gold

gold: গয়নার চাহিদা কমায় চিন্তায় ছোট ব্যবসায়ী

স্বর্ণ শিল্প মহলের দাবি, প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম এত বাড়ছে যে সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ রোজগেরে মানুষেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২২ ০৭:৪৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

করোনার তিন তিনটি ঢেউ বছরভর সোনার গয়নার খুচরো বিক্রি কমিয়ে দিয়েছিল। অতিমারির প্রকোপ ফিকে হওয়ার পরে ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কায় ফের তলিয়ে গেল চাহিদা। পয়লা বৈশাখের বাজার নিয়ে তাই হতাশ প্রধানত ছোট-মাঝারি গয়না ব্যবসায়ীরা। অনেকেই বলছেন, ধনতেরসের মতো নববর্ষের মরসুমেও অল্প সোনা কিনে বছর শুরুর হিড়িক দেখা যেত আগে। গলি-ঘুঁজিতে ছোট-মাঝারি অনেক দোকান উপচে পড়ত ক্রেতাদের ভিড়ে। কিন্তু এ বার বেশিরভাগই মাছি তাড়াচ্ছে। কিছু বড় দোকান ব্যবসা করলেও, ছোটরা বসে আছে হা-পিত্যেশ করে।

Advertisement

স্বর্ণ শিল্প মহলের দাবি, প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম এত বাড়ছে যে সংসার চালাতেই হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ রোজগেরে মানুষেরা। সোনা কিনতে পা বাড়ানোর মতো সংস্থান অনেকেরই নেই। যাঁরা এখনও পারার মতো অবস্থায় আছেন, সাহস পাচ্ছেন না। তার উপরে মাত্র সপ্তাহ খানেকের মধ্যে পাকা সোনার দাম বেড়েছে ১০ গ্রাম পিছু ১৬৫০ টাকা। কলকাতায় বুধবার তা ছুঁয়ে ফেলেছে ৫৩,৭৫০ টাকা। জিএসটি যোগ করে যার অঙ্ক প্রায় ৫৫,৩৬৩ টাকা। ফলে কলকাতায় ১০ গ্রাম হলমার্ক গয়নার সোনাও (২২ ক্যারাট) পৌঁছেছে ৫১,৭৫০ টাকায়। জিএসটি ধরে প্রায় ৫৩,৩০৩ টাকা। গয়না কেনার খরচ ফের অনেকখানি বেড়েছে। অথচ আমজনতার এই অংশ পরিমাণে অল্প কিনলেও, পাড়ার ছোট-মাঝারি দোকানগুলির বিরাট ভরসা।

এর আগে ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর সময়ও লাগাতার বাড়তে দেখা গিয়েছিল দাম। যার কারণ, শেয়ার বাজার-সহ লগ্নির বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঝুঁকি এড়াতে লগ্নিকারীদের সোনার নিশ্চয়তায় ভরসা রাখার প্রবণতা। বিশেষজ্ঞদের মতে, অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা থাকলে সোনা দামি হওয়াই দস্তুর। তার উপরে আমদানির খরচ বেড়েছে টাকার সাপেক্ষে ডলারের দাম বাড়ায়।

Advertisement

বেলঘরিয়ার একটি ছোট সোনার দোকানের মালিক কৌশিক পোদ্দার জানান, “গত এক সপ্তাহে দিন দুয়েক খাতা খুলতে পেরেছিলাম। পয়লা বৈশাখ হালখাতার দিন যে ব্যবসা খুব খারাপ যাবে, সেটা বুঝতেই পারছি।” হলদিয়ার মাঝারি মাপের এক সোনার দোকানের মালিক মধুসূদন কুইলার গলাতেও শোনা গেল হতাশার সুর। তিনি বলছেন, “ব্যবসার প্রায় ৭০% উধাও হয়ে গিয়েছে।’’ তাঁর মতে, গত বছর পয়লা বৈশাখের দিন ডেলিভারি দেওয়ার জন্য আগাম বরাতই পেয়েছিলাম ৭০০ গ্রাম সোনার গয়নার। এ বার পেয়েছি মাত্র ২০০ গ্রামের। বাজারে সমস্ত প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে, সাধারণ মানুষ এখন গয়না কেনার মেজাজেই নেই।’’ স্বর্ণশিল্প বাঁচাও কমিটির কার্যকরী সভাপতি সমর দে-র অবশ্য আশা, ‘‘এখন বাজার নিস্তেজ ঠিকই। কিন্তু দাম ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। তাই আশা করছি, বিশেষ করে বিয়ের গয়না কিনে রাখতে অন্তত আজ-কাল খদ্দেরদের দেখা মিলবে।’’

বড় গয়না ব্যবসায়ীদের অবশ্য বিক্রি নিয়ে চিন্তা করম। পিসি চন্দ্র গোষ্ঠীর ডিরেক্টর উদয় চন্দ্র এবং সেনকো গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ডসের এমডি শুভঙ্কর সেন-এর দাবি, গত কয়েক দিন ক্রেতার সংখ্যা কিছুটা কমেছে ঠিকই। তবে অনেকে কাল আসবেন। নববর্ষে ভিড় বাড়বে। অঞ্জলি জুয়েলার্সের ডিরেক্টর অনর্ঘ উত্তীয় চৌধুরীরও আশা, অন্যান্য বারের মতো এ বারও পয়লা বৈশাখের বাজার ভালই যাবে। ডি বিয়ার্স ইন্ডিয়ার এমডি সচীন জৈন আবার বলছেন, কম বয়সি ক্রেতাদের মধ্যে হিরের গয়না কেনার ঝোঁক বাড়ছে।

তবে গয়নার চাহিদা কমায় মাথায় হাত পড়েছে কারিগরদের। বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদর টগর পোদ্দার বলেন, “বহু কারিগর অন্য কাজের খোঁজ করছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement