স্টেট ব্যঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। —ফাইল চিত্র।
বেশ কিছু দিন ধরেই যে বিষয়টি নিয়ে চর্চা চলছে তা হল, দেশের ব্যাঙ্কগুলিতে ঋণের তুলনায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে গ্রাহকের টাকা জমার পরিমাণ বা আমানত বৃদ্ধির হার। আশঙ্কা, এতে ঋণের চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। কারণ, সাধারণ গ্রাহকের জমা করা টাকাই ব্যাঙ্কের পুঁজি। তা দিয়ে ধার দেয় তারা। ফলে প্রশ্ন ওঠে, পুঁজি কম থাকলে সেই চাহিদা মিটবে কী করে! কিন্তু সোমবার প্রকাশিত স্টেট ব্যাঙ্কের অর্থনীতিবিদদের রিপোর্টে দাবি, আমানতের পিছিয়ে পড়ার ধারণাটা ঠিক নয়। বছর খানেক ধরে ঋণ বৃদ্ধির সঙ্গে আমানত বৃদ্ধির হার খাপ খাচ্ছে না বটে। তবে ঐতিহাসিক ভাবে ভারতের ব্যাঙ্কগুলিতে ঋণের তুলনায় আমানতকে বেশি হারে বাড়তে দেখা যায়। যদিও সেখানে এটা স্বীকার করা হয়েছে, হালে স্থায়ী আমানত বা ফিক্সড ডিপোজ়িট কিছুটা মার খেয়েছে লগ্নির অন্যান্য ক্ষেত্রগুলির আকর্ষণ বাড়ায়। সেটাই ভাটার কারণ। যে কারণে ওই রির্পোটে ব্যাঙ্ক আমানতকে আকর্ষণীয় করতে তুলতে কর সংক্রান্ত নিয়মের পরিবর্তন করার সুপারিশ করেছেন সংশ্লিষ্ট অর্থনীতিবিদেরা। সওয়াল করেছেন সঞ্চয়ের এই ক্ষেত্রেও মিউচুয়াল ফান্ডের লগ্নিতে থাকা করের নিয়ম চালু করার জন্য।
এখন ব্যাঙ্কের মেয়াদি আমানতে প্রতি বছর হওয়া সুদ বাবদ আয়ের উপরে কর মেটাতে হয়। মিউচুয়াল ফান্ডে কর মেটাতে হয় ফান্ড ভাঙিয়ে টাকা তোলার সময় কিংবা এক ফান্ড থেকে অন্য ফান্ডে টাকা স্থানান্তরিত করার সময় মুনাফা হলে। রিপোর্টে দাবি, ব্যাঙ্কে মেয়াদি আমানতের ৪৭ শতাংশই প্রবীন নাগরিকদের অ্যাকাউন্টে রয়েছে। তবে কম বয়সের মানুষের মধ্যে ব্যাঙ্কে টাকা জমানোর আগ্রহ ক্রমশ কমছে। মিউচুয়াল ফান্ড ইত্যাদির দিকে বেশি করে ঝুঁকছেন তাঁরা। তাই স্টেট ব্যাঙ্কের অর্থনীতিবিদেরা আমানতে করের সুবিধা বৃদ্ধির সওয়াল করেছেন। তাঁদের পরামর্শ, ফান্ডের মতো কর-বিধি চালু হোক আমানতে। বদলাক সুদ বাবদ আয়ে কর চাপানোর নিয়ম। আনা হোক স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি মুনাফার ব্যবস্থা। তার পরে সেই মতো আদায় হোক লাভকর।
স্টেট ব্যাঙ্কের রিপোর্ট জানিয়েছে, ২০২১-২২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ভারতের ব্যাঙ্কগুলিতে আমানত বেড়েছে ৬১ লক্ষ কোটি টাকা। উল্টো দিকে, একই সময়ে ঋণ বেড়েছে ৫৯ লক্ষ কোটি। ফলে আমানত এবং ঋণ বৃদ্ধির মধ্যে সামান্য এই ফারাককে সামঞ্জস্যহীন সমীকরণ হিসেবে তুলে ধরা প্রকৃতপক্ষে ‘পরিসংখ্যানগত ভ্রান্ত ধারণা’ বা স্ট্যাটিস্টিক্যাল মিথ। রিপোর্ট তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদদের দাবি, ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ সালে ঋণ বৃদ্ধির তুলনায় আমানত বৃদ্ধির হার কম ছিল ঠিকই। যে কারণে গত এক বছর ধরে ব্যাঙ্কিং শিল্পের বিভিন্ন মহলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে বাড়তে থাকা ঋণের চাহিদা মেটানো নিয়ে। এ জন্য গ্রাহকের আমানত টানতে বহু ব্যাঙ্ক সুদের হার বাড়িয়েছে। তবে অতীত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তাঁরা মনে করছেন, ওই ফারাক ২০২৫ সালের জুন থেকে অক্টোবরের মধ্যে মিটে যাবে। ওই সময়ের মধ্যে ঋণের চাহিদাও কিছুটা কমবে বলে তাঁদের ধারণা।