প্রতীকী চিত্র।
গত বছর সংক্রমণ আর লকডাউনের আঘাতে তৈরি ক্ষত যখন সবে সারতে শুরু করেছে, তখনই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নতুন করে দেশের আর্থিক পরিস্থিতিকে আরও সঙ্কটের মুখে ঠেলে দিয়েছে। অর্থনীতিবিদদের একাংশের আশঙ্কা, চাহিদা এখনও যে রকম ঝিমিয়ে, তাতে অর্থনীতির দ্রুত ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন। তার উপরে বাজারে খাদ্যপণ্য-সহ বিভিন্ন জিনিসের আগুন দরের জেরে মাথা তোলা মূল্যবৃদ্ধির হারও বিক্রিবাটা বাড়ার পথে মস্ত কাঁটা। ফলে সরকারি ও প্রশাসনিক স্তরে নানা পদক্ষেপ করা হলেও, চলতি অর্থবর্ষে (স্বল্প মেয়াদে) বৃদ্ধির হার ৮ শতাংশের নীচেই থাকবে বলে মনে করছেন তাঁরা।
ভারতে অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রভাব নিয়ে এক আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল মার্চেন্ট চেম্বার। সেখানেই উঠে এসেছে আশঙ্কার এই ছবি। সভার সঞ্চালক, ইয়েস ব্যাঙ্কের প্রাক্তন মুখ্য অর্থনীতিবিদ সুভদ্রা রাওয়ের প্রশ্ন ছিল, স্বল্প মেয়াদে বৃদ্ধির হার কত দাঁড়াতে পারে? আইআইএম-কলকাতার অর্থনীতির অধ্যাপক পার্থপ্রতিম পাল, এনআইপিএফপি-র ডিরেক্টর পিনাকী চক্রবর্তী, বন্ধন ব্যাঙ্কের মুখ্য অর্থনীতিবিদ সিদ্ধার্থ সান্যাল, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের মুখ্য অর্থনীতিবিদ সৌগত ভট্টাচার্য, শ্রেয়ি ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফিানান্সের অন্যতম কর্তা ধ্রুব ভাল্লা— সকলেই একবাক্যে বলেছেন ৮ শতাংশের থেকে কম।
কোভিডের দ্বিতীয় ঝাপটা এবং অর্থনীতির ক্ষয়ক্ষতি দেখার পরে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের পাশাপাশি বহু উপদেষ্টা এবং মূল্যায়ন সংস্থাও হালে ভারতের বৃদ্ধির হার কমিয়েছে। কেউ বলেছে, ঘুরে দাঁড়ানোর গতি এখনও শ্লথ। কারও বার্তা, টিকাকরণে গতি না-আনলে বিপদ বাড়বে। কেউ তেলের মতো অত্যাবশ্যক পণ্যে কর কমিয়ে দাম সস্তা করতে বলেছে সরকারকে। যাতে বাকি সব কিছুর চাহিদা বাড়ে। অর্থনীতিবিদ পিনাকী মনে করিয়েছেন সরকারের ঋণে জড়ানোর ঝুঁকির কথা। যা এখনই জিডিপি-র প্রায় ৯০%। রাষ্ট্রায়ত্ত ক্ষেত্র ধরলে আরও বেশি বলে আশঙ্কা তাঁর।
পার্থপ্রতিমের মতে, ‘‘উন্নত দেশে চাহিদা মূল্যবৃদ্ধির হারকে টেনে তোলে। কিন্তু ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে তা বাড়ছে পণ্যের দামের জন্য। অথচ চাহিদা কমছে। ফলে লগ্নি বাড়ছে না। অর্থনীতির চাঙ্গা হতে যা জরুরি।’’ চাহিদা বাড়াতে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সামনে এখন সুদের হার কমানো সত্যিই কতটা সুযোগ আছে, সে ব্যাপারে সংশয় রয়েছে তাঁর। শীর্ষ ব্যাঙ্কের প্রতিবেদন উল্লেখ করে তিনি জানান, উৎপাদনমুখী শিল্প এবং পরিষেবা ক্ষেত্রে ঋণ বণ্টন প্রায় একই। উল্টে ব্যক্তিগত ধার বেড়েছে। তাঁর প্রশ্ন, অদূর ভবিষ্যতে এটাই আর্থিক ক্ষেত্রে সুনামি ডেকে আনবে না তো?
চাহিদা বৃদ্ধির পথে ঝুঁকির কথা বলতে গিয়ে সিদ্ধার্থের দাবি, ক্রেতার আস্থা সূচক ২০১৯-এর মার্চে যেখানে ছিল ১০৫, সেখানে গত বছর তা নামে ৬০-এ। এখন ৫৫-ই পেরোতে পারছে না। সব মিলিয়ে তাই চাহিদার পালে হাওয়া না-লাগলে সুড়ঙ্গের শেষে আলোর রেখাটা তেমন ভাবে চোখে পড়বে না বলেই বার্তা সকলের।