করোনার আতঙ্কে গত সপ্তাহের শেষ চার দিনে সেনসেক্স নেমেছে প্রায় ২০০০ (১৯৬১) পয়েন্ট। প্রতীকী ছবি।
আবার যেন নতুন করে ফিরে এসেছে ২০২০-র মার্চের দুঃস্বপ্ন। বিশ্ব জুড়ে আতঙ্ক। ধস শেয়ার বাজারে। লগ্নিকারীদের কপালে ভাঁজ। চিন-সহ বিভিন্ন দেশে ছড়াচ্ছে কোভিড সংক্রমণ। যদিও বাস্তবে পরিস্থিতি ততটা দিশাহারা হওয়ার মতো নয়। সংক্রমণের বিস্ফোরণে চিনের সমস্যা গভীর ঠিকই। অন্যান্য কিছু দেশেও কোভিড বাড়ছে। তবে ভারতে তেমন খারাপ কিছু হবে না বলেই আশা। অতিমারির মোকাবিলায় দেশ আগের থেকে অনেক বেশি তৈরি। সংক্রমণের একের পর এক ঢেউ সামলে কিছুটা দক্ষ পরিকাঠামো, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। প্রস্তুত ডাক্তার এবং স্বাস্থ্য কর্মীরা। তার উপরে দেশবাসীরা টিকাও নিচ্ছেন।
করোনার আতঙ্কে গত সপ্তাহের শেষ চার দিনে সেনসেক্স নেমেছে প্রায় ২০০০ (১৯৬১) পয়েন্ট। বাজার আরও পড়লে আতঙ্কিত না হয়ে তাকে সুযোগ হিসেবেই দেখতে হবে। ২০২০ সালের মার্চে লকডাউন ঘোষণার পরে এক দিনে সূচকটি খুইয়েছিল প্রায় ৪০০০ পয়েন্ট। নেমে যায় ২৫,৯৮১-তে। কিন্তু সেই সূচকই পরবর্তীকালে দ্রুত মাথা তুলে পেরোয় ৬০ হাজারের মাইলফলক। এমনকি চলতি বছরে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিপুল পতন সত্ত্বেও ১ ডিসেম্বর সেনসেক্স ছোঁয় ৬৩,২৮৪ অঙ্কের রেকর্ড উচ্চতা। এই সব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এ বার কমা জলে মাছ ধরতে নেমে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে পারেন লগ্নিকারীরা। হাতে নগদ টাকা থাকলে প্রতিটি পতনে বাছাই করা শেয়ার এবং সুবিন্যস্ত ফান্ডে লগ্নি করার কথা ভাবা যায়। ঝুঁকি কম রাখতে চাইলে করা যায় এসআইপি।
নতুন বছরের দ্বিতীয় সপ্তাহে শুরু হবে সংস্থাগুলির ত্রৈমাসিক ফল প্রকাশের পালা। আশা, উৎসবের মরসুম পেরিয়ে আসার পরে আয় ও লাভ ভাল হবে অনেকেরই। সে ক্ষেত্রে ফের চাঙ্গা ভাব দেখা দিতে পারে অনেক শেয়ারে। কর বাঁচানোর লক্ষ্যে বিনিয়োগ করতে চাইলে এই পড়তি বাজারে ইএলএসএস (ইউনিট লিঙ্কড সেভিংস স্কিম) প্রকল্পের কথা খতিয়ে দেখা যায়। যাঁদের হাতে ভাল শেয়ার ধরা আছে, তাঁদের ভাল সময় ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। একই কথা প্রযোজ্য মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নিকারীদের ক্ষেত্রে। ব্যাঙ্ক এবং এনবিএফসির (ব্যাঙ্ক নয় এমন আর্থিক প্রতিষ্ঠান) মধ্যে আমানতে সুদ বৃদ্ধির যুদ্ধ এখনও চলছে। মানুষ এই ফাঁকে সুদের আয় বাড়িয়ে নিতে পারেন।
মোদ্দা কথা, এই আতঙ্কের বাজারেও চারপাশে নানা রকম সুযোগ ছড়িয়ে রয়েছে। শুধু চোখ-কান খুলে রেখে তার সদ্ব্যবহার করতে হবে।
লগ্নিকারীরা অবশ্য আশঙ্কার থেকে মুক্ত হতে পারছেন না। কোভিডের প্রথম কোপ বড় রকমের আঘাত হেনেছিল ভারত তথা বিশ্বের অর্থনীতিতে। যা পুরো কাটিয়ে ওঠা যায়নি। এই অবস্থায় নতুন করে ধাক্কা ব্যবসা-বাণিজ্য, কর্মসংস্থান-সহ সব কিছুর পক্ষেই খারাপ হতে পারে। ভারত যদি এই পর্বের আক্রমণ কিছুটা রুখেও দেয়, তবু তার খানিকটা প্রভাব অবশ্যই পড়বে কোনও কোনও শিল্পে। প্রথম আঘাত আসতে পারে হোটেল এবং পর্যটনে। শ্লথ হতে পারে খুচরো ব্যবসা। অর্থনীতি পক্ষে যা উদ্বেগের। স্বস্তির কথা, এরই মধ্যে কেন্দ্র আশ্বাস দিয়েছে, সতর্ক থাকা জরুরি। তবে ফের লকডাউনের প্রশ্ন নেই।
বাড়তে থাকা সংক্রমণে চিনের সঙ্কট ঘোরালো হয়েছে। কোভিড দ্রুত ছড়াচ্ছে জাপান এবং আমেরিকাতেও। এই সব দেশে বিধিনিষেধের প্রতিকূল প্রভাব পড়বে ভারতের রফতানিতে। যা এর মধ্যেই কমতে শুরু করেছে পশ্চিমের দেশগুলিতে আর্থিক মন্দার পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায়। তাই তথ্যপ্রযুক্তি-সহ প্রধান রফতানিকারী শিল্পগুলিতে সঙ্কটের আশঙ্কা থাকছেই।
দেশীয় হোক বা রফতানি, শিল্প আঘাত খেলে কর্মসংস্থানেও তার ছাপ পড়ে। ভারতের পক্ষে এটা চিন্তার। কারণ, বেকারত্বের হার এখনও বেশ চড়া এখানে। নভেম্বরে ছিল ৮%। শুধু শহরাঞ্চল ধরলে আরও বেশি, প্রায় ৮.৯৬%। তার উপরে রফতানি কমলে ডলারের দাম আরও চড়বে। এতে সমস্যায় পড়বে আমদানি নির্ভর শিল্প।
তবে ভারতের পক্ষে ভাল খবর, পশ্চিমী দুনিয়ায় মন্দার পরিবেশ বিশ্ব বাজারে তেলের ঊর্ধ্বগতি আটকে রাখবে। গত বেশ কিছু দিন ধরে অশোধিত তেল ব্রেন্ট ক্রুডের দাম ঘোরাফেরা করছে ৭৫.৭৪ ডলার থেকে ৮৯.৩৭ ডলারের মধ্যে। এ দিকে, অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বাড়ায় ফের চড়ছে সোনার দাম। শুক্রবার ১০ গ্রাম পাকা সোনা ছিল ৫৪,৯৫০ টাকা।
(মতামত ব্যক্তিগত)