প্রতীকী ছবি।
ক্রিপ্টোকারেন্সি বা ভার্চুয়াল কারেন্সি ঘিরে বিতর্ক তখন তুঙ্গে। এই অবস্থায় ২০১৮ সালের ৬ এপ্রিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এক নির্দেশিকায় জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত ব্যাঙ্ক বা কোনও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্রিপ্টোকারেন্সি সংক্রান্ত কোনও পরিষেবা দিতে পারবে না। গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে জমা তো নয়ই। কিন্তু বুধবার সেই নিষেধাজ্ঞাই খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ। এর ফলে কোনও আর্থিক প্রতিষ্ঠান চাইলে ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেনের পরিষেবা দিতে পারবে।
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানান, শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মেনে পদক্ষেপ করা হবে। রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন নেট মুদ্রার কারবারিরা। উল্লেখ্য, ভার্চুয়াল কারেন্সি আনার কথা ঘোষণা করেছে ফেসবুক। সূত্রের খবর, রিলায়্যান্স জিয়ো এই মুদ্রা চালুর পরিকল্পনা করেছে।
ডিজিটাল মুদ্রার সাত-সতেরো
ক্রিপ্টোকারেন্সি কী
• অনলাইন লেনদেনে ব্যবহারযোগ্য মুদ্রা। আর এক নাম ডিজিটাল কারেন্সি।
• ব্যবহার হয় সঙ্কেতলিপি বা এনক্রিপটন পদ্ধতিতে। লেনদেনকারীর পরিচয় জানা যায় না।
• সেই পদ্ধতিতেই তৈরি হয় মুদ্রার ইউনিট। এমনকি তহবিলের লেনদেনও।
• নানা রকম ক্রিপ্টোকারেন্সি আছে। যেমন— বিটকয়েন, লাইটকয়েন, ইথেরিয়াম, রিপ্ল, জিক্যাশ, ড্যাশ।
লেনদেন কী ভাবে
• কেনা যায় সংশ্লিষ্ট মুদ্রার এক্সচেঞ্জ বা কোনও ব্যক্তির থেকে। বিক্রিও হয় সে ভাবেই। মোবাইল, কম্পিউটার মারফত।
• প্রথমে খুলতে হয় ওয়ালেট। এক জন একাধিক ওয়ালেটও খুলতে পারেন।
• ওয়ালেটে এই মুদ্রা জমা থাকে। যা রাখা যায় অনলাইনে, কম্পিউটারে, নেট মাধ্যমে ‘ভল্ট’ বা লকারে।
• লেনদেন করতে চাইলে ওই জমা ক্রিপ্টোকারেন্সিতেই পাঠাতে হয়।
• তবে হাতের নেট-মুদ্রা বেরিয়ে গেলে কিন্তু সেটি ফেরত পাওয়ার উপায় নেই। শুধু যাঁর কাছে যাচ্ছে, তিনি ফেরত দিলেই তা সম্ভব।
• বিশ্বের বেশ কিছু নামী সংস্থা পণ্যের দাম হিসেবে ক্রিপ্টোকারেন্সি নেয়।
ব্লক-চেন ও মাইনিং
• নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের কম্পিউটার থেকে চলা ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেন নিয়ে তৈরি হয় এক একটি ব্লক। সেগুলি যে ‘নেট-খাতায়’ (লেজার) লেখা থাকে, তাকে বলে ব্লক-চেন। এটির মাধ্যমে লেনদেনে নজরদারি চালায় সংশ্লিষ্ট এক্সচেঞ্জ।
• হিসেব রাখার পদ্ধতিকে বলে ‘মাইনিং’। যাঁরা এই কাজ করেন, তাঁদের বলে ‘মাইনার’।
ঝুঁকি কোথায়
• ক্রিপ্টোকারেন্সির কোনও নিয়ন্ত্রক নেই। অর্থাৎ, ভারতে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বা অন্য কোনও দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক একে নিয়ন্ত্রণ করে না।
• কোনও দেশের সরকার বা শীর্ষ ব্যাঙ্কের দ্বারা স্বীকৃতও নয় এই মুদ্রা।
• ফলে তা মার গেলে গ্রাহক কোথায় যাবেন তা স্পষ্ট নয়।
দানা বেঁধেছে বিতর্কও
• ক্রিপ্টোকারেন্সি ঘিরে বহু অনিয়মের ঘটনা সামনে আসায় বিভিন্ন দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক তাদের নাগরিকদের সতর্ক করতে শুরু করে।
• ২০১৩ সালে ভারতে সতর্কবার্তা জারি করে রিজার্ভ ব্যাঙ্কও।
• ২০১৮ সালের ৬ এপ্রিল আরবিআই জানায়, তাদের নিয়ন্ত্রিত কোনও আর্থিক সংস্থা ক্রিপ্টোকারেন্সি সংক্রান্ত কোনও পরিষেবা দিতে পারবে না।
• সে বছরই ওই নির্দেশিকাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা করেছিল আইএমএআই।
• বুধবার আরবিআইয়ের নির্দেশ খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট। যুক্তি দিল, ওই নির্দেশে ‘ভারসাম্যের অভাব’ রয়েছে। জানাল, আর্থিক সংস্থাগুলি চাইলে ক্রিপ্টোকারেন্সি সংক্রান্ত পরিষেবা দিতে পারবে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দেশকে যারা চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল, সেই ইন্টারনেট অ্যান্ড মোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (আইএমএআই) আদালতে যুক্তি দিয়েছে, শীর্ষ ব্যাঙ্ক মূলত ‘নীতিগত’ জায়গা থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। অর্থনীতির উপরে ক্রিপ্টোকারেন্সির আদৌ বিরূপ প্রভাব রয়েছে কি না, তা তারা খতিয়ে দেখেনি। বস্তুত, শীর্ষ আদালতের বিচারপতি আর এফ নরিম্যানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চও ১৮০ পৃষ্ঠার রায়ে জানিয়েছে, বিভিন্ন কমিটি একাধিক প্রস্তাব দিলেও, কেন্দ্র এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। দু’টি খসড়া বিল পেশ হলেও সেগুলি ছিল পরস্পরবিরোধী। এই অবস্থায় শীর্ষ ব্যাঙ্কের নির্দেশিকায় ‘ভারসাম্যের অভাব’ রয়েছে বলে মনে করছে সুপ্রিম কোর্ট।
২০১৩ সালে ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে আমানতকারীদের সতর্ক করেছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তার পাঁচ বছর পরে নিষেধাজ্ঞা। আর এ দিনের রায়ের পরে বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে ধোঁয়াশা এখনও কাটেনি। আমানতকারী সমস্যায় পড়লে কোথায় কড়া নাড়বেন সে প্রশ্নের উত্তর রয়েছে অজানাই। শীর্ষ ব্যাঙ্ক হয়তো শীঘ্রই বার্তা দিতে পারে।