রান্নার গ্যাসের পরে এ বার কেরোসিন।
গ্যাস-সিলিন্ডারের ভর্তুকির টাকা সরাসরি গ্রাহকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেওয়ার পরিকাঠামো তৈরির পরে এ বার নতুন পরীক্ষার মুখে ন্যাশনাল পেমেন্ট কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (এনপিসিআই)। ১ এপ্রিল থেকে প্রথম দফায় ন’টি রাজ্যের ৩৩টি জেলায় কেরোসিনের ভর্তুকির টাকা সরাসরি ক্রেতাদের অ্যাকাউন্টে পৌঁছে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। রান্নার গ্যাসের পরে সেই প্রক্রিয়ারও দায়িত্ব বর্তেছে এনপিসিআইয়ের উপরে। সংস্থাটির দাবি, পরিকাঠামো তৈরির কাজ সম্পূর্ণ। কেন্দ্রের নির্দেশ মেনে নির্ধারিত সময়েই ব্যবস্থা চালু হবে।
তবে এই প্রথম তালিকায় পশ্চিমবঙ্গের কোনও জেলা নেই। ভোটের জন্য এ নিয়ে আলোচনাও হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, নির্বাচন-পর্ব মিটে যাওয়ার পরে বিষয়টি কী ভাবে কার্যকর করা যায়, সে বিষয়ে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনায় বসবে তেল সংস্থাগুলি। ফলে এখন এ রাজ্যে কেরোসিন মিলবে পুরনো নিয়মেই। ক্রেতারা তা পাবেন ভর্তুকির দামে।
এনপিসিআইয়ের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান স্মরজিৎ মণ্ডল জানান, প্রথমে গুজরাত, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগঢ়, হরিয়ানা, হিমাচলপ্রদেশ ও পঞ্জাবের ৩৩টি জেলায় আধার নম্বরের ভিত্তিতে কেরোসিনে ভর্তুকির টাকা সরাসরি দেওয়া হবে ক্রেতার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। এ জন্য প্রতি জেলায় একটি করে ‘লিড ব্যাঙ্ক’ ঠিক করা হয়েছে। তবে সংশ্লিষ্ট গ্রাহকদের যে কোনও ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট থাকলেই চলবে। লিড-ব্যাঙ্কেই যে তা থাকতে হবে, এমন নয়।
কিন্তু সকলের যে আধার নম্বর থাকবে, তার নিশ্চয়তা কোথায়? স্মরজিৎবাবুর দাবি, প্রথম পর্যায়ে যে জেলাগুলিতে এই ব্যবস্থা চালু হতে চলেছে, সেখানে আধার নম্বর রয়েছে প্রায় সকলের। উল্লেখ্য, সবার আধার নম্বর না-থাকার কারণে রান্নার গ্যাসে এই পদ্ধতি চালুর সময় বারবার বিস্তর সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছিল।
আধার নম্বরের ভিত্তিতে রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি সরাসরি অ্যাকাউন্টে দেওয়ার ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল পূর্বতন ইউপিএ সরকার। কিন্তু সকলের আধার নম্বর না-থাকায়, মাঝপথে তা কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ে। পরে ওই নম্বর ছাড়া শুধু ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ভিত্তিতে ফের এই ব্যবস্থা চালু করে মোদী সরকার। সরকারি সূত্রের দাবি, গত অর্থবর্ষে এর দৌলতে প্রায় ১৪-১৫ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে কেন্দ্রের।
কেরোসিনের ক্ষেত্রেও ১ এপ্রিল থেকে ওই একই ব্যবস্থা চালুর কথা সম্প্রতি বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। তবে কেন্দ্রের দাবি, গ্যাসের মতো ভর্তুকির টাকা বাঁচানো এ ক্ষেত্রে প্রধান লক্ষ্য নয়। বরং সঠিক ক্রেতা যাতে ভর্তুকির কেরোসিন পান, তা নিশ্চিত করতেই এই ব্যবস্থা। এর জেরে কালোবাজারি এবং ভেজাল তেলের ব্যবসাও বন্ধ হবে বলে সরকারের আশা।
পেট্রোলিয়াম মন্ত্রকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৫-’১৬ সালে ৮৬.৮৫ লক্ষ কিলোলিটার ভর্তুকির কেরোসিন বরাদ্দ করা হয়েছিল। যা দেশে কেরোসিনের মোট চাহিদার থেকে বেশি! তাদের দাবি, ওই কেরোসিনের একটা অংশ অন্য খাতে সরানোর প্রমাণ রয়েছে। তা ছাড়া, গরিবদের জন্য প্রায় ৫০ লক্ষ রান্নার গ্যাসের নতুন সংযোগ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাওয়ায় সঙ্গে সঙ্গে কেরোসিনের চাহিদা কমছে আলো জ্বালাতেও। ফলে সব মিলিয়ে, ভর্তুকির কেরোসিন অপব্যবহারের অভিযোগ জোরালো হচ্ছে। নতুন ব্যবস্থায় তাতে রাশ টানা যাবে বলেই মন্ত্রকের আশা।
রাজ্যগুলিকে এই ব্যবস্থা চালুর জন্য উৎসাহিত করতে সুবিধা দেওয়ার কথাও জানিয়েছে মন্ত্রক। যেমন, নির্দিষ্ট হারে বরাদ্দ সাশ্রয় করতে পারলে, ২০১৬-’১৭ এবং ২০১৭-’১৮ সালে সেই সাশ্রয়ের ৭৫% পর্যন্ত আর্থিক সুবিধা পাবে রাজ্য। তা ছাড়া, কোনও রাজ্য স্বেচ্ছায় বরাদ্দ ছাঁটার কথা জানালে বাড়তি সুবিধাও পাবে তারা।