Indian Share Market

দামে চোখ, কাঁটা সরিয়েই আরও ওঠার আশা সূচকের

আগামী শুক্রবার প্রকাশিত হবে খুচরো বাজারে ডিসেম্বরের মূল্যবৃদ্ধির কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান। এর প্রভাব পড়বে শেয়ার বাজারে। ওই হার কমলে সুদ ছাঁটাইয়ের দাবি জোরালো হবে।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৫৯
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

ডিসেম্বর জুড়ে নতুন নজির গড়েছে শেয়ার বাজার। ৭২,৪১০ অঙ্কে পৌঁছে ২৮ ডিসেম্বর শেষ বার নয়া শিখরে পা রেখেছিল সেনসেক্স। অতি অল্প সময়ে এতটা ওঠায় নতুন বছরের প্রথম সপ্তাহে সংশোধনের বাতাবরণ তৈরি হয়। গত মঙ্গল এবং বুধবার সূচক নামে মোট ৯১৫ পয়েন্ট। তবে তার পরেই প্রতিরোধ গড়ে টানা দু’দিনে উঠে যায় ৬৭০। সাধারণত বাজার অনেকটা চড়লে বড় পতনের আশঙ্কা থাকে। কিন্তু এই মুহূর্তে ভারতীয় অর্থনীতির উপর আস্থা এবং শেয়ারের প্রবল চাহিদার কারণে সেটা হতে পারছে না। মানুষ শেয়ার কিনছেন এই ভেবে যে, এখন না কিনলে অদূর ভবিষ্যতে তা হয়তো আরও উপরে উঠবে।

Advertisement

আগামী শুক্রবার প্রকাশিত হবে খুচরো বাজারে ডিসেম্বরের মূল্যবৃদ্ধির কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান। এর প্রভাব পড়বে শেয়ার বাজারে। ওই হার কমলে সুদ ছাঁটাইয়ের দাবি জোরালো হবে। আর তা বাড়লে, সাময়িক ভাবে দুর্বল হতে পারে সূচক। এর পাশাপাশি লগ্নিকারীদের নজর থাকবে আমেরিকার সুদে। তার হার কমলেও ভারতের পক্ষে সদর্থক হবে।

লগ্নিকারীদের অনেকেই মনে করছেন, এ দেশে শেয়ার সূচক আরও অনেক উপরে উঠবে। যে সব কারণে সেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে, সেগুলির মধ্যে রয়েছে—

Advertisement
  • দেশের পোক্ত অর্থনীতি। যার ইঙ্গিত হিসেবে কেন্দ্র চলতি অর্থবর্ষে আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৭.২% থেকে বাড়িয়ে ৭.৩% করেছে।
  • বাড়ি, গাড়ি এবং অন্য কিছু পণ্যের ভাল বিক্রি, আগের তুলনায় বেশি অগ্রিম কর এবং জিএসটি আদায়।
  • বিভিন্ন সংস্থার ভাল ফলের (অক্টোবর-ডিসেম্বরের) প্রত্যাশা।
  • ১ ফেব্রুয়ারি সংসদে পেশ হতে চলা আগামী অর্থবর্ষের (২০২৪-২৫) অন্তর্বর্তী বাজেট। অর্থমন্ত্রীর কথায়, এই ছোট বাজেটে কোনও বড় চমক থাকবে না। তবুও বাজার মহলের আশা, এমন কিছু মৃদু বার্তা থাকতে পারে, যা শেয়ার বাজার এবং সাধারণ মানুষকে খুশি রাখবে।
  • বাজেটের ১০ দিন আগে হতে চলা রামমন্দিরের উদ্বোধন। একে ঘিরে দেশে এক ভাবাবেগ সৃষ্টির প্রয়াস দেখা যেতে পারে। যা লোকসভা ভোটে ছাপ ফেলতে পারে বলে অনেকের বিশ্বাস।
  • লোকসভা ভোট। যা দেশে পোক্ত সরকার গড়ে দেবে বলেও আশা।
  • অশোধিত তেলের দাম। বহু দিন ধরে যার ব্যারেল রয়েছে ৮০ ডলারের নীচে। দেশে তেলের দাম এখনও না কমলেও, তার পরিসর তৈরি হয়েছে। মূল্যবৃদ্ধির নিরিখে তা ইতিবাচক।
  • লাগাতার বিদেশি সংস্থাগুলির লগ্নি। ভারতীয় অর্থনীতি ভাল জায়গায় থাকায় যে পুঁজি আসায় ছেদ পড়ছে না।

সব মিলিয়ে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে ভারতের বাজারে এক সদর্থক আবহ তৈরি হয়েছে। ফলে মাঝেমধ্যে ছোট ছোট সংশোধনের সাপেক্ষে বাজার যে আরও উপরে উঠবে, সেই ব্যাপারে আশাবাদী অনেকেই।

যদিও কিছু দুশ্চিন্তা রয়েই যাচ্ছে। যেগুলি বাজারের মাথাব্যথা বহাল রাখতে পারে। যেমন—

  • বিশ্বের কোনও কোনও অঞ্চলে ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্কট।
  • কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির হারে অবনমন, যা খাদ্যপণ্যের জোগান কমিয়ে তার দামকে ঠেলে তুলতে পারে। সেটা হলে মূল্যবৃদ্ধির চড়ার আশঙ্কা থাকবে। দুর্বল হতে পারে গ্রামীণ অর্থনীতি।
  • চাহিদা নিয়ে আশঙ্কা বহাল থাকার ইঙ্গিত দিয়ে মূলত গ্রামাঞ্চলে কিছু কিছু স্বল্প মেয়াদি ভোগ্যপণ্যের বিক্রি কমা।
  • শ্লথ পণ্য রফতানির গতি। এর ফলে কিছু শিল্প মার খেতে পারে।
  • চড়ে থাকা বেকারত্ব। রফতানি ঘুরে না দাঁড়ালে এবং মূল্যবৃদ্ধি ফের চড়লে যা বাড়তে পারে।

শেয়ার বাজারের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী হওয়ায় দ্রুত বাড়ছে লগ্নিকারী এবং ডিম্যাট অ্যাকাউন্টের সংখ্যা। বিএসই-তে বর্তমানে নথিবদ্ধ লগ্নিকারী প্রায় ১৫.৫৩ কোটি। নথিবদ্ধ সব শেয়ারের মোট মূল্য ৩৬৯.৩৩ লক্ষ কোটি টাকা। ডিসেম্বরে খোলা হয়েছে মোট ৪১.৭৩ লক্ষ ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট। দেশে তার মোট সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৩.৯৩ কোটি। শেয়ারে নাগাড়ে লগ্নি ঢুকছে মিউচুয়াল ফান্ড থেকেও। ফান্ডের জগতেও লগ্নিকারী বাড়ছে। আশা পূরণের অপেক্ষায় সকলে।

(মতামত ব্যক্তিগত)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement