বকেয়া লাইসেন্স ফি ও স্পেকট্রাম ব্যবহারের চার্জ না-মেটানোয় টেলি শিল্প ও টেলিকম দফতর সুপ্রিম কোর্টের তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়েছিল শুক্রবার। সে দিন রাতে এয়ারটেল বকেয়ার একাংশ মেটানোর কথা জানালেও, প্রতিক্রিয়া দেয়নি ভোডাফোন
আইডিয়া। শনিবার তারাও জানাল, শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মেনে বকেয়ার কতটা তারা মেটাতে পারবে, তার মূল্যায়ন চলছে। কয়েক দিনের মধ্যে তা মেটানো হবে। এ দিন স্টেট ব্যাঙ্কের কর্ণধার রজনীশ কুমার জানিয়েছেন, কোনও সংস্থার ঝাঁপ বন্ধ হলে তার প্রভাব পড়বে ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রেও। সব মিলিয়ে দেশের টেলি শিল্পের ভবিষ্যৎ কোন পথে, তা নিয়েই জল্পনা তুঙ্গে।
এয়ারটেল বকেয়া মেটানোর জন্য আগে কিছু অর্থের সংস্থান করলেও, ভোডাফোন তা করেনি। বরং সরকারি সাহায্য না-পেলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন সংস্থার শীর্ষকর্তারা। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, ভোডাফোনের অবস্থাই সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। তাই তারা কী করবে, তা জানতেই সকলে আগ্রহী ছিলেন।
ভোডাফোনের বার্তা
• অবিলম্বে বকেয়া মেটানোর চিঠি দিয়েছে ডট
• সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মতো কয়েক দিনের মধ্যে কেন্দ্রকে বকেয়া মেটাবে সংস্থা
• আয়ের নতুন হিসেবের প্রেক্ষিতে তারা কতটা টাকা দিতে পারবে, তার মূল্যায়ন চলছে
• তবে সুপ্রিম কোর্ট তাদের আর্জিতে কতটা সাড়া দেয়, তার উপর নির্ভর করবে সংস্থার ভবিষ্যৎ
সংস্থার বকেয়া
• মোট ৫৩,০৪৮ কোটি টাকা
• এর মধ্যে লাইসেন্স ফি বাকি ২৮,৩০৯ কোটি টাকা
• ২৪,৭২৯ কোটি টাকা বাকি স্পেকট্রাম ব্যবহারের চার্জ বাবদ
আশঙ্কা এখনও
• ভোডাফোন আইডিয়া সত্যিই ঝাঁপ বন্ধ করলে তাদের গ্রাহক, ডিস্ট্রিবিউটর, রিটেলার, যন্ত্রাংশের জোগানদার, লগ্নিকারী ও ঋণদাতা ব্যাঙ্ক, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই অনিশ্চয়তার
মধ্যে পড়বে
• সেই অনিশ্চয়তা ছড়াবে পুরো টেলি শিল্পের মধ্যে
• ভোডাফোনের গ্রাহকদের ঠাঁই দেওয়ার উপযুক্ত পরিকাঠামো বাকি দুই বেসরকারি ও একটি সরকারি সংস্থার নেই
• সেই পরিকাঠামো গড়তে কয়েক বছর সময়
লাগতে পারে
• রিলায়্যান্স-জিয়ো বাদে অন্যদের ২জি প্রযুক্তি নির্ভর গ্রাহক রয়েছেন, যাঁদের সংখ্যা মোট গ্রাহকের প্রায় অর্ধেক ও তাঁরা সস্তার মোবাইল ব্যবহার করেন
• সংস্থাগুলির থেকে স্পেকট্রাম কেনার যে অর্থ কিস্তিতে কেন্দ্র পায়, কোনও সংস্থা বন্ধ হলে তা রাজকোষে আসা নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হবে
• দেনার দায়ে ন্যূব্জ শিল্পের সঙ্কট আরও বাড়লে, আসন্ন স্পেকট্রাম নিলামেই বা যোগ দেবে ক’টি সংস্থা
সিওএআইয়ের দাবি
• সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরেও টেলি শিল্পের সমস্যা মেটাতে কেন্দ্রের হাতে বিপুল ক্ষমতা ও উপায় রয়েছে
• সংস্থাগুলির আর্থিক
হাল ফেরাতে গ্রাহক
পিছু আয় ৩০০ টাকায় পৌঁছনো উচিত
স্টেট ব্যাঙ্ক বলছে
• টেলিকম সংস্থা নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করলে, ব্যাঙ্কগুলিকে তার মূল্য
দিতে হবে
• কোনও কর্পোরেট সংস্থার ঝাঁপ বন্ধ হলেই দেশের অর্থনীতিতে তার প্রভাব পড়ে
• সেটা যাতে না-হয়, তার চেষ্টা চালাতে হবে
এ দিন ভোডাফোন টাকা মেটানোর কথা বলেছে ঠিকই। তবে একই সঙ্গে পুরনো সুরে জানিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টে মামলাটির কী ফল হয়, তার উপরে নির্ভর করবে তারা দেশে পরিষেবা চালাতে পারবে কি না। যদিও শিল্পের একাংশের দাবি, আর্থিক সঙ্কটের জন্য এয়ারটেলও আগে এই কথা বলেছিল। তবে আপাতত ভোডাফোন বকেয়া কিছুটা দিলে সংস্থার পরিষেবা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা নেই বলে তাদের মত।
পুরো বিষয়টির উপর নজর রাখার কথা বললেও অবশ্য এ নিয়ে শনিবার মন্তব্য করতে চাননি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর শক্তিকান্ত দাস। শুধু বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে শীর্ষ ব্যাঙ্কের অভ্যন্তরে কথা হবে। তবে ইতিমধ্যেই এয়ারসেল ও রিলায়্যান্স কমিউনিকেশন্স দেউলিয়া ঘোষণা করায় তাদের ঋণ অনুৎপাদক সম্পদে পরিণত হয়েছে। এই অবস্থায় রজনীশ কুমার জানান, কোনও টেলি সংস্থা দেউলিয়া হলে, শুধু তার গ্রাহক, ভেন্ডর, কর্মীরাই ভোগেন, তা নয়। এর মূল্য চোকাতে হয় ব্যাঙ্কগুলিকেও।
শিল্প সূত্রের খবর, স্পেকট্রাম কেনার পরে সংস্থাগুলি ১৮ বছর ধরে কিস্তিতে অর্থ মেটায়। সম্প্রতি তাতে দু’বছরের জন্য ছাড় দেওয়ায় তা বেড়ে হয়েছে ২০ বছর। একাংশের প্রশ্ন, কোনও সংস্থা ঝাঁপ বন্ধ করলে বা দেউলিয়া হলে কেন্দ্রই বা কী ভাবে সেই টাকা পাবে? টেলি সংস্থাগুলির সংগঠন সিওএআইয়ের ডিজি রাজন ম্যাথুজ়ের অবশ্য মত, সমস্যা থেকে বেরনোর ক্ষমতা ও উপায় কেন্দ্রের রয়েছে। সঙ্কট কাটাতে মাসুল আরও বাড়ানোর সওয়ালও করেছেন তিনি।