গত সপ্তাহের বড় খবর হল এ বারের বর্ষা সম্পর্কে পূর্বাভাস। জুন থেকে সেপ্টেম্বরে ভারত স্বাভাবিকের কাছাকাছি বর্ষা পাবে বলে তাদের প্রথম পূর্বাভাসে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। তাদের হিসেব অনুযায়ী, এ বারের বৃষ্টিপাত হবে দীর্ঘমেয়াদি। গড় বর্ষার কমবেশি ৯৬% পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে। ভারতীয় অর্থনীতি ও শেয়ার বাজারের কাছে এই তথ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাজার সম্পর্কে আর একটি ভাল খবর হল, দেশের ভিতরে ইকুইটিতে লগ্নি বৃদ্ধি এবং বিদেশি লগ্নির উপর নির্ভরতা কিছুটা হলেও কমে আসা।
গোটা দেশে পর্যাপ্ত বর্ষা হলে খাদ্যশস্য উৎপাদন ভাল হবে। খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে। গ্রামের মানুষের হাতে টাকা আসবে। ফলে চাহিদা থাকবে শিল্পে উৎপাদিত পণ্যের। জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকলে সুদ কমারও সম্ভাবনা তৈরি হবে। কৃষি ও শিল্পোৎপাদন ভাল হলে তার অনুকূল প্রভাব থাকবে জাতীয় উৎপাদনে। অর্থাৎ ভাল বর্ষা ভারতের মতো দেশের কাছে বড় আশীর্বাদ। আকাশ সদয় থাকলে ধরা যায়, শেয়ার বাজারও চাঙ্গা থাকবে। আরও লগ্নি আসবে মিউচুয়াল ফান্ডের হাত ধরে।
দেশের অভ্যন্তরে শেয়ারে লগ্নি বেশ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। যার অর্থ বিদেশি লগ্নির উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমার মুখ নেওয়া। বেশ কয়েক মাস ধরে বাজার চাঙ্গা থাকায় শেয়ারের প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ছে, দেশি আর্থিক সংস্থা ছাড়াও মোটা লগ্নি আসছে পেনশন প্রকল্প এনপিএস এবং মিউচুয়াল ফান্ডে এসআইপি-র হাত ধরে। বাজারে মোটা টাকা ঢুকছে প্রভিডেন্ট ফান্ড তহবিল থেকেও।
পিএফ থেকে বছরে কমবেশি ১০,০০০ কোটি টাকার লগ্নি আসছে ইকুইটিতে। ২০১৬-’১৭ অর্থবর্ষে এসআইপি-র মাধ্যমে এসেছে প্রায় ৪৪ হাজার কোটি। এই পথে এখন মাসে জমা পড়ছে ৪৫০০ কোটি টাকা। বিভিন্ন সূত্রে এতটা লগ্নি নিয়মিত আসতে থাকায় বিদেশি লগ্নির প্রতি বাজারের নির্ভরতা কমছে। বাজারের পক্ষে এটা ভাল।
সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ মাসে বিদেশি লগ্নির অঙ্ক যেখানে ছিল ১,২৬০ কোটি ডলার, সেখানে দেশের লগ্নিকারীরা ইক্যুইটিতে লগ্নি করেছেন ২,৪০০ কোটি। এই কারণেই মার্কিন শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারেল রিজার্ভ সুদ বাড়ালেও তার তেমন কোনও বড় প্রভাব পড়ছে না ভারতীয় বাজারে। বরং সূচক চাঙ্গা থাকায় বিদেশি লগ্নিকারীরা গুরুত্বই দিচ্ছে এ দেশের বাজারকে। ভারতীয় ইকুইটির প্রতি আগ্রহের এই স্রোত নোট বাতিলের প্রতিকূল প্রভাব সত্ত্বেও বাজারকে তেমন নামতে দেয়নি।
মার্কিন মুলুকে গিয়ে অরুণ জেটলির দাবি, ২০১৭-’১৮ অর্থবর্ষে বৃদ্ধির হার ছুঁতে পারে ৭.৫%। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়াবে না রাজকোষে ঘাটতি, নিয়ন্ত্রণে থাকবে চলতি খাতে ঘাটতি, গতি বাড়বে আর্থিক সংস্কারের এবং জিএসটি চালু হবে কয়েক মাসের মধ্যেই। এ সবের পাশাপাশি ভারত যদি পর্যাপ্ত বর্ষা পায়, তা হলে ইকুইটির বাজার যে-আরও উপরে যাবে, সে নিয়ে আশাবাদী বহু লগ্নিকারী।
শুরু হয়ে গিয়েছে চতুর্থ ত্রৈমাসিক তথা বার্ষিক আর্থিক ফল প্রকাশের পালা। প্রথা অনুযায়ী, মরসুমের শুরুতেই ফল নিয়ে হাজির হয়েছে ইনফোসিস এবং টিসিএসের মতো বড় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা। এদের ফল অবশ্য বাজারের পছন্দ হয়নি। ট্রাম্পের ভিসা-নীতি চাপে রেখেছে এই সব সংস্থাকে। পাশাপাশি, ফল প্রকাশ করেছে কয়েকটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক। উন্নতি দেখা গিয়েছে এদের ফলাফলেও। মে মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত চলবে ফলাফল ঘোষণা। বাজারে কিছুটা ওঠানামা চলবে এই ফলাফলের কারণেও। সঙ্গের সারণিতে দেওয়া হল সদ্য প্রকাশিত কিছু আর্থিক ফল।
আগামী সপ্তাহে অবশ্য বিশ্ব বাজারের হাত ধরে ভারতকে প্রভাবিত করবে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম রাউন্ডের ফল এবং ব্রেক্সিট-এর নীতি নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ সম্মেলন। পাশাপাশি, জুন মাসেই রয়েছে ব্রিটেনে ভোট। সব মিলিয়ে বিশ্ব বাজারের প্রভাব দালাল স্ট্রিট এড়াতে পারবে না বলেই ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
এ দিকে, মূলধনী বাজারে কালো টাকার অনুপ্রবেশ রুখতে আরও কড়া হচ্ছে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড অব ইন্ডিয়া (সেবি)। সেই কারণেই পার্টিসিপেটরি নোট বা পি-নোট মারফত লগ্নির উপর নজর রাখছে তারা। উল্লেখ্য, পি-নোটের মাধ্যমে ভারতের বাজারে লগ্নির জন্য অ্যাকাউন্ট খুলে থাকে বিভিন্ন বিদেশি লগ্নিকারী আর্থিক সংস্থা। এই ব্যবস্থায় কালো টাকা বা সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের টাকা এ দেশে ঢুকে পড়ার সুযোগ থেকে যায় বলেই আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। সেই কারণেই বাজার নিয়ন্ত্রক সেবি এ নিয়ে নজরদারি বা়ড়াতে চায়। সেবি-র নতুন চেয়ারম্যান অজয় ত্যাগীর নেতৃত্বে বুধবারই বসছে পরিচালন পর্ষদের বৈঠক। সেখানেই এই সব বিষয় নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা।
দিন কতক হল ঘুম ভেঙেছে কুম্ভকর্ণের। অনেক দিন ১,২০০ টাকার আশপাশে ঝিমিয়ে থাকার পরে রিলায়্যান্স জিও-র আগমন এবং তেল উৎপাদন ও পরিশোধন খাতে মুনাফা কিছুটা বাড়ায় এক সময়ের ‘মার্কেট লিডার’ রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ার দর চলে এসেছে ১৪০০ টাকার আশপাশে। এতে খুশি লগ্নিকারীরা। এখন সকলের নজর রিলায়্যান্স-এর আর্থিক ফলাফলের উপর।