প্রতীকী ছবি।
লগ্নিকারীদের আশা ছিল, মূল্যবৃদ্ধির হার কিছুটা মাথা নামানোয় আমেরিকায় সুদের হার বৃদ্ধির গতি ঢিমে হবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা হল না। সে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ফেডারাল রিজ়ার্ভ সুদ বাড়াল আরও ৫০ বেসিস পয়েন্ট। সঙ্গে ইঙ্গিত, চড়া মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে লড়াইয়ের রাস্তায় আরও কয়েক দফা সুদ বৃদ্ধি বাকি। মূলত এই বার্তাই আমেরিকা-সহ বিভিন্ন দেশের শেয়ার বাজারকে টেনে নামিয়েছে। ধসের মুখে পড়েছে ভারতও। বৃহস্পতিবার সেনসেক্স নামে প্রায় ৮৭৯ (১.৪০%) পয়েন্ট। ৬১ হাজারের ঘরে ফিরে আসে। থিতু হয় ৬১,৭৯৯.০৩ অঙ্কে। ২৪৫.৪০ পড়ে ১৮,১৪৪.৯০-তে দাঁড়ায় নিফ্টিও। বেশ কিছুটা কমে যায় টাকার দাম। ২৭ পয়সা বেড়ে এক ডলার পৌঁছে যায় ৮২.৭৬ টাকায়।
আমেরিকায় সুদের হার বেড়ে হয়েছে ৪.২৫-৪.৫০ শতাংশ, ১৫ বছরে সর্বোচ্চ। বাজার বিশেষজ্ঞ আশিস নন্দী বলছেন, সেখানে যে ফের ৫০ বেসিস পয়েন্ট সুদ বাড়তে পারে, সেটা আঁচ করেছিলেন লগ্নিকারীরা। কিন্তু সামনের বছরও যে তা বাড়ানো হবে এবং অনুমানের থেকে বেশি হারে, এই বার্তায় লগ্নিকারীরা হতাশ। বিশেষত ফেড যেহেতু মনে করছে মূল্যবৃদ্ধি অত্যন্ত চড়া এবং তার সঙ্গে যুদ্ধ চলবে। তাই মন্দার আশঙ্কা সত্ত্বেও সুদ বাড়াচ্ছে। এ দিন ৫০ বেসিস পয়েন্ট করে সুদ বাড়িয়েছে ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক এবং ব্যাঙ্ক অব ইংল্যান্ড।
এর আগে মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে যুদ্ধ জারি থাকার বার্তা দিয়েছে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কও। এমনকি বিশ্ব বাজারে সুদ বাড়লে এ দেশের অর্থনীতির যে ঝুঁকি রয়েই যায়, সে কথাও বলেছে। ফলে আমেরিকায় সুদ বাড়তেই অনেকে হাতের শেয়ার বেচে মুনাফা তুলেছেন। বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি শেয়ার বেচেছে ৭১০.৭৪ কোটি টাকার। আশিসের কথায়, ‘‘আমেরিকায় মন্দার ইঙ্গিত বহাল। সমস্যা হল, মন্দা এলে গোটা বিশ্ব অর্থনীতি শ্লথ হবে। ভারতেও আছড়ে পড়বে ঢেউ। আমদানি, রফতানি, পণ্যের দাম, চড়া কাঁচামাল, জোগান— সর্বত্র সঙ্কট যুঝতে হবে। ধাক্কা খেতে পারে আর্থিক বৃদ্ধি। যে কারণে সূচক এ দিন ধসের মুখে পড়েছে। বিশেষত তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার শেয়ারগুলি। কারণ, তারা মূলত আমেরিকার উপরে নির্ভরশীল।
ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন সভাপতি কমল পারেখ বলছেন, আর্থিক সঙ্কট আটকানো না গেলে কর্পোরেট সংস্থগুলি লোকসান করতে শুরু করবে। তবে তাঁর বার্তা, ‘‘ভারতের উঁচু বাজারে এই সংশোধন দরকার ছিল। এক ঝটকায় সংশোধন ভাল নয় ঠিকই। কিন্তু ধীরে ধীরে সেনসেক্স, নিফ্টি অন্তত ১৫% পড়লে নতুন করে লগ্নির পথ তৈরি হবে।’’ আর্থিক বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দত্তের মতে, আগামী দিনে ভারতের শেয়ার বাজার চাঙ্গা থাকারই ইঙ্গিত রয়েছে। খোদ আইএমএফ বলছে, এ দেশ লগ্নির উজ্জ্বল বিন্দু। তার উপর রাশিয়া থেকে কম দামে তেল মিলছে। যা দেশের নাগরিকদের তেলের খরচ কমানোর পথ করে দেবে। সূচক অস্থির ওঠানামা করলেও, তার ঘুরে দাঁড়াতে সময় লাগবে না।