প্রতীকী ছবি।
চাহিদা তলানিতে। দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে অর্থনীতির। অথচ তাকে চাঙ্গা করতে সরকারি ব্যয় বাড়ানোর পথে হাঁটলেই রাজকোষ ঘাটতি মাত্রাছাড়া হওয়ার আশঙ্কা। এই পরিস্থিতিতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ১.৭৬ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি সরকারের ঘরে পাঠাতে রাজি হতেই ছড়িয়েছিল জল্পনা। তা হলে কি অর্থনীতির সঙ্কট সামাল দিতে শীর্ষ ব্যাঙ্কের ভাঁড়ারের ভাগ কাজে লাগাতে চাইছে কেন্দ্র! মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা সিলমোহর দিলেন সেই জল্পনাতেই। বললেন, খরচের পথ যা-ই হোক না কেন, লক্ষ্য একটাই— ঝিমিয়ে পড়া দশা থেকে অর্থনীতি যাতে মন্দার কবলে চলে না যায়, সেটা নিশ্চিত করা।
মন্ত্রক সূত্র বলছে, কোন খাতে কী ভাবে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তহবিল কাজে লাগানো হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে খবর, এর নীল নকশা ছকতে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সঙ্গে অর্থ মন্ত্রকের কর্তাদের আলোচনা শুরু হয়েছে। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ ঘোষণা করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। আরও কিছু ঘোষণা বাকি। শিল্প মহলের মতে, তখনই স্পষ্ট হবে গোটা বিষয়টি।
যদিও অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তার ইঙ্গিত, সামনে মূলত তিনটি বিকল্প। এক, বাজারে বিক্রিবাটা কমেছে। রাজস্ব আয় ভাল হচ্ছে না। বাজেটের লক্ষ্য অনুযায়ী আয় গত বছরের তুলনায় ২৫% বাড়ানো যাবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তাই পরিকাঠামো খরচে ৩.৩ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ হলেও, তাতে রাশ টানতে হচ্ছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তহবিলের টাকায় সেই সমস্যা মিটিয়ে পরিকাঠামোয় খরচে গতি আনা যায়।
দুই, শিল্প ১ লক্ষ কোটি টাকার ত্রাণ চেয়েছে। যাতে গাড়ি, আবাসনের মতো ঝিমিয়ে পড়া ক্ষেত্রগুলি অক্সিজেন পায়। কিন্তু রাজকোষের টানাটানিতে তা কার্যত অসম্ভব ছিল। এই পুঁজি হাতে এলে বিষয়টি ভাবা যেতে পারে।
তিন, সরকারের ধারের পরিমাণ কমিয়ে রাজকোষ ঘাটতিকে ৩.৩% থেকে নামানো হতে পারে ৩ শতাংশে। চলতি অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসেই ওই ঘাটতি গোটা বছরের জন্য ৭.০৪ লক্ষ কোটি টাকা লক্ষ্যের ৬১% ছুঁয়েছে। সরকারের উপর থেকে ঋণের চাপ কমলে বাজারে শিল্পের জন্য ঋণ আরও সহজলভ্য হবে। যে চাপ কমাতে বিদেশ থেকে ডলারে ঋণ নেওয়ার কথা ভাবতে হচ্ছিল অর্থ মন্ত্রককে।
তবে সরকারি মহল বলছে, ১.৭৬ লক্ষ কোটির পুরোটাই ‘বোনাস’ নয়। কারণ বাজেটেই এ বার শীর্ষ ব্যাঙ্কের থেকে ৯০ হাজার কোটি মিলবে বলে ধরা ছিল। ২৮ হাজার কোটি ডিভিডেন্ড হিসেবে রাজকোষে জমাও পড়েছে। ফলে বাড়তি পাওনা ৫৮ হাজার কোটি। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, ওই টাকা পাওয়া জরুরি ছিল বলেই জালান কমিটিতে বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তির চেষ্টা শুরু হয়। কমিটিতে প্রাক্তন অর্থসচিব সুভাষচন্দ্র গর্গ দাবি তুলেছিলেন, আরবিআইয়ের ‘রিভ্যালুয়েশন অ্যাকাউন্ট’ থেকেও অর্থ কেন্দ্রকে দিতে হবে। কিন্তু জালান ও কমিটির কেউই তাতে হাত দেওয়া উচিত নয় বলে মত দেন। গর্গ জানান, তা হলে রিপোর্টে সই করবেন না। গর্গকে অর্থ মন্ত্রক থেকে সরানোর পরে নতুন অর্থসচিব রাজীব কুমার জালান ও অন্যান্যদের মত মানেন। ১৪ অগস্ট কমিটির বৈঠকে সর্বসম্মতিতে সুপারিশ গৃহীত হয়।