গ্রাফিক: তিয়াসা দাস
বৃহস্পতিবার ফের পড়ল সেনসেক্স। ৪৭০ পয়েন্ট। দিনের শেষে সেনসেক্স নেমে দাঁড়াল ৩৬, ০৯৩ অঙ্কে। গত ৬ মাসে এতটা নীচে নামেনি সূচক। গত ১৯ ফেব্রুয়ারির পর এ দিনই সবচেয়ে নীচে নামল নিফটির সূচকও। ১৩৬ পয়েন্ট।
রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, ইনফোসিস ও টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিসের মতো বড় বড় সংস্থাগুলির শেয়ারের দাম পড়ে যাওয়ার ফলেই এ দিন সেনসেক্সের এই অধঃপতন।
সৌদি আরবের তেল শোধনাগারে জঙ্গি হানার পরে সোমবার এক লাফে ২০% বেড়ে ব্যারেলে ৭২ ডলারে পৌঁছেছিল অশোধিত তেলের দাম। সেই ধাক্কায় সপ্তাহের প্রথম দিনেই পতনের মুখ দেখেছিল শেয়ার বাজার। মঙ্গলবার কেন্দ্র তেল সরবরাহ নিয়ে আশ্বাস দিলেও, তার প্রতিচ্ছবি দেখা গেল না সূচকে। উল্টে তেলের দাম বাড়ার জের ভারতের অর্থনীতিতে পড়ার আশঙ্কা আজ আরও বেশি টেনে নামাল শেয়ার বাজারকে।
মঙ্গলবার ৬৪২ পয়েন্ট পড়ে সেনসেক্স থামল ৩৬,৪৮১.০৯ অঙ্কে। প্রায় ১৮৬ পড়ে নিফ্টি শেষ হল ১০,৮১৭.৬০ অঙ্কে। দু’দিনেই মুছে গিয়েছে লগ্নিকারীদের ২.৭২ লক্ষ কোটি টাকার সম্পদ। আজ নেমেছে টাকার দরও। প্রতি ডলারের দাম ১৮ পয়সা বেড়ে হয়েছে ৭১.৭৮ টাকা।
আরও পড়ুন- তেলের আঁচে পড়ল সেনসেক্স
আরও পড়ুন- মোদীর ১০০ দিনে উধাও বিনিয়োগকারীদের সাড়ে ১২ লক্ষ কোটি টাকা
তেলমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান জানান, রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বাড়াতে মাঠে নামবেন তাঁরা। এ জন্য রুশ সংস্থা রসনেফ্টের শীর্ষ কর্তা ইগর সেচিনের সঙ্গে দেখা করেছেন তিনি। রাশিয়ার তেল ক্ষেত্রে লগ্নি বৃদ্ধির কথা ভাবছে চার ভারতীয় সংস্থা। অনেকের মতে, সৌদি অ্যারামকো যখন তেল উৎপাদন অর্ধেক করেছে, তখন মূলত বিকল্পের খোঁজেই এই উদ্যোগ।
অ্যারামকোর অবশ্য আশ্বাস, ভাণ্ডারে যে তেল মজুত আছে, তাতে চট করে ভাটা পড়বে না এশীয় ক্রেতাদের জোগানে। সোমবার সংস্থা সূত্রের দাবি ছিল, তেলের জোগান স্বাভাবিক হতে কয়েক মাস সময় লাগবে। কিন্তু মঙ্গলবার বলা হয়েছে, দু’তিন সপ্তাহের মধ্যে তা আগের জায়গায় ফিরবে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে আশঙ্কা থাকছেই সারা দুনিয়ায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটা ঠিক যে মঙ্গলবার বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমেছে। কিন্তু পশ্চিম এশিয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতা গত কয়েক দিনে বেড়েছে। ফলে আগামী দিনে অন্য কোনও ঘটনায় ফের যে দর বাড়বে না, তার নিশ্চয়তা নেই। আর তা নাগাড়ে বাড়লে ভারতেও পেট্রল, ডিজেলের দাম বাড়বে। ইতিমধ্যেই সোম ও মঙ্গলবারে কলকাতায় জ্বালানি দু’টির দাম বেড়েছে যথাক্রমে লিটারে ৩৮ ও ৩৯ পয়সা। এই ধারা চললে নাভিশ্বাস উঠবে সাধারণ মানুষের। গুলিয়ে যেতে পারে ঘাটতির হিসেব। সমস্যা আরও বাড়তে পারে অর্থনীতির।
চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকে ৫% বৃদ্ধি নিয়ে সোমবারই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্ক গভর্নর শক্তিকান্ত দাস। তাঁর মতে, অ্যারামকোর এই ঘটনার প্রভাব বেশি দিন বজায় থাকলে চলতি খাতে এবং রাজকোষ ঘাটতিতে প্রভাব পড়বে। সেই বক্তব্যও এ দিন বাজারে প্রভাব ফেলেছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।