশি কারিগরের কাছে পৌঁছে যেতে চায় সংস্থা। সে ক্ষেত্রে দালালের রমরমা কমবে। সংস্থা ও কারিগর, দু’তরফের লাভের পরিমাণ বাড়বে।
অ্যামাজনের দাবি, হস্তচালিত তাঁত -পণ্যের চাহিদা বিশ্ব জুড়েই রয়েছে। সেই বাজার ধরতে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, নাগাল্যান্ডের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে তারা। হস্তশিল্পের বিপুল চাহিদার দৌলতে লাভের মুখ দেখছে ই-কমার্স সংস্থাগুলিও। তার মধ্যে হাতে বোনা তাঁতের জিনিসের কদর বিপুল। অ্যামাজন, ফ্লিপকার্ট, স্ন্যাপডিলের মতো বড় সংস্থার পাশাপাশি কারিগরদের হাত ধরতে ঝাঁপিয়েছে ক্রাফ্টিসান, গো-কোঅপ, বান্না ক্রিয়েশন্স-এর মতো স্টার্ট-আপ বা নতুন সংস্থাও। প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকার হস্তশিল্পের বাজার নেট দুনিয়ায় টানতে কারিগরদের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধা যে লাভজনক, তা নিয়ে নিঃসংশয় বিভিন্ন ই-কমার্স সংস্থা।