ফ্লিপকার্ট প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের, গ্রামীণ এবং শহুরে মহিলাদের স্ব-নির্ভর গোষ্ঠীতে কাজ করার সুযোগ বৃদ্ধির জন্য একাধিক রাজ্য সরকার এবং জীবিকা মিশনের সঙ্গে মৌ স্বাক্ষর করেছে।
চিত্রাঙ্গন পাল
সমাজের তথাকথিত পিছিয়ে পড়া এবং সুবিধা বঞ্চিত অংশের ক্ষমতায়নের জন্য ধারাবাহিকভাবে বিনিয়োগ করে চলেছে ফ্লিপকার্ট। বলা বাহুল্য, দেশের এই শ্রেণীর মানুষের জন্য সামগ্রিকভাবে নিজেকে উৎসর্গ করেছে তারা। ভারতের এই দেশীয় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মটি বছরের পর বছর ধরে বহু মানুষকে উপার্জনে সক্ষম করে চলেছে এবং সম্পূর্ণরূপে স্বনির্ভর হওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছে।
ফ্লিপকার্টের কথা কে না জানে? দেশের সমর্থ কারিগর ও ছোট ব্যবসাগুলির সব ধরনের পণ্য প্রদর্শনের জন্য এটি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম। ফ্লিপকার্ট প্রতিনিয়ত এই উদ্যোক্তাদের ই-কমার্স জগতে নিয়ে আসার চেষ্টা করেছে। আজ ফ্লিপকার্ট সমর্থ গোটা দেশে ১০ লক্ষেরও বেশি জীবিকাকে সমর্থন করে৷
সেই পথ ধরেই, ফ্লিপকার্ট প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের, গ্রামীণ এবং শহুরে মহিলাদের স্ব-নির্ভর গোষ্ঠীতে কাজ করার সুযোগ বৃদ্ধির জন্য একাধিক রাজ্য সরকার এবং জীবিকা মিশনের সঙ্গে মৌ স্বাক্ষর করেছে। ফ্লিপকার্টের এই প্রচেষ্টাগুলি স্থানীয় সম্প্রদায় এবং রাজ্য স্তরে বৃহত্তর স্বার্থ রক্ষার্থে একটি শক্তিতে রূপান্তরিত হয়েছে।
ফ্লিপকার্টে বিক্রেতাদের জন্য অক্ষমতা কোনও বাধা হতে পারে না
বেশিরভাগ মানুষের কাছে, যে কোনও অঙ্গহানি তাঁর জীবনে অত্যন্ত গুরুতর ক্ষতি। এক অপার হতাশার কারণ। তবে কলকাতার বাসিন্দা ৩৩ বছর বয়সী কোমল প্রসাদ পাল কিন্তু আর পাঁচ জনের মতো সাধারণ নন। এক জন মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে কাজ করার সময় তিনি একটি গুরুতর দুর্ঘটনার মুখোমুখি হন। তাঁর ডান হাত কেটে ফেলা হয়। সুস্থ হওয়ার সময়ে হাসপাতালেই কোমল নিজের বাম হাত ব্যবহার করে আঁকা শিখেছিলেন। প্রাথমিকভাবে এটি তাঁর একঘেয়েমি দূর করতে ও হতাশার বিরুদ্ধে লড়াই করতে সহায়তা করেছিল।
হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার পরে তিনি তাঁর মেডিকেল প্রতিনিধির কাজ করতে অসমর্থ ছিলেন। তাই তিনি নেবুলাইজার এবং ব্রেস্ট পাম্পের মতো বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করা শুরু করেন। বিক্রি ধীরগতিতে হচ্ছিল ঠিকই, কিন্তু কোমল ছিলেন দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, লক্ষ্যে অটল।
পরিবারের ভরণপোষণের চিন্তা থেকে সফলতার খোঁজে অক্লান্ত পরিশ্রম তাঁকে তাঁর পণ্য বিক্রি করার বিভিন্ন উপায় খুঁজতে বাধ্য করে। এক বন্ধুর মারফত তিনি ফ্লিপকার্টের মাধ্যমে অনলাইনে বিক্রি করার পরামর্শ পান। ফ্লিপকার্ট বিক্রেতা হাবে তার যথাযথ অধ্যবসায় সম্পন্ন করার পর কোমল ফ্লিপকার্টে নিজের নাম নিবন্ধিত করেছেন। কয়েকদিনের মধ্যেই সিলেকশন অ্যাকুইজিশন টিম তার সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং তাকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়। অত্যন্ত স্বল্প সময়ের মধ্যেই সমস্ত ডকুমেন্টেশন এবং অন্যান্য কাজ সম্পূর্ণ হয়ে যায়।
কোমলের ব্র্যান্ডের নাম ‘আলটিমেট হাইজিন’। এই নামেই তিনি তাঁর পণ্যগুলি বিক্রি করেন। কোমল এখন ফ্লিপকার্ট সমর্থ প্রোগ্রামের একটি অংশ। কোমলের জীবনেও নাটকীয়ভাবে এর প্রভাব পড়েছে। শুরু হয়েছিল একটি প্রোডাক্ট বিক্রি থেকে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত তার পরিমাণ বেড়েছে। বর্তমানে প্রতিদিন তিনি গড়ে ৫০টি প্রোডাক্ট বিক্রি করেন। তার ব্যবসা প্রায় ১০০ শতাংশ বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি বর্তমানে এক জন কর্মচারীকেও নিয়োগ করেছেন তিনি।
ফ্লিপকার্ট সমর্থের পৃষ্ঠপোষকতায় অনেক ছোট উদ্যোক্তাদের মধ্যে কোমল অন্যতম একজন।
সম্বলপুরি শাড়ির কথা
সম্বলপুরি শাড়ি ওড়িশার একটি বিখ্যাত হস্তশিল্প। এই চমৎকার পোশাকগুলির বুননে সাধারণত শঙ্খ, চক্র এবং ফুলের মোটিফ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। লাল, কালো এবং সাদা রঙের ব্যবহারের নেপথ্যে ওড়িয়া সংস্কৃতিতে গভীর প্রতীকী তাৎপর্য রয়েছে। সম্বলপুরি শাড়ির স্বতন্ত্রতা লুকিয়ে রয়েছে তার প্রথাগত বুনন শিল্প কৌশলের মধ্যেই। এর সুতোগুলি প্রথমে টাই-ডাইড করে তার পরেই একটি ফেব্রিকে বোনা হয়ে থাকে। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি শেষ করতে বেশ কয়েক সপ্তাহ সময় নেয়।
এই সৌন্দর্য ও ঐতিহ্য সত্ত্বেও সম্বলপুরি শাড়ির বিক্রি ও প্রাপ্যতা ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এই ঐতিহ্যবাহী হাতে বোনা শাড়ি সম্পর্কে খুব বেশি মানুষ পরিচিত ছিলেন না।
এই পরিস্থিতিতে ফ্লিপকার্টের সঙ্গে যুক্ত হন কটকের ২২ বছর বয়সী যুবক চিত্রাঙ্গন পাল। তাঁর জন্ম এক তাঁতি পরিবারে, যাঁরা কয়েক প্রজন্ম ধরে শাড়ি তৈরির কাজ করছে। তার পরিবার গত ৪০ বছর ধরে সম্বলপুরি শাড়ি বিক্রি করে। কিন্তু ক্লায়েন্ট সংখ্যা ছিল সীমিত। লাভও বেশি থাকত না।
এই বুননে ফ্লিপকার্ট একটি অন্য মাত্রা যোগ করে। চিত্রাঙ্গন পাল ২০১৯ সালে ফ্লিপকার্ট এক জন বিক্রেতা হিসেবে যোগ দেন। ফ্লিপকার্ট তাঁকে নকশার আধুনিকীকরণ থেকে শুরু করে বিক্রি বাড়ানো এবং সর্বোপরি প্রশংসনীয়ভাবে লাভের অঙ্ক বাড়াতে সাহায্য করেছে।
এই শাড়ির ক্রমবর্ধমান চাহিদা নিশ্চিত করতে বর্তমানে তার সম্প্রদায়ের ১০০০-রও বেশি তাঁতি এবং ২০০ ডিজাইনার একটি ভাল আয়ে মুখ দেখতে সক্ষম হয়েছে। তাঁদের দক্ষ এবং সুন্দর প্রচেষ্টার ফলস্বরুপ এই পণ্যটি এখন সমগ্র ভারত জুড়ে উপলব্ধ।
এই প্রসঙ্গে চিত্রাঙ্গন পাল জানাচ্ছেন, “ফ্লিপকার্টে বিক্রি করার অর্থ আমার লোকেদের মর্যাদার সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের জীবিকা অর্জনের পথকে সুদৃঢ় করা। এবং ভবিষ্যতের জন্য আরও বড় সুযোগ তৈরি করা।”