অর্থনীতির ঝিমুনি সত্ত্বেও উঠছে বাজার, শেয়ার নির্ভর ফান্ডে কিছুটা সতর্ক লগ্নি 

দেশের অর্থনীতিতে ঘোর হতাশা। নাগাড়ে আসছে খারাপ খবর। অথচ শেয়ার বাজার উঠেই চলেছে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় ঘটে চলা বিভিন্ন খবরে ভর করে।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:১৬
Share:

ছবি: সংগৃহীত

দেশের অর্থনীতিতে ঘোর হতাশা। নাগাড়ে আসছে খারাপ খবর। অথচ শেয়ার বাজার উঠেই চলেছে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় ঘটে চলা বিভিন্ন খবরে ভর করে। ফলে ফের প্রমাণিত, সূচকের ওঠানামায় সব সময় দেশের আর্থিক স্বাস্থ্যের প্রতিফলন হয় না। বরং সতর্ক পা ফেলতে দেখা যাচ্ছে মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নিকারীদের।

Advertisement

এসআইপির (সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান) পথ বেয়ে নভেম্বরে ফান্ডে রেকর্ড লগ্নি এসেছে ঠিকই। কিন্তু তা কমেছে ইকুইটি (শেয়ার নির্ভর) ফান্ডে। অগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে যার অঙ্ক ছিল যথাক্রমে ৯১৫২ কোটি, ৬৬০৯ কোটি এবং ৬০২৬ কোটি টাকা, নভেম্বরে তা-ই নেমে দাঁড়িয়েছে ১৩১২ কোটিতে। অথচ ফান্ডে মোট লগ্নি ছুঁয়েছে ৮২৭৩ কোটি। এই নিয়ে টানা ১২ মাস ৮০০ কোটি বা তার বেশি পুঁজি এল এসআইপি মারফত। শেয়ার ভিত্তিক ফান্ডে লগ্নি এতটা কমে যাওয়া বাজারের পক্ষে ভাল খবর নয়। বিশেষত ফান্ডে মোট সম্পদের পরিমাণ যখন অনেকখানি বেড়েছে।

সবাইকে অবাক করে শুক্রবার সেনসেক্স ৪২৮ পয়েন্ট উঠে ফের ৪১ হাজারের গণ্ডি পেরিয়েছে। ১১০ পয়েন্ট বেড়ে নিফ্‌টিও আবার ছাড়িয়েছে ১২ হাজারের মাইলফলক। দেশীয় অর্থনীতিতে তিনটি অত্যন্ত প্রতিকূল খবর পাওয়া সত্ত্বেও। খোদ সরকারি পরিসংখ্যানেই প্রকাশ, নভেম্বরে খুচরো মূল্যবৃদ্ধি আরও মাথা তুলে তিন বছরে সর্বাধিক হয়েছে। অক্টোবরে শিল্পোৎপাদন আগের দু’মাসের মতোই কমেছে। নভেম্বরে রফতানি নেমেছে ০.৩৪%। তারও পতন বহাল টানা চার মাস ধরে। অর্থনীতির আরও নেতিয়ে পড়ার এই সব ইঙ্গিত উপেক্ষা করে সেনসেক্সের উত্থান কিছুটা অস্বস্তি জাগাচ্ছে। কারণ, এতে ভয় থাকে আচমকা বাজারের হুড়মুড়িয়ে পড়ার। গত সপ্তাহে সেনসেক্স উঠেছে মোট ৫৬৫ পয়েন্ট।

Advertisement

দুই সূচকের এ হেন আচরণের কারণ খুঁজতে গিয়ে যা পাওয়া যাচ্ছে:

• চিন-মার্কিন প্রাথমিক বাণিজ্য চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত হওয়ার খবরে বিশ্ব বাজারে ছড়িয়ে পড়া নিশ্চিন্তি প্রভাব ফেলেছে ভারতে। ওই দুই দেশের শুল্ক-সন্ধি হলে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় চাহিদা বাড়বে। গতি পাবে বৃদ্ধি। বাড়বে বাণিজ্য।

• ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে বরিস জনসনের নিরঙ্কুশ সংখ্যা গরিষ্ঠতা দূর করেছে ব্রেক্সিট (ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে যাওয়া) সংক্রান্ত নানা অনিশ্চয়তা।

অর্থনীতি যে চূড়ান্ত দুর্দশার কবলে তা এতদিন অস্বীকার করলেও অবশেষে কিছুটা নড়ে বসেছে সরকার। পরিস্থিতি পর্যালোচনায় অর্থ মন্ত্রকের সঙ্গে বৈঠক ডাকা হয়েছে ২১ ডিসেম্বর। থাকবেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। আলোচনার কেন্দ্রে থাকবে মূলত দু’টি বিষয়, মাথাচাড়া দেওয়া মূল্যবৃদ্ধি এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে কমে যাওয়া চাহিদা ও উৎপাদন। আগামী বাজেটে কোন কোন বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হবে, তা নিয়েও কথা হতে পারে। বাজার এখন অপেক্ষায়, চলতি অর্থবর্ষে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আরও কোনও ত্রাণ ঘোষণা করা হয় কিনা।

১৮ ডিসেম্বর বৈঠকে বসছে জিএসটি পরিষদও। কর আদায় বাড়ানোর পথ খুঁজতে। জিএসটি-র কর কাঠামোয় পরিবর্তনও বিবেচিত হতে পারে। সত্যিই সেটা হলে, কিছু পণ্যে বাড়তে পারে জিএসটির হার। সে ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধির আরও চড়ার আশঙ্কা রয়েই যাচ্ছে।

(মতামত ব্যক্তিগত)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement