রেকর্ড পরিমাণ পাট উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। সঙ্কটে পড়ে বাজারের থেকে অনেক কম দামে পাট বেচতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। এ রকম পরিস্থিতিতে পাট চাষিদের পাশে দাঁড়াতে এই প্রথম নিজেদের উদ্যোগে চটের বস্তা কিনতে চলেছে রাজ্য সরকার, যে দাবি অনেক দিন ধরেই তাদের কাছে করে আসছিল কেন্দ্র। এই মরসুমে প্রায় এক লক্ষ ২০ হাজার বেল (১ বেল মানে ১৮০ কেজি কাঁচা পাট বা ৫০০টি বস্তা) বস্তা কেনার বরাত দেওয়া হবে জুট কমিশনারকে। এই প্রকল্পের জন্য রাজ্যের অর্থ দফতর ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে।
ঠিক হয়েছে, খাদ্য দফতররের অধীন সংস্থা অত্যাবশকীয় পণ্য নিগম চটের বস্তাগুলি কিনে রাজ্যের চালকলগুলিকে সরবরাহ করবে। আর বস্তা কেনার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে জুট কমিশনার। তারাই রাজ্যের হয়ে চটকলগুলিকে বস্তা তৈরি করতে বলবে। সেই বস্তাই পণ্য নিগম চালকলগুলিকে চাল ভরার জন্য জোগাবে। নিগম এই কাজের জন্য বস্তা পিছু কমিশন পাবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। খাদ্য দফতরের পক্ষ থেকে চটের বস্তা মজুত করতে প্রতিটি জেলায় গুদামের সংখ্যা বাড়াতে নিগমকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বছর বন্যায় এমনিতেই পাট চাষিদের ব্যাপক ক্ষতি মুখে পড়তে হয়। কিন্তু তার পরেও রাজ্যে প্রায় ৬৫ লক্ষ বেল পাট উৎপাদন হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে কেন্দ্রীয় পাট নিগম ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে এখনও পর্যন্ত মাত্র ২৮ হাজার বেলের মতো পাট চাষিদের কাছ থেকে কিনেছে, যা মোট উৎপাদনের তুলনায় নগণ্য বলেই রাজ্য সরকারেরে অভিযোগ। ফলে এক শ্রেণির আড়তদারদের দামেই ঘরের পাট বিক্রি করে দিতে হচ্ছে চাষিদের, যা ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের তুলনায় কুইন্টল পিছু প্রায় ৫০০-৭০০ টাকা কম। পাট চাষিদের সমস্যার কথা জানিয়ে খুব শীঘ্রই কেন্দ্রকে চিঠিও লিখতে চলেছে রাজ্য সরকার। ওই চিঠিতে চটের বস্তা কেনার ক্ষেত্রে কেন্দ্র যে মাপকাঠি (৫৮০ গ্রাম ওজনের বস্তা) বেঁধে দিয়েছে, তা বাড়ানোর আর্জিও জানানো হবে। কারণ হাল্কা বস্তা তৈরি করতে গেলে উন্নত মানের পাট লাগে। রাজ্যে সেই ধরনের পাটের উৎপাদন অনেক কম হয়। ওজনে কিছুটা বেশি, এমন বস্তা ব্যবহারের অনুমোদন পেলে সাধারণ মানের পাটও চাষিরা সরকারি দামে বিক্রি করতে পারবেন।
সমস্যার শিকড়
• বন্যায় এ বছর পাট চাষের ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক
• তারপরেও রাজ্যে পাট উৎপাদন হয়েছে ৬৫ লক্ষ বেল*। ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে মাত্র ২৮ হাজার বেল কিনেছে কেন্দ্রীয় পাট নিগম
• বাধ্য হয়ে আড়তদারদের কাছে কুইন্টল-পিছু ৫০০-৭০০ টাকা কম দরে পাট বেচছেন চাষিরা
রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে খাদ্য দফতর পাট চাষিদের পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রাজ্য বস্তা কিনলে চাষিদের ঘরের পাট ন্যায্য দামে বিক্রি হবে। মুখ্যমন্ত্রীর কৃষি-উপদেষ্টা প্রদীপ মজুমদার জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার যে-ভাবে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে চাষিদের কাছ থেকে ধান কেনে, সেই একই ভাবে চটের বস্তা কেনা শুরু করলে পাট চাষিদের লোকসানও কিছুটা কমানো যাবে।
সমাধানে উদ্যোগ
• এই মরসুমে জুট কমিশনারকে ১ লক্ষ ২০ হাজার বেল বস্তা কেনার বরাত দেবে রাজ্য
• এ জন্য ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে অর্থ দফতর
• চাষিদের দুর্দশা জানিয়ে কেন্দ্রকে শীঘ্রই চিঠিও পাঠাবে রাজ্য
* ১ বেল= ১৮০ কেজি কাঁচা পাট বা ৫০০টি চটের বস্তা
প্রসঙ্গত, রাজ্যের পাট চাষিদের সমস্যার কথা জানতে পেরে সম্প্রতি কৃষি দফতর নবান্নে একটি বৈঠক ডাকে। ওই বৈঠকে পাট নিগম, জুট কমিশনার-সহ এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি সরকারি দফতর ও অন্য সমিতিগুলিকে ডাকা হয়েছিল। পাট নিগম কর্তারা বৈঠকে রাজ্যকে জানান, পাট কেনার ক্ষেত্রে তাদের অর্থের টানাটানি রয়েছে। এ ছাড়াও পরিকাঠামোগত কিছু সমস্যা এবং কেন্দ্রের নির্দেশ মতো ভাল মানের পাট ছাড়া তাঁরা কিনতে পারছেন না। তখনই চাষিদের স্বার্থে রাজ্যের পক্ষ থেকে চটের বস্তা কেনার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে সকলের সহযোগিতা চাওয়া হয়। নবান্নে সূত্রে খবর, রাজ্যের এই উদ্যোগে প্রয়োজন হলে চাষিদের কাছ থেকে ১০ লক্ষ বেল পর্যন্ত পাট কিনে নেবে নিগম। এই কাজে রাজ্য সরকারও নিগমকে পরিকাঠামোর দিক থেকে সহযোগিতা করতে পারে বলে জানিয়েছে।
রাজ্যের চালকল মালিকদের সংগঠন বেঙ্গল রাইসমিল অ্যাসোসিয়েশন-এর কার্যকরী সভাপতি আবদুল মালেক জানিয়েছেন, সরকারের এই উদ্যোগকে তাঁরা স্বাগত জানাচ্ছেন। তাঁরাও অনেক দিন ধরে রাজ্যের কাছে বস্তা সরবরাহের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তবে রাজ্যের কাছে তাঁদের দাবি, বস্তা সরবরাহে যেন কোনও ঢিলেমি না হয়।