ফাইল চিত্র
শ্রমিকের হাতে কাজ নেই। পেটে খাবার নেই। অথচ পকেট ভরানোর বন্দোবস্ত হল শিল্প মহলের! বিশেষত যে ভাবে দরিদ্রের হাতে এক পয়সাও না-দিয়ে উল্টে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ঢালাও বেসরকারিকরণের কথা বলা হল, তাকে ‘বন্ধু শিল্পপতিদের জন্য দেওয়া অমানবিক সরকারের চৈত্র সেল’ বলে কটাক্ষ করছে একাধিক ট্রেড ইউনিয়ন। একই অভিযোগ প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের। এমনকি, কী কারণে মোদী সরকারকে এখনই ওই বেসরকারিকরণের পরিকল্পনা ঘোষণা করতে হল, তা বুঝে উঠতে পারছে না সঙ্ঘের কর্মী সংগঠন বিএমএস-ও।
শেষ দফার ত্রাণ প্রকল্পের ঘোষণায় অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন, কোনও ক্ষেত্রকে শুধু রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার জন্য তুলে রাখার দিন শেষ। যে সমস্ত ক্ষেত্র কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলির প্রত্যেকটিতে অন্তত একটি করে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা থাকবে। কিন্তু তার সর্বোচ্চ সংখ্যা হবে চার। তার বেশি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা থাকলে, একাধিক সংস্থাকে মিশিয়ে বা বেসরকারিকরণের পথে হেঁটে তার সংখ্যা কমানো হবে। আর যে সমস্ত ক্ষেত্র গুরুত্বপূর্ণের তালিকায় ঠাঁই পাবে না, সেখানে থাকবেই না রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা।
কিন্তু এই মুহূর্তে অর্থনীতির যা অবস্থা এবং শেয়ার বাজারের যা পরিস্থিতি, তাতে বেসরকারিকরণ কতটা করা যাবে, তাতে সন্দেহ আছে যথেষ্ট। কারণ, তাড়াহুড়ো করতে গেলে জলের দরে বিক্রি করতে হবে ওই সব সংস্থাকে।
সরকার কোনও রকম আলাপ-আলোচনা ছাড়াই যে ভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ঢালাও বেসরকারিকরণের কথা বলেছে, তাতে ক্ষোভে ফুটছে অধিকাংশ ট্রেড ইউনিয়ন। এআইটিইউসি-র সাধারণ সম্পাদক অমরজিৎ কউরের অভিযোগ, ‘‘দেশের অর্থনীতির পক্ষে কোন-কোন ক্ষেত্র কৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ, তা তো এত দিন জানাই ছিল। আসল কথা হল, এ বার নিজেদের মতো করে তার নতুন সংজ্ঞা নির্ধারণ করবে মোদী সরকার। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির কোমর ভেঙে দিয়ে সেই বাজার তুলে দেওয়ার চেষ্টা করবে বেসরকারি পুঁজির হাতে।’’ তাঁর প্রশ্ন, এখন দেশে ৪০টির বেশি অর্ডন্যান্স কারখানা আছে। নতুন নিয়ম মেনে কি তার সংখ্যাও চারে নামিয়ে আনতে চায় কেন্দ্র?
সিটু-র সাধারণ সম্পাদক তপন সেনের মতে, ‘‘এই সরকার তার তথাকথিত ২০ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজে চরম দুর্দশায় পড়া পরিযায়ী শ্রমিক, কাজ হারানো কর্মী, খেতে না-পাওয়া দরিদ্রের অ্যাকাউন্টে কার্যত এক পয়সাও দেয়নি। অথচ এই সঙ্কটের সুযোগে ঢালাও ব্যবস্থা করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিক্রির! লক্ষ্য, দেশের আর্থিক মানচিত্র থেকে ওই সমস্ত সংস্থাকে উধাও করে দিয়ে পুরো জমিই বেসরকারি পুঁজির হাতে ছেড়ে দেওয়া।’’ বিএমএসের সাধারণ সম্পাদক ব্রিজেশ উপাধ্যায়েরও কটাক্ষ, ‘‘আমরা বরাবরই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণের বিপক্ষে। এটি আমাদের ঘোষিত নীতি। অর্থমন্ত্রী এই কঠিন সময়ে ওই ঘোষণার মাধ্যমে কী করতে চাইলেন, তা সত্যিই বুঝলাম না।’’