করোনার নতুন স্ট্রেন ওমিক্রন চিহ্নিত হওয়ার পরে বড় ধাক্কা খেয়েছিল বিশ্ব বাজার। ভারতের বাজারে প্রথম সেই ধাক্কা লাগে গত ২৬ নভেম্বর। ওই দিন সেনসেক্স ১৬৮৮ পয়েন্ট নেমে থামে ৫৭,১০৭ অঙ্কে। নিফ্টির পতন হয় ৫১০। তবে সেই পতন দীর্ঘায়িত হয়নি। অর্থনীতির দিক থেকে পরপর ভাল খবর আসতে শুরু করায় গত সোম, বুধ এবং বৃহস্পতিবার সেনসেক্স ওঠে যথাক্রমে ১৫৩, ৬২০ এবং ৭৭৭ পয়েন্ট। এর পরেই আসে নতুন ধাক্কা। জানা যায়, ভারতেও চিহ্নিত হয়েছে ওমিক্রনের অস্তিত্ব। এর জেরে শুক্রবার সেনসেক্স ফের নামে ৭৬৫ পয়েন্ট। নিফ্টি খোয়ায় ২০৫ অঙ্ক।
বোঝাই যাচ্ছে ওমিক্রনকে ঘিরে লগ্নিকারীদের দুশ্চিন্তা আপাতত কমার নয়। আশঙ্কা, এই স্ট্রেনের প্রভাবে অতি দ্রুত বাড়তে পারে সংক্রমণ। ঠিক সেই কারণে বিভিন্ন ধরনের বিধিনিষেধের প্রয়োগ শুরু হয়েছে বিমান এবং যাত্রী পরিবহণে। ১৫ ডিসেম্বর ভারত থেকে আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল শুরু হওয়ার যে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তা আপাতত স্থগিত রাখা হচ্ছে। উল্টো দিকে আশার বিষয় হল, অধিক সংক্রমণের আশঙ্কা থাকলেও এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বিজ্ঞানীদের অনুমান, এই প্রজাতির মারণ-ক্ষমতা আগেরগুলির তুলনায় কম। সংক্রমণ যদি মৃদু থেকে মাঝারি হয় এবং হাসপাতাল, অক্সিজেন, ভেন্টিলেটর ইত্যাদির প্রয়োজন কম পড়ে, তবে অর্থনীতির ইতিবাচক খবরের ভিত্তিতে বাজার আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারে। কী সেই খবর?
• গত জুলাই-সেপ্টেম্বরে জিডিপি বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ৮.৪%।
• অক্টোবরে দেশের আটটি প্রধান শিল্প বেড়েছে ৭.৫% হারে। এক বছর আগে যা সঙ্কুচিত হয়েছিল।
• নভেম্বরে জিএসটি বাবদ সরকারের রাজকোষে জমা পড়েছে ১.৩১ লক্ষ কোটি টাকা। যা এই পরোক্ষ করটি চালু হওয়ার পর থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম।
• নভেম্বরে শিল্পোৎপাদন সূচক (আইএইচএস মার্কিটের পিএমআই সূচক) অক্টোবরের থেকে বেড়ে পৌঁছেছে ৫৭.৬ পয়েন্টে। ১০ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি।
• পরিষেবা সূচকও অক্টোবরের তুলনায় নামমাত্র কমে হয়েছে ৫৮.১।
• এপ্রিল থেকে অক্টোবর রাজকোষ ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫.৫ লক্ষ কোটি টাকা। চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
• নভেম্বরে রফতানি ২৬.৪৯% বেড়ে হয়েছে ২৯৮৮ কোটি ডলার। আমদানিও ৫৭.১৮% বৃদ্ধি পাওয়ায় বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ২৩২৭ কোটি ডলার। বাণিজ্যিক কার্যকলাপ যে দ্রুত বাড়ছে তা এই পরিসংখ্যানে স্পষ্ট।
সব মিলিয়ে দেশের অর্থনীতি এখন যে পথে এগোচ্ছে, তাতে ওমিক্রনজনিত সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে তা বাজারকে যথেষ্ট শক্তি জোগাবে বলেই মনে হয়। তবে এর পাশাপাশি কয়েকটি উদ্বেগের খবরও রয়েছে। তার মধ্যে একটি হল সারা বিশ্বে মূল্যবৃদ্ধির মাথাচাড়া দেওয়া। এই পরিস্থিতি বজায় থাকলে কিন্তু সুদের হার বাড়তে পারে। ভারতে ইতিমধ্যেই বন্ডের ইল্ড বেড়ে ৬.৩৬ শতাংশে পৌঁছেছে। ব্যাঙ্ক নয় এমন দু’টি বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে তাদের আমানত প্রকল্পে ৩০ বেসিস পয়েন্ট করে সুদ বাড়িয়েছে। বাজারের আরও একটি আশঙ্কা রয়েছে। সেটি হল আমেরিকার শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডেরাল রিজ়ার্ভ বন্ড কিনে বাজারে নগদ জোগানোর প্রকল্প ধীরে ধীরে গোটাতে পারে। আগামী ১৪-১৫ ডিসেম্বরের বৈঠকে তারা কী সিদ্ধান্ত নেয়, সে দিকেই এখন তাকিয়ে রয়েছে সংশ্লিষ্ট মহল।
(মতামত ব্যক্তিগত)