গত সপ্তাহে টানা পতনের পরে সোমবার হঠাৎই চাঙ্গা হয়ে উঠল শেয়ার বাজার। এ দিন সেনসেক্স এক লাফে বেড়ে গিয়েছে ৫১৭.২২ পয়েন্ট। বাজার বন্ধের সময়ে সূচক এসে দাঁড়ায় ২৭৯৭৫.৮৬ অঙ্কে। অন্য দিকে এ দিন পড়েছে টাকার দাম। ডলারের সাপেক্ষে ২৬ পয়সা পড়ার ফলে বিদেশি মুদ্রা লেনদেনের বাজার বন্ধের সময়ে প্রতি ডলারের দাম দাঁড়ায় ৬২.৬৭ টাকা।
কার্যত বর্তমানে শেয়ার বাজারে চলছে চূড়ান্ত অনিশ্চয়তা। গত বৃহস্পতিবারই সেনসেক্সের পতন হয়েছিল ৬৫৪ পয়েন্ট। শুক্রবার প্রায় একই জায়গায় দাঁড়িয়েছিল সূচক। তার পরই সোমবার এই উত্থান।
এই দিনের উত্থান মূলত লগ্নিকারীদের মধ্যে পড়তি বাজরে শেয়ার কেনার হিড়িকেই হয়েছে বলে মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। গত সপ্তাহে শেযার বাজার টানা পড়ার ফলে বহু শেয়ারের দামই কমে এসেছে। সেই সুযোগটাই লগ্নিকারীরা গ্রহণ করেছেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এই ধরনের অনিশ্চিত বাজারে এটাই স্বাভাবিক বলে মত বিশেষজ্ঞদের। কারণ, অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তি বাজারে শেয়ার কিনে দাম সমান্য উঠলেই তা বিক্রি করে মুনাফার টাকা তুলে নেওার প্রবণতা দেখা য়ায়। কারণ, এই সময়ে লগ্নিকারীরা বেশি দিন শেয়ার ধরে রাখতে ভরসা পান না। পাশাপাশি, পড়তি বাজারে লগ্নির সুযোগও হাতছাড়া করতে চান না তাঁরা। এর সঙ্গেই যোগ হয় বিশ্ব বাজারের প্রভাব।
এই দ্রুত উত্থান-পতনের কারণ কী?
এ প্রসঙ্গে প্রবীণ শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞ অজিত দে বলেন, ‘‘বিশ্বায়নের যুগে নিজের দেশে কী ঘটল, শুধু তার উপরই শেয়ার বাজারের গতিপ্রকৃতি নির্ভর করে না। অন্য দেশের ঘটনাও সমান ভাবে প্রভাবিত করে শেয়ার বাজারকে। যেমন, এ বার ইয়েমেনে সৌদি আরবের বিমান হানার জন্য তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার ঘটনা বিরূপ প্রভাব ফেলেছে ভারতের শেয়ার বাজারে।’’ প্রসঙ্গত, সৌদি আরব ইয়েমেনের সরকার পক্ষের হয়ে লড়াইয়ে সে দেশের উপর বিমান হানা শুরু করে। ইয়েমেনে ইরানের সমর্থনপুষ্ট হুথি বিদ্রোহীদের শায়েস্তা করতেই এই বিমান হানা বলে জানিয়ে দিয়েছে সৌদি আরব।
এই মুহূর্তে বিশেষজ্ঞরা কিন্তু ভারতের আর্থিক হাল নিয়েও তেমন আশাবাদী নন। অজিতবাবুর মতো বাজার বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, চলতি ২০১৪-’১৫ আর্থিক বছরের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে বিভিন্ন সংস্থার আর্থিক ফলাফল আশানুরূপ না-ও হতে পারে। তার উপর এ বার বর্ষা কেমন হবে, সংশয় রয়েছে তা নিয়েও।
এই সবের বিরূপ প্রভাব শেয়ার বাজারের উপর পড়তে বাধ্য বলে মনে করছেন ওই সব বিশেষজ্ঞ। অজিতবাবু বলেন, ‘‘আমার ধারণা, নতুন আর্থিক বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের আগে বাজারের হাল ফেরার সম্ভাবনা কম।’’
সে ক্ষেত্রে যাঁরাই শেয়ারে লগ্নি করুন, কমপক্ষে এক বছরের মেয়াদে তাঁদের বিনিয়োগ করা উচিত বলে মন্তব্য করেন অজিতবাবু। তবে ভারতের শেয়ার বাজার নিয়ে হতাশ হওয়ার কোনও কারণ আছে বলে অবশ্য মনে করেন না তিনি। অজিতবাবু বলেন, ‘‘এত অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও সেনসেক্স ২৭ থেকে ২৮ হাজারের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে, যেটা খুবই আশার কথা।’’
এ দিকে এই দিন ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে যে, এখন থেকে মোট আর্থিক সংস্থানের ৫০ শতাংশই অনুৎপাদক ঋণ খাতে বরাদ্দ করতে পারবে ব্যাঙ্কগুলি। ব্যাঙ্কের অনুৎপাদক সম্পদের বোঝা কমানোর উদ্দেশ্যেই এই নতুন ব্যবস্থা। আগামী দিনে যার ইতিবাচক প্রভাব ব্যাঙ্কের শেয়ারের উপর পড়তে পারে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের অনেকেরই।