প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সুন্দরের সঙ্গে তথ্যের সুরক্ষা নিয়ে কথা হয়েছে তাঁর।
অনলাইনে বিক্রিবাটার বিরুদ্ধে ছোট খুচরো ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভের সময়ে ভারতে এসে ১০০ কোটি ডলার (প্রায় ৭৫০০ কোটি টাকা) লগ্নির কথা বলেছিলেন অ্যামাজ়ন কর্ণধার জেফ বেজোস। আর বিভিন্ন বহুজাতিকের সার্ভার ঘুরে ভারতীয় ক্রেতা ও গ্রাহকদের তথ্য দেশের বাইরে চলে যাওয়া নিয়ে বিতর্কের মধ্যে ১০,০০০ কোটি ডলার (প্রায় ৭৫,০০০ কোটি টাকা) লগ্নির কথা জানাল গুগল।
সোমবার ভারতের জন্য গুগলের (গুগল ফর ইন্ডিয়া) ভিডিয়ো-বৈঠকের মঞ্চে সিইও সুন্দর পিচাইয়ের ঘোষণা, ৫-৭ বছরে এ দেশে ওই টাকা ঢালবেন তাঁরা। দাবি, আবহাওয়ার পূর্বাভাস থেকে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অনলাইন পেমেন্ট পরিষেবা পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা নেবে এই মার্কিন বহুজাতিক। করোনার তথ্য জানানো হোক বা স্কুলে নেটনির্ভর পাঠ— সবেতেই দেশের প্রত্যন্ত প্রান্তে পৌঁছনোর চেষ্টা হবে। শিক্ষায় সিবিএসই-র ২২ হাজার স্কুলের প্রায় ১০ লক্ষ শিক্ষককে নিখরচায় প্রশিক্ষণ দেবে গুগল। জোর দেবে নেটে পড়াশোনার ‘কনটেন্ট’ তৈরিতে। শুধু তাতেই উপুর করবে ১০ লক্ষ ডলার (প্রায় ৭.৫ কোটি টাকা)।
সম্ভাবনাময় ডিজিটাল বাজারের দেশ ভারতে নিজেদের জমি পোক্ত করতে গুগলের মতো প্রযুক্তি সংস্থা যে ঝাঁপাবে, তা প্রত্যাশিত। এ দিন তার লগ্নিকে স্বাগত জানান তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ এবং শিক্ষামন্ত্রী রমেশ পোখরিয়াল নিশঙ্কও। কিন্তু শিল্পের একাংশ মনে করাচ্ছে, এই লগ্নি আসবে ৫-৭ বছরে। অর্থাৎ, বছরে গড় অঙ্ক ১১ থেকে ১৫ হাজার কোটি। যা গুগলের মাপের সংস্থার কাছে নস্যি। তার উপরে অর্থের বড় অংশ যাবে স্টার্ট-আপের শেয়ার কেনায়। অর্থাৎ, পুরো লগ্নি ডিজিটাল-পরিকাঠামোয় নয়।
আরও পড়ুন: শক্তিকান্তের মুখে রেজ়লিউশনের কথা, উঠছে প্রশ্নও
আরও পড়ুন: ধনীদের থেকে আরও কর নিক সব দেশের সরকার, খোলা চিঠি দিলেন বিত্তবানরাই
‘‘ভারতে ৫-৭ বছরে ১০০০ কোটি ডলার (প্রায় ৭৫,০০০ কোটি টাকা) লগ্নি করবে গুগল। তা করা হবে ‘ডিজিটাইজ়ড ইন্ডিয়া’ তহবিল মারফত। মাধ্যম হবে বিভিন্ন ভারতীয় সংস্থায় (মূলত স্টার্ট-আপ) শেয়ার কেনা, যৌথ উদ্যোগ, (ডিজিটাল) পরিকাঠামোয় লগ্নি ইত্যাদি।…এই বিনিয়োগ ভারতের ভবিষ্যৎ ও ডিজিটাল অর্থনীতির প্রতি আমাদের আস্থার প্রতিফলন। প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল ইন্ডিয়ার স্বপ্নকে সমর্থন জানিয়ে আমরা গর্বিত।’’—সুন্দর পিচাই, সিইও, অ্যালফাবেট (গুগলের মূল সংস্থা)
‘‘সকালে খুবই ফলপ্রসূ আলোচনা হল সুন্দর পিচাইয়ের সঙ্গে। কথা হল বিভিন্ন বিষয়ে। বিশেষত প্রযুক্তিকে কী ভাবে ভারতের কৃষক, কম বয়সি এবং উদ্যোগীদের জন্য কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে।… করোনার সময়ে তৈরি হওয়া নতুন কর্মসংস্কৃতি থেকে শুরু করে তথ্যের নিরাপত্তা— মতের আদান-প্রদান হয়েছে বহু বিষয়েই।… শিক্ষা, ডিজিটাল পেমেন্টের মতো বিষয়ে গুগলের কাজ সম্পর্কে আরও জানতে পেরে আমি খুশি।’’ —নরেন্দ্র মোদী, প্রধানমন্ত্রী
অনেকে আবার বলছেন, ভারতে চিনা অ্যাপ বাতিলের পরে বাজারে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, সবার আগে তা ভরাট করতে ঝাঁপাবে গুগলের মতো বহুজাতিকই। তাদের পুঁজি কিংবা দক্ষতার সঙ্গে টক্কর দেওয়া সহজ হবে না ভারতীয় স্টার্ট-আপগুলির পক্ষে। ফলে প্রশ্ন, ডিজিটাল ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর আমেরিকা-নির্ভর হয়ে দাঁড়াবে না তো?
তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের অনেকে মনে করাচ্ছেন, গুগল, অ্যামাজ়নের মতো সংস্থার সার্ভার হয়েই ভারতীয়দের তথ্য বিদেশে যাচ্ছে বলে এতদিন উদ্বেগ প্রকাশ করছে কেন্দ্র। তাঁদের প্রশ্ন, একে সুন্দর কর্পোরেট দুনিয়ায় ভারতের উজ্জ্বল প্রতিনিধি। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে প্রথম সারির মুখ। তার উপরে প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল ইন্ডিয়ার স্বপ্ন পূরণে কাঁধ মেলাতে চাইছে তাঁর সংস্থা। ঘোষণা করছে মোটা লগ্নি। এর পরে তথ্য বাইরে যাওয়া নিয়ে তাদের উপরে কতটা খড়্গহস্ত হবে কেন্দ্র? এ দিনই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সুন্দরের সঙ্গে তথ্যের সুরক্ষা নিয়ে কথা হয়েছে তাঁর।