পসরা: সোনার চাহিদা প্রত্যাশিত নয়। তবে ধনতেরসে অন্যান্য ধাতু বিকিকিনির উৎসাহে ভাটা নেই। শুক্রবার সন্ধ্যায় আমহার্স্ট স্টিটের ফুটপাতে চলছে পুজোর বাসন কেনাকাটা। স্বাতী চক্রবর্তী
দিন গড়িয়ে সন্ধ্যে হল। আলোর রোশনাইয়ে সেজে উঠল সোনার দোকান। অন্যান্য বছরের মতো লক্ষ্মী পুজোর পরে গয়নার বিক্রিবাটা তেমন না বাড়ার দুঃখ ভুলে, পসরা সাজিয়ে বসলেন ব্যবসায়ীরা। এই আশায় যে, অন্তত ধনতেরসের দিন শেষ বেলায় ক্রেতার ভিড় বাড়বে। কিন্তু কোথায় কী! ক্রেতার অভাবে কার্যত অন্ধকারই ঘনাল গয়নার ছোট দোকানগুলিতে। সারা দিন অপেক্ষার পরে বিকেলের দিকে খদ্দেরের দেখা পেয়েছেন বড় ব্যবসায়ীরা। কিন্তু একটা ব্যাপারে সকলে একমত, গয়না কিনতে ধনতেরসের দিন সকাল থেকে অনেক দোকানের সামনে যে বিরাট লম্বা লাইন দেখা গিয়েছে আগের বছরও, তা অনেকটাই ছোট হয়েছে এ বার। কমেছে ভিড়। ধাক্কা খেয়েছে বিক্রিবাটা। ধনতেরসের পুরো মরসুমে বিক্রি এ বার চোখে পড়ার মতো কম হবে বলে মনে করছেন তাঁরা।
ধনতেরসকে অনেকে সমৃদ্ধির ত্রয়োদশী মানেন। কালীপুজোর আগে ত্রয়োদশী ছাড়বে আজ, শনিবার দুপুরে। ফলে বিক্রি ওই সময় পর্যন্ত চলার কথা। শুক্রবার দিনভর বৃষ্টি ছিল। শেষ বেলায় খদ্দের কম হওয়ার সেটাও কারণ বলে দাবি গয়না ব্যবসায়ীদের। যে কারণে অনেকের আশা, কাল বাড়ি থেকে বেরোতে না-পারা ক্রেতা আজ শো-রুমে অন্তত এক বার পা রাখবেনই।
তবে স্বর্ণ ব্যবসায়ী মহলের একাংশের মতে, একেই সোনার দাম আগের বছরের থেকে অনেকটা বেশি। তার উপরে মানুষ গয়না কেনেন হাতে থাকা নগদ টাকার একাংশ জরুরি খাতে খরচের পরে। তাঁদের অভিযোগ, সেই নগদেই টান পড়েছে। ফলে ইচ্ছে থাকলেও অনেকের সোনা কেনার সংস্থান নেই। সংবাদ সংস্থার খবর, ধনতেরসের দিন সমৃদ্ধি বৃদ্ধির উপায় হিসেবে অনেকেই এ বার রুপোর কয়েন এবং বাসন কেনার পথে হেঁটেছেন। বহু ব্যবসায়ী বলছেন, এ বছর গয়না বিক্রির পরিমাণ গত বারের থেকে প্রায় ৫০% কম হবে।
এ দিন জানবাজারে একটি কালীপুজোর উদ্বোধন করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দেশের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ। কর্মসংস্থানেও সঙ্কট চলছে। এই পরিস্থিতিতে ধনতেরসে আপনাদের ঘরে ঘরে লক্ষ্মী আসুক। সমৃদ্ধি আসুক। আপনাদের ব্যবসা ভাল হোক।’’
বনগাঁর নিউ সিন্হা জুয়েলার্সের মালিক বিনয় সিন্হা বলছেন, ‘‘বিকেল থেকে বিক্রি বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু গত বছর ধনতেরসের দিন দোকানের সামনে ক্রেতার লাইন পড়েছিল। এ বার তা নেই। গত বারের তুলনায় বিক্রিও ৪০-৫০ শতাংশ কমবে।’’
ব্যবসায়ীদের সংগঠন সিএআইটির গোল্ড অ্যান্ড জুয়েলারি কমিটির চেয়ারম্যান পঙ্কজ অরোরার দাবি, তিনি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন ধনতেরসের বিক্রিবাটা এ বছর কমেছে প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ। তাঁর সতর্কবার্তা, গোটা অর্থনীতির পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের।
পি সি চন্দ্র জুয়েলার্স কর্তৃপক্ষ ও বিসি সেন জুয়লার্সের ডিরেক্টর সুবীর সেন অবশ্য বলছেন, প্রথম সারির বড় শোরুমগুলি মোটামুটি ভাল ব্যবসা করেছে। বিক্রি প্রায় আগের বছরের মতোই। তবে তাঁদের দাবি, সাধারণ ভাবে বাজার ১০ থেকে ১৫% কমছে।