—ফাইল চিত্র।
মোদী সরকারের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক এবং বিমা সংস্থা বেসরকারিকরণের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বড় মাপের আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছেন এই দুই শিল্পের কর্মীরা। যার প্রথম ধাপ হিসেবে এই সপ্তাহের প্রথম চার দিনই আর্থিক ক্ষেত্রের বিভিন্ন শিল্প ধর্মঘটে নামছে। আজ, সোমবার এবং আগামিকাল, মঙ্গলবার ব্যাঙ্ক ইউনিয়নগুলির ডাকে দেশ জুড়ে চলবে ব্যাঙ্ক ধর্মঘট। বুধবার ধর্মঘট ডেকেছে সাধারণ বিমা শিল্প। আর বৃহস্পতিবার ধর্মঘটে নেমে সরকারি নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবেন জীবন বিমা নিগমের (এলআইসি) কর্মী এবং অফিসারেরা। আগামী দিনে আন্দোলনের তীব্রতা বাড়াতে যৌথ ভাবে ধর্মঘটের পরিকল্পনাও করছেন ব্যাঙ্ক, বিমা এবং অন্যান্য রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার কর্মীরা।
সিটুর সাধারণ সম্পাদক তপন সেন এবং ইউটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক অশোক ঘোষের হুঁশিয়ারি, এই চার দিনের ধর্মঘটে কেন্দ্রের টনক না-নড়লে আরও বড় মাপের আন্দোলনে নামব। আর্থিক ক্ষেত্রের সকলে একজোট হয়ে যৌথ কর্মসূচি নেবে।’’ তবে শুধু আর্থিক ক্ষেত্র নয়, বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিলগ্নিকরণের সিদ্ধান্ত নিয়েই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে এককাট্টা ইউনিয়নগুলি। ১০টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নের যৌথ মঞ্চ ইতিমধ্যেই ব্যাঙ্ক ও বিমা শিল্পে ধর্মঘটের সমর্থনে পথে নামার কথা জানিয়েছে।
রাজকোষে টাকা ভরতে বিলগ্নিকরণকে বহু দিন ধরেই পাখির চোখ করছে মোদী সরকার। এ বার বাজেটে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার সংখ্যা আরও কমানোর পাশাপাশি দু’টি ব্যাঙ্ক এবং একটি বিমা সংস্থাকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার কথা বলেছে তারা। জানিয়েছে দ্রুত এলআইসি-তে তাদের হাতে থাকা শেয়ারের একাংশও বাজারে বিক্রি হবে। তার পরেই দেশ জুড়ে সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন এই সব প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। বেসরকারি সংস্থার হাতে জাতীয় সম্পত্তি তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে না-সরলে সরকারের বিরুদ্ধে কৃষক আন্দোলনের ধাঁচে বৃহত্তর আন্দোলন চালানোর বার্তাও দিচ্ছেন।
ধর্মঘটী ইউনিয়ন নেতাদের বক্তব্য, ‘‘শুধু নিজেদের চাকরির নিরাপত্তার স্বার্থে বিলগ্নিকরণের বিরোধিতা করছি না। এতে স্বার্থহানি হবে গ্রাহকদেরও।’’ ব্যাঙ্ক শিল্পের কর্মী-অফিসারদের যৌথ মঞ্চ ইউএফবিইউ-র আহ্বায়ক গৌতম নিয়োগী বলেন, ‘‘ব্যাঙ্কে গ্রাহকদের ৫ লক্ষ টাকা আমানতে বিমার সুবিধা মিলবে বলছে কেন্দ্র। অর্থাৎ ব্যাঙ্কে তালা ঝুললে সর্বোচ্চ ৫ লক্ষ টাকা পাবেন গ্রাহক। কিন্তু যাঁদের অনেক বেশি টাকা জমা আছে? বিশেষত প্রবীণ নাগরিকদের। তাঁদের কী হবে? মানুষ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে টাকা রাখেন তাতে কার্যত সরকারের (সভরিন) গ্যারান্টি রয়েছে, এই ভরসায়। ব্যাঙ্ক বেসরকারিকরণ হলে ওই গ্যারান্টি থাকবে না।’’
একই ভাবে সাধারণ বিমা শিল্পের সিটু অনুমোদিত অল ইন্ডিয়া ইনশিয়োরেন্স এমপ্লয়িজ় অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জয় ঝা এবং শিবসেনা অনুমোদিত ভারতীয় বিমা কর্মচারি সেনার সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সেন বলেন, ‘‘লোকসান হওয়া সত্ত্বেও কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার পরিচালিত সাধারণ বিমা প্রকল্পে ৮২% পলিসিই রাষ্ট্রায়ত্ত সাধারণ বিমা সংস্থাগুলি করিয়েছে। গরিব মানুষদের জন্য প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বিমা যোজনার মতো প্রকল্পে রাষ্ট্রায়ত্ত সাধারণ বিমা সংস্থাগুলি ১৫০ শতাংশ লোকসান হজম করেও পরিষেবা দিচ্ছে। যা বেসরকারি বিমা সংস্থাগুলির কাছ থেকে আশা করা যায় না।’’
তৃণমূল অনুমোদিত ভারতীয় জীবন বিমা স্থায়ী কর্মচারি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অলোক দাসের দাবি, ‘‘এলআইসি-র ৪০ কোটি পলিসি রয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হিসেবেই গ্রাহকেরা চোখ বুজে সংস্থার উপর আস্থা রেখেছেন। সংস্থার বিলগ্নি করে তাঁদের সঙ্গে বিশ্বসঘাতকতা করছে কেন্দ্র।’