ফাইল চিত্র।
এতটা লম্বা দৌড়ের পরেও শেয়ার বাজারের দম যেন ফুরোচ্ছে না। বর্তমানের সব আশঙ্কাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে গত সপ্তাহে সেনসেক্স ফের নতুন নজির গড়ে ঢুকে পড়েছে ৫৯ হাজারের ঘরে। সর্বকালীন উচ্চতা ছুঁয়েছে নিফ্টি-ও। কোনও কারণ দিয়েই এই উত্থানকে যুক্তিযুক্ত বলে প্রতিষ্ঠা করতে পারছেন না বিশেষজ্ঞেরা। মনে করা হচ্ছে, বাজারে অফুরন্ত টাকার জোগান সূচকের শক্তির প্রধান উৎস। সঙ্গে রয়েছে অর্থনীতি দ্রুত চাঙ্গা হওয়ার আশা। আর তাতে ভর করেই শেয়ারের মোট মূল্যের ভিত্তিতে ফ্রান্সকে পিছনে ফেলে সাত নম্বরে উঠে এসেছে ভারত।
তবে চলতি সপ্তাহ লগ্নিকারীদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। কাল (মঙ্গল), পরশু (বুধ) ঋণনীতি পর্যালোচনায় বসবে আমেরিকার শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারাল রিজ়ার্ভ। সেখানেই পেশ হবে সে দেশের কর্মসংস্থানের তথ্য। নির্ধারিত হতে পারে বাজার থেকে বন্ড কেনা কমানোর (ত্রাণ প্রকল্পে রাশ টানার) কর্মসূচি। সিদ্ধান্ত হতে পারে সুদ বাড়ানো নিয়েও। জো বাইডেনের দেশ সুদ বাড়ালে বা অবিলম্বে ত্রাণ কমানোর কথা বললে নগদের জোগান নিয়ে উদ্বেগ বাড়বে বিভিন্ন দেশে। এই সব সিদ্ধান্তের বড় প্রভাব দেখা যাবে বিশ্ব, তথা ভারতের বাজারে। ফলে ক’দিন সাবধানে পা ফেলতে হবে।
এমন উঁচু বাজারে এমনিতেও একলপ্তে মোটা টাকা লগ্নি করা উচিত নয়। শেয়ার কিনতে হয় সতর্ক হয়ে। সরাসরি লগ্নির ঝুঁকি এড়াতেই এখন দ্রুত বাড়ছে মিউচুয়াল ফান্ডের এসআইপি-তে অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ও লগ্নি। অগস্টে খোলা হয়েছে ২৪.৯ লক্ষ নতুন অ্যাকাউন্ট। এই নিয়ে টানা তিন মাসে খুলল ২০ লক্ষেরও বেশি অ্যাকাউন্ট। মোট অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ছুঁল ৪.৩ কোটি। সব মিলিয়ে সম্পদ অগস্টের শেষে ৫.৩ লক্ষ কোটি টাকা।
গত দেড় মাসে ভারতের বাজার উঠেছে সব থেকে দ্রুত গতিতে। বেড়েছে প্রায় ১২.৫%। উত্থানে যোগ দিয়েছে কয়েক কোটি ছোট লগ্নিকারী। বিপুল পুঁজি ঢুকেছে ফান্ড এবং আইপিও (বিভিন্ন সংস্থার বাজারে প্রথম বার শেয়ার বিক্রি করে টাকা তোলার প্রক্রিয়া) মারফত। জানুয়ারি থেকে এখনও পর্যন্ত বিদেশি লগ্নিকারী আর্থিক সংস্থাগুলি ঢেলেছে প্রায় ৫৯,০০০ কোটি টাকা। সপ্তাহ শেষে বিএসই-তে নথিবদ্ধ শেয়ারের মোট মূল্য দাঁড়িয়েছে ২৫৮.৯৬ লক্ষ কোটি। মোট লগ্নিকারী ৮ কোটি ছুঁইছুঁই। শুক্রবার সূচক সামান্য নামলেও, তাকে সংশোধনের শুরু বলা যায় না।
এ দিকে, ছোট-খাটো সংশোধন হলেও বাজারকে আরও তুলতে পারে যে সব শক্তি, সেগুলি হল—
অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর পক্ষে জোরালো কোনও ইঙ্গিত।
এখনও পর্যন্ত ৪% ঘাটতি পুষিয়ে গোটা দেশে স্বাভাবিক বর্ষা।জুলাই-সেপ্টেম্বর, এই তিন মাসে উন্নত কোম্পানি ফলাফল।
উৎসবের মরসুমে চাহিদা বৃদ্ধি। করোনার তৃতীয় ঢেউ তেমন ভয়ঙ্কর না-হওয়া ও টিকাকরণে আরও গতি।
মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে যদিও চিন্তা থাকছে। পাইকারি মূল্যবৃদ্ধি অগস্টে বেড়ে হয়েছে ১১.৩৯%। মূলত খাদ্যপণ্যের দাম কমায় খুচরো মূল্যবৃদ্ধি নেমে হয়েছে ৫.৩%। তবে তা স্বস্তির নয়। তার উপরে তেলের দাম জিএসটি-তে এল না। অর্থাৎ দাম কমার আশা রইল না। বরং ফের বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম বাড়ায় দেশেও আবার দর বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে।
(মতামত ব্যক্তিগত)