কর বাঁচাতে হাতে আর মাত্র সাত দিন

চলতি (২০১৪-’১৫) আর্থিক বছরের এখন শেষ প্রহর। হাতে গোনা আর মাত্র সাতটি কাজের দিন পড়ে আছে। কর বাঁচানো-সহ অর্থকড়ি ব্যাপারে যা যা কাজ অসমাপ্ত রয়ে গিয়েছে, সেই সমস্ত সারতে হবে এই অল্প সময়ের মধ্যেই। মাত্র এই কদিনে ঠিক কী কী কাজ করতে হবে, তার একটি তালিকা তৈরি করা যাক আজ।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ২৩ মার্চ ২০১৫ ০২:৩২
Share:

চলতি (২০১৪-’১৫) আর্থিক বছরের এখন শেষ প্রহর। হাতে গোনা আর মাত্র সাতটি কাজের দিন পড়ে আছে। কর বাঁচানো-সহ অর্থকড়ি ব্যাপারে যা যা কাজ অসমাপ্ত রয়ে গিয়েছে, সেই সমস্ত সারতে হবে এই অল্প সময়ের মধ্যেই। মাত্র এই কদিনে ঠিক কী কী কাজ করতে হবে, তার একটি তালিকা তৈরি করা যাক আজ।

Advertisement

সব থেকে প্রথমে রয়েছে চলতি বছরের জন্য কর সাশ্রয়ের কাজ। দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয় করে বাঁচানো যেতে পারে মোটা অঙ্কের কর। যদি আপনার ইতিমধ্যেই অনেকটা হয়ে গিয়ে থাকে, তবে চেষ্টা করে বাকিটাও সেরে ফেলুন এই কদিনে। টাকায় টান পড়লে, অল্প লোকসানে অন্য কোনও লগ্নি ভাঙিয়ে সাশ্রয়কারী প্রকল্পে যদি লগ্নি করা যায় তবে মন্দ কি! অঙ্কটা একবার নিজে করে দেখে নিন।

অন্য কোথাও ঝুঁকি নিতে না চাইলে ব্যাঙ্কে রাখা আপনার টাকা না হয় ব্যাঙ্কেই থাকুক। নিজের সেভিংস অথবা এফ ডি (ফিক্সড ডিপোজিট) অ্যাকাউন্ট থেকে সরিয়ে তা জমা করুন পাঁচ বছর মেয়াদি, কর সাশ্রয়কারী এফ ডি অ্যাকাউন্টে।

Advertisement

অল্প বিস্তর ঝুঁকি নিতে যাঁদের আপত্তি নেই, তাঁরা শেষ বেলায় কিছুটা টাকা লগ্নি করতে পারেন মিউচুয়াল ফান্ডের ইকুইটি (শেয়ার) নির্ভর কোনও ভাল ইএলএসএস প্রকল্পে। এ ছাড়া, টাকা রাখতে পারেন পিপিএফ এবং এনপিএস (পেনশন) প্রকল্পেও। তবে যেখানেই লগ্নি করুন না কেন, কাজটা সারতে হবে অতি দ্রুত। শেষ দিনের জন্য বসে থাকলে চলবে না।

স্ব-নির্ভর এবং অবসরপ্রাপ্ত নাগরিকদের যদি আগাম কর এখনও পুরোপুরি না দেওয়া হয়ে থাকে, তবে তা শেষ বেলায় জমা করে চটজলদি দায়মুক্ত হয়ে যান।

এমন হতেই পারে যে, আপনার কোনও দাতব্য সংস্থায় দান করার বাসনা রয়েছে। তা হলে সেটা এই মাসের শেষ দিনের মধ্যেই করে ফেলুন। সংস্থাটি যদি ৮০জি ধারায় স্বীকৃত থাকে তবে কিছুটা করছাড়ের সুবিধাও পেয়ে যেতে পারেন।

চাকুরিজীবীরা যদি ৮০সি ধারায় বিভিন্ন জায়গায় লগ্নি করে থাকেন, তবে তার প্রমাণপত্র অবশ্যই আজ কালের মধ্যে নিজেদের অফিসে দাখিল করুন। এতে শেষ মাসে করের বোঝা কিন্তু কিছুটা কমবে।

স্বাস্থ্যবিমা করা না থাকলে, এই বেলা করে নিতে পারেন। ঊর্ধ্বসীমা সাপেক্ষে প্রিমিয়ামের উপর করছাড় পাওয়া যাবে।

২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে আরও বেশি কর সাশ্রয়ের সুযোগ থাকবে আরও বেশি লগ্নির উপর। এ বার করছাড় পাওয়া যাবে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লগ্নির উপর। এতটা সঞ্চয় করতে হলে পরিকল্পনা মাফিক টাকা ঢালার ব্যবস্থা করতে হবে প্রথম মাস থেকেই। অর্থাত্‌ আর্থিক পরিকল্পনা ছকে ফেলতে হবে এখনই।

৩১ মার্চ যাঁরা অবসর নেবেন তাঁদের আগাম করে ফেলা উচিত সঞ্চয় বা লগ্নির পরিকল্পনা। ব্যাঙ্কে সুদের হার কমতে শুরু করেছে। আশঙ্কা রয়েছে, আগামী দিনে তা আরও কমতে পারে। এপ্রিলে পুনর্বিন্যাস করা হতে পারে বিভিন্ন ডাকঘর সঞ্চয় প্রকল্পের সুদের হারেও। অর্থাত্‌ এ ক্ষেত্রেও পরিকল্পনা অনুযায়ী বিভিন্ন জায়গায় টাকা রাখার কাজ সেরে ফেলার জন্য হাতে কিন্তু আর বেশি সময় নেই।

যাঁরা চলতি বছরে ৬০ বছর বয়স পূর্ণ করেছেন, তাঁরা এ বার করের দিক থেকে অতিরিক্ত সুবিধা পাবেন। এক দিকে, করশূন্য আয়ের মাত্রা বেড়ে হবে ৩ লক্ষ টাকা। অন্য দিকে, ৮০সি ধারায় অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকার উপর কর ছাড়ের সুবিধা পাওয়া যাবে। যার মানে দাঁড়ায়, ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরের তুলনায় মোট অতিরিক্ত সুবিধা ১ লক্ষ টাকা। যাঁরা ৩০, ২০ ও ১০% করের আওতায় পড়েন তাঁদের কর বাঁচতে পারে যথাক্রমে ৩০ হাজার, ২০ হাজার এবং ১০ হাজার টাকা।

এ ছাড়া ব্যাঙ্ক আমানতে পাবেন ০.২৫ থেকে ০.০৫ শতাংশ অতিরিক্ত সুদের সুবিধা। যাঁরা আর মাত্র কিছুদিনের মধ্যে প্রবীণ নাগরিক হতে চলেছেন, তাঁরা একটু অপেক্ষা করে ব্যাঙ্ক এফডি-তে টাকা রাখুন। এবং টাকা রাখুন একটু দীর্ঘমেয়াদের জন্য। কারণ ভবিষ্যতে সুদের হার আরও কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

২০১৪-১৫ আর্থিক বছরের জন্য কর সাশ্রয়কারী সব সঞ্চয় করা হয়ে গেলে মন দিন রিটার্ন তৈরির কাজে। প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র জোগাড় করতে শুরু করুন এখন থেকেই। বর্তমানে আয় ৫ লক্ষ টাকা ছাড়ালে ই-রির্টানে ফাইল করা বাধ্যতামূলক। যদি রিফান্ড পাওয়ার থাকে, তবে যত তাড়াতাড়ি রিটার্ন দাখিল করবেন, তত দ্রুত রিফান্ড পাওয়ার আশা পূর্ণ হতে পরে।

যাঁরা এখনও ২০১৩-১৪ আর্থিক বছরের আয়কর রিটার্ন জমা করে উঠতে পারেননি, এ বার অন্তত আর একটু উদ্যোগ নিয়ে তাঁরা ৩১ মার্চের মধ্যে তা জমা করে দিন। তা হলে জরিমানা এড়াতে পারবেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement