বড় মেয়াদে সেনসেক্সের চোখ এ বার ৩০ হাজারের দিকে

অল্প সময়ের মধ্যে একটি মাঝারি মাপের উত্থানের পরে বাজার এখন আরও উপরের দিকে তাকিয়ে। তবে পুরোটাই আশা নির্ভর। ভারতের বৃদ্ধির হার বিশ্বে সব থেকে বেশি বলে সরকারের তরফে দাবি করা হলেও বিভিন্ন ব্যাপারে পরস্পরবিরোধী পরিসংখ্যান অভিজ্ঞ মহলকে কিছুটা বিভ্রান্তির মধ্যে রেখেছে।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৬ ০৩:২৩
Share:

অল্প সময়ের মধ্যে একটি মাঝারি মাপের উত্থানের পরে বাজার এখন আরও উপরের দিকে তাকিয়ে। তবে পুরোটাই আশা নির্ভর। ভারতের বৃদ্ধির হার বিশ্বে সব থেকে বেশি বলে সরকারের তরফে দাবি করা হলেও বিভিন্ন ব্যাপারে পরস্পরবিরোধী পরিসংখ্যান অভিজ্ঞ মহলকে কিছুটা বিভ্রান্তির মধ্যে রেখেছে। যদিও এ কথা ঠিক, বহু দেশের তুলনায় অনেকটাই ভাল জায়গায় দাঁড়িয়ে আমাদের অর্থনীতি। ভাল বর্ষার পূর্বাভাসে ভর করে লকলকিয়ে বাড়তে চাইছে সেনসেক্স ও নিফ্‌টি। সর্বকালীন রেকর্ড জায়গা থেকে সেনসেক্স এখন ১০-১১% পিছনে। একটু বড় মেয়াদে তার লক্ষ্য হবে ফের ৩০ হাজার ছোঁয়া।

Advertisement

আশঙ্কার তুলনায় ভাল কোম্পানি ফলাফল, ভাল বর্ষার পূর্বাভাস, বাজার থেকে কেন্দ্রের বন্ড কেনায় টাকার জোগান বৃদ্ধি ইত্যাদি সদর্থক শর্তের পাশাপাশি অবশ্য কিছু প্রতিকূল শর্তও বাজারে আছে, যেগুলি সূচক বেশি উঠতে চাইলে তার টুঁটি চেপে ধরছে। মার্কিন মুলুকে সুদ বাড়ার আশঙ্কা মাঝে-মধ্যেই সতর্ক করে দিচ্ছে লগ্নিকারীদের। ব্যাঙ্কগুলির অনাদায়ী ঋণের বোঝা নিয়ে যে-আশঙ্কার কালো মেঘ জমাট বেঁধেছে, তা সহজে কাটার নয়। এ ব্যাপারে কথা বলতে আজ খোদ অর্থমন্ত্রী তাঁর দলবল নিয়ে আলোচনায় বসছেন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলির কর্ণধারদের সঙ্গে।

সরকারি ব্যাঙ্কগুলির মোট অনুৎপাদক সম্পদ বা এনপিএ ২০১৫ সালের মার্চে ছিল ২,৬৭,০৬৫ কোটি টাকা। তা গত ডিসেম্বরে বেড়ে হয়েছে ৩,৬১,৭৩১ কোটি। অর্থাৎ যা ছিল মোট ঋণের ৫.৪৩%, তা-ই বেড়ে হয়েছে ৭.৩০%। ২০১৫-’১৬ অর্থবর্ষের শেষ তিন মাসে রেকর্ড লোকসানের তথ্য প্রকাশ করেছে সরকারি ব্যাঙ্কগুলি। শেষ ছ’মাসে ২২টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের লোকসান ছুঁয়েছে ৩০,৭০০ কোটি টাকা। ২০১৫-’১৬ সালে ব্যাঙ্কগুলির লাভ উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে আসায় অথবা লোকসান হওয়ায় ডিভিডেন্ড বাবদ এ বার সরকারের আয় অনেকটাই কমবে। এই সব তথ্য শেয়ার বাজারের কাছে আদৌ সুখকর নয়। অর্থাৎ বাজার একনাগাড়ে উঠবে এমন ভাবা ঠিক হবে না। মাঝেমধ্যে তা সংশোধনের খপ্পরেও পড়বে।

Advertisement

এ বার আসি মিউচুয়াল ফান্ডের কথায়। সম্প্রতি এক বিজ্ঞপ্তিতে ফান্ড-ইউনিট ভাঙানোর উপর কয়েকটি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে সেবি। যে-সব পরিস্থিতিতে তা বহাল হতে পারে, সেগুলি হল—

সামগ্রিক ভাবে বাজারের এমন অবস্থা যে, শেয়ার বিক্রি করে ফান্ড টাকা সংগ্রহ করতে পারছে না। এই শর্তটি গোটা বাজারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। একটি বিশেষ শেয়ারের জন্য নয়।

যখন বিশেষ কোনও কারণে বাজার কাজ করতে পারছে না, যেমন অপ্রত্যাশিত রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক ঘটনা কিংবা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ঘোষিত জরুরি অবস্থা।

আচমকা যান্ত্রিক ত্রুটি, বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ইত্যাদি কারণে বাজারে গোলোযোগ।

উপরের কারণগুলির জন্য ৯০ দিনের মধ্যে অনধিক ১০ দিনের জন্য ইউনিট বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে। সাধারণ ভাবে এই নিষেধাজ্ঞার জন্য লগ্নিকারীদের কোনও বড় রকমের অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

শেয়ার বাজার এই মুহূর্তে খানিকটা তেজী হওয়ায় স্বাস্থ্য ফিরে পাচ্ছে ইক্যুইটি-নির্ভর ফান্ডগুলি। অন্য দিকে, ব্যাঙ্ক জমায় সুদ কমে আসায় উঁচু হারের করদাতারা ঝুঁকছেন ঋণপত্র নির্ভর ফান্ডের দিকে। সব মিলিয়ে ফান্ডের জগতে সুসময় আসছে বলে ধারণা।

অবশেষে দিনের আলো দেখতে চলেছে ডাকঘরের পেমেন্টস ব্যাঙ্ক। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সায় পেয়েছে এই প্রস্তাব। ব্যাঙ্কের মূলধন হবে ৮০০ কোটি টাকা। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে খোলা হবে ৬৫০টি শাখা। দেশে ডাকঘরের সংখ্যা ১.৫৪ লক্ষ। এর মধ্যে ১.৩৯ লক্ষ গ্রামাঞ্চলে। ডাকঘরে সেভিংস অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ১৫ কোটি। এই বিপুল সংখ্যক গ্রাহক অনায়াসে পোস্টাল ব্যাঙ্কের সুবিধা নিতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে। দেশের ডাকঘরগুলিতে আছে ১ লক্ষ ৭০ হাজার ডাকপিওন। প্রস্তাব অনুযায়ী, এঁদের হাতে দেওয়া হবে ইলেকট্রনিক যন্ত্র, যার মাধ্যমে গ্রামের মানুষ দ্রুত টাকা স্থানান্তরের সুবিধা নিতে পারবেন। বলা হচ্ছে, এর ফলে ঘর ছেড়ে যাঁরা অন্যত্র কাজ করছেন, তাঁদের বাড়িতে টাকা পাঠানো সহজ হবে। পেমেন্টস ব্যাঙ্ক সফল হলে টাকা হস্তান্তরের জন্য বেআইনি ‘হাওয়ালা’ লেনদেন কমে আসবে বলেও আশা। তৃতীয় বিশ্বের দেশ ব্রাজিলে এ ধরনের পোস্টাল ব্যাঙ্ক বেশ সফল হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement