প্রতীকী ছবি।
অনিশ্চয়তা একটু প্রকট হলে বাজারে কি প্রতিক্রিয়া হতে পারে, তার আঁচ পাওয়া গিয়েছে গত সোমবার। ভাইরাসের এক নতুন অবতার এসেছে ব্রিটেনে, যা ৭০% বেশি সংক্রামক হতে পারে— এই খবরে ধস নামে বিশ্ব বাজারে। সেনসেক্স রেকর্ড উচ্চতা ছোঁয়ার পরে খবরটি ভারতের বাজারে ছড়াতেই এক ঝটকায় সূচকটি খুইয়ে বসে ১৭০০ পয়েন্ট। শেষে ১৪০৭ পয়েন্ট হারিয়ে থামে ৪৫,৫৫৪ অঙ্কে। মাত্র কয়েক ঘণ্টায় ৬.৫৯ লক্ষ কোটি টাকা উধাও হয়ে যায় লগ্নিকারীদের খাতা থেকে। তবে ২০২০ সালের এই অষ্টম বৃহত্তম পতনও (৩%) বাকিগুলির মতো স্থায়ী হয়নি।
সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি থাকলেও নতুন রূপে এই ভাইরাস তেমন মারাত্মক না-ও হতে পারে এবং যে সব টিকা বাজারে আসছে তাদের দ্বারাই এর নিধন সম্ভব, এই খবরে পরের দিনই ঘুরে দাঁড়ায় সূচক। বাড়তি শক্তি জোগায় আমেরিকায় ৯০,০০০ কোটি ডলারের নতুন আর্থিক ত্রাণ। ফলে মঙ্গল থেকে বৃহস্পতি, মাত্র তিন দিনে সেনসেক্স ওঠে ১৪১৯ পয়েন্ট। একই সপ্তাহে একটি বড় পতনের পরে সমান মাপের উত্থান প্রমাণ করে, বাজারে অর্থের জোগান এবং চাহিদার ঘাটতি নেই। বাড়ছে লগ্নিকারীদের ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতাও।
করোনাজনিত যাবতীয় অনিশ্চয়তা, আতঙ্ক ও আশঙ্কাকে তোয়াক্কা করেনি চলতি বছরে বিভিন্ন সংস্থার বাজারে প্রথম ছাড়া শেয়ারগুলিও (আইপিও)। বরং বলা যায় লগ্নিকারীরা যেন সোনার খনির সন্ধান পেয়েছেন আইপিও বাজারে। এখনও পর্যন্ত ১৬টি নতুন ইসু (বাজারে কোনও সংস্থার প্রথম বার আসা শেয়ার) বাজার থেকে তুলেছে ৩১,০০০ কোটি টাকা। যেখানে ২০১৯ সালে ১৭টি ইসু মারফত উঠেছিল ১৭,৪৩৩ কোটি টাকা। শুধু সংগ্রহের আকারেই নয়, নথিভুক্তির দিনে মুনাফা দেওয়ার ক্ষেত্রেও ২০২০ পিছনে ফেলেছে আগের ১০ বছরের পরিসংখ্যানকে।
৬০ টাকায় ইসু বার্গার কিং বাজারে নথিভুক্তির (লিস্টিং) দিন হাতবদল হয়েছে প্রায় ১৩১ টাকায়। অর্থাৎ প্রথম দিনেই লাভ প্রায় ১৭০%। এখন দাম প্রায় ১৯০ টাকা। অর্থাৎ ইসুর দামের তুলনায় বেড়েছে প্রায় ২১৭%। লিস্টিং-এর দিন ২৩১% লাভ দিয়েছে রুট মোবাইল। হ্যাপিয়েস্ট মাইন্ডস দিয়েছে ১০৬%। ২৮৮ টাকায় ইসু মিসেস বেক্টর্স লিস্টিং হয়েছে ৫০০ টাকায়। শেয়ার কেনার আবেদন জমা পড়েছিল ১৯৮ গুণ। ১৬৬ গুণ আবেদন আসে বার্গার কিং-এর জন্য। সব মিলিয়ে লগ্নিকারীরা মোটা লাভের সন্ধান পেয়েছেন কিছু নতুন ইসু থেকে।
২০২০ সালকে হয়তো বেশির ভাগ মানুষই দ্রুত ভুলে যেতে চাইবেন। কিন্তু লগ্নিকারীর স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করবে করোনার বছর। যে বছর একের পর এক নজির গড়ে এগিয়েছে শেয়ার বাজার। ২৩ মার্চ ১৩.১৫% নেমে ২৫,৯৮১-তে ঠেকা সেনসেক্স পরের ৯ মাসে ২১,০০০ পয়েন্ট বেড়ে স্পর্শ করেছে ৪৭,০০০-এর মাইলফলক। বিপুল রিটার্নের খুশি ছড়িয়েছে মিউচুয়াল ফান্ডের বাজারেও।
তবে চাপে স্থির আয় প্রকল্পগুলির লগ্নিকারীরা। কারণ, এই অর্থবর্ষে শীর্ষ ব্যাঙ্ক ১১৫ বেসিস পয়েন্ট সুদ কমানোর ফলে ব্যাঙ্কের জমা প্রকল্পগুলিতেও সুদের হার কমেছে অনেকটা।
(মতামত ব্যক্তিগত)