উদ্যাপন: শুরু হল সম্বৎ ২০৭৬। দেওয়ালি উপলক্ষে চলছে বিশেষ মুরত লেনদেন। উৎসবের আবহে স্টক ব্রোকার মায়ের সঙ্গে শেয়ার লেনদেনে চোখ তাঁর ছেলে-মেয়েদেরও। রবিবার সন্ধ্যায় বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জে (বিএসই)। রয়টার্স
নতুন সম্বৎ বছর ২০৭৬-এর প্রথম দিনেই সেনসেক্স উঠল ১৯২ পয়েন্ট। রবিবার সন্ধ্যেয় এক ঘণ্টার লেনদেন শেষে তা দাঁড়াল ৩৯,২৫০ অঙ্কে। যদিও অনিশ্চয়তা কাটার কোনও লক্ষণ নেই। বিশেষত দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির বিচারে। উল্টে অনেকেই সিঁদুরে মেঘ দেখছেন টেলিকম সংস্থাগুলির আর্থিক স্বাস্থ্য নিয়ে। কারণ, ঋণের ভারে জর্জরিত, মাসুল যুদ্ধে কাহিল ওই সব সংস্থার কাঁধে চেপেছে নতুন ৯২ হাজার কোটি টাকার বোঝা। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, বকেয়া লাইসেন্স ফি বাবদ কেন্দ্রকে ওই টাকা দিতে হবে তাদের। আশঙ্কা, এই নির্দেশে সংস্থাগুলির হিসেবের খাতা আরও দুর্বল হলে, তার আঁচে ভুগবে অর্থনীতিও।
অনিশ্চয়তার পাশাপাশি চলছে অপেক্ষাও। অর্থনীতি চাঙ্গা করতে কেন্দ্রের একগুচ্ছ পদক্ষেপ কাজে লাগে কি না, তা বোঝার অপেক্ষা। চলতি অর্থবর্ষে অর্থমন্ত্রী চাহিদা বাড়িয়ে বিক্রিবাটায় প্রাণ আনতে আর কী কী করেন, তা দেখার অপেক্ষা। এমনকি শেষ পর্যন্ত যদি আর্থিক চাপকে পাশ কাটাতে পারে টেলিকম শিল্প, যদি ভালয় ভালয় ব্রেক্সিট (ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে বেরোনো) চুক্তি হয়, শুল্ক নিয়ে সন্ধি হয় চিন-আমেরিকার, তা হলেও বাজারে অনিশ্চয়তার মেঘ কাটার সম্ভাবনা আছে। অনেকেই এখন তাই আশায় বুক বেঁধে অপেক্ষা করে আছেন সেই সময়ের জন্য। এই আশাও আছে, কর্পোরেট কর কমানোর পরে কেন্দ্র ব্যক্তিগত আয়কর কমাবে। সেটা সত্যি হলে, সেই খুশির প্রতিফলন দেখা যেতে পারে শেয়ার বাজারে।
পরিসংখ্যান বলছে সম্বৎ ২০৭৫ বছর শেয়ার বাজার এবং লগ্নিকারীদের পক্ষে মন্দ কাটেনি। সেনসেক্স বেড়েছে ৪০৬৬ পয়েন্ট বা ১১.৬২%। নিফ্টি একটু কম, ১০৫৪ পয়েন্ট বা ১০%। অর্থনীতির বর্তমান অবস্থার বিচারে এই উত্থানকে ভালই বলতে হবে। কিন্তু গভীরে ডুব দিলে দেখা যাবে, পরিস্থিতি এতটা ভাল নয়। যন্ত্রণা রয়েই গিয়েছে তলায় তলায়। ৩০টি শেয়ার নিয়ে গড়া সেনসেক্স যত বেড়েছে, ৫০টি শেয়ার সম্বলিত নিফ্টি বেড়েছে তার তুলনায় কম। ছোট ও মাঝারি শেয়ারগুলির অবস্থা তুলনায় বেশ খারাপ।
ধনতেরাসে সোনা কেনায় আগের মতো উত্তেজনা চোখে না পড়লেও, গত এক বছরে এই হলুদ ধাতু শেয়ারের থেকেও ভাল রিটার্ন দিয়েছে। খাঁটি সোনা (২৪ ক্যারাট) সম্বৎ ২০৭৫ শেষ করেছে ৩৯,২২০ টাকায় (১০ গ্রাম)। ফলে ভাল লাভের সন্ধান পেয়েছেন গোল্ড ইটিএফের পুরনো লগ্নিকারীরা।
দেওয়ালির মুখে দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের ফল প্রকাশ করেছে বেশ কিছু প্রথম সারির সংস্থা। স্টেট ব্যাঙ্কের নিট মুনাফা অনেকটা বেড়ে ছুঁয়েছে ৩০১২ কোটি টাকা। আইটিসির সার্বিক মুনাফা ৩৭% বেড়ে পৌঁছেছে ৪১৭৫ কোটিতে। বন্ধন ব্যাঙ্কের নিট লাভ প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে হয়েছে ৯৭২ কোটি। এল অ্যান্ড টি-র ১৩.৩% বেড়ে হয়েছে ২৫২৭ কোটি। পিএনবি হাউজ়িংয়ের ৪৫% বেড়ে ৩৬৭ কোটি। অন্য দিকে চাহিদায় ভাটার জেরে মারুতি সুজুকির নিট লাভ ২২৮০ কোটি টাকা থেকে কমে হয়েছে ১৩৯১ কোটি। হিরো মোটোকর্পের ১০.৩% কমে হয়েছে ৮৭৫ কোটি। ইন্ডিগোর লোকসান ৬৫১ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ১০৬২ কোটি। ১৪ নভেম্বরের মধ্যে ফল প্রকাশ করবে বাকি সবাই। তার পরে বোঝা যাবে, অর্থবর্ষের প্রথম ছ’মাসে সংস্থাগুলি ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতির সঙ্গে কতটা যুঝতে পারল।
দেশে ও দেশের বাইরে যা পরিস্থিতি, তাতে সম্বৎ ২০৭৬ নিয়ে বড় আশা করতে ভরসা পাচ্ছেন না কেউ। পণ্য চাহিদা কবে বাড়বে ঠিক নেই। সরকারের রসদও সীমিত। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে কেন্দ্রের পদক্ষেপগুলিতে এখনও তেমন লাভ হয়নি। আশা, চলতি উৎসবের মরসুমে হয়তো চাহিদা কিছুটা বাড়বে। তবে অর্থনীতি সম্পর্কে তেমন আশার কথা শোনাতে পারছেন না কেউ। আইএমএফ, বিশ্ব ব্যাঙ্ক থেকে শুরু করে বিভিন্ন মূল্যায়ন সংস্থা—ভারতের বৃদ্ধির পূর্বাভাস ছেঁটেছে প্রায় সকলেই।
আসলে কিছু সংস্থা যে লাভ করেছে তার খানিকটা হয়েছে কর কমায়। শুধু ভাল ব্যবসার জন্য নয়।
(মতামত ব্যক্তিগত)