ফাইল চিত্র।
একের পর এক নজির তৈরি হচ্ছে আর ভাঙছে। অগস্ট জুড়ে শেয়ার বাজারের এমন দৌড়ই দেখলেন লগ্নিকারীরা। জুলাইয়ের শেষে যে সেনসেক্স ৫২ হাজারের ঘরে ছিল, এ মাসের শেষে তা-ই পৌঁছেছে ৫৭ হাজারের দোরগোড়ায়। মঙ্গলবার ৫৭ হাজারের ঘরেও ঢুকে পড়বে কি না, দেখার অপেক্ষায় লগ্নিকারীরা। সোমবার সূচকের প্রায় ৭৬৫ পয়েন্ট উত্থানে যাঁদের শেয়ার সম্পদ এক লাফে বেড়েছে প্রায় ৩.৫৬ লক্ষ কোটি টাকা। সেনসেক্স এ দিন প্রথম বার পা রেখেছে ৫৬,৮৮৯.৭৬ অঙ্কের নতুন শিখরে। ১৭ হাজারের মুখে পৌঁছেছে নিফ্টি-ও। তার অবস্থান ১৬,৯৩১.০৫-এ। বিএসই-তে এক দিনেই লগ্নিকারীদের সম্পদ বেড়েছে ৩.৫৬ লক্ষ কোটি।
সারা বিশ্বে বেশির ভাগ বাজারই চাঙ্গা ছিল এ দিন। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, সেই প্রভাব তো পড়েছেই। পাশাপাশি ভারতের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানো নিয়ে আশার পারদও চড়েছে। কারণ, মঙ্গলবার চলতি অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসের (এপ্রিল-জুন) বৃদ্ধির হার প্রকাশ করবে কেন্দ্র। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক এবং বিভিন্ন মূল্যায়ন সংস্থার পূর্বাভাস অনুযায়ী, তা হতে পারে ২০ শতাংশের কাছাকাছি। যদিও এত উঁচু হার গত বছরের একই সময়ে বৃদ্ধির নিচু ভিতের নিরিখেই। বাজার মহলের দাবি, সূচককে ঠেলে তোলার পেছনে ভূমিকা আছে এয়ারটেলের শেয়ার দরেরও। যা ৪.৪৪% বেড়েছে সংস্থা রাইটস ইসু (বর্তমান শেয়ারহোল্ডারদের বাড়তি শেয়ার বিক্রি) মারফত সংস্থা ২১,০০০ কোটি টাকা তুলবে শুনে।
তার উপরে এ দিন বিশ্ব বাজারে ঘুরেছে আমেরিকার শীর্ষ ব্যাঙ্ক ফেডারাল রিজ়ার্ভের কর্তা জেরোম পাওয়েলের এক বক্তব্য, যেখানে তিনি বলেন, এখনই ত্রাণ প্রকল্পে রাশ টানছেন না তাঁরা। বরং নজর রাখছেন পরিস্থিতিতে। তার পরেই নগদের জোগানে টান পড়ার উদ্বেগমুক্ত হয়ে চাঙ্গা হয় বিভিন্ন দেশের বাজার। তার ছাপ পড়ে ভারতেও।
দেকো সিকিউরিটিজ়ের ডিরেক্টর আশিস নন্দী বলেন, ‘‘করোনা সংক্রমণ কমছে। বাড়ছে টিকাকরণ। কাজকর্ম ছন্দে ফিরছে। চিনের সরকার সে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে নজরদারি বাড়ানোয় বহু সংস্থা ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ায় চলে আসছে। এই সবই সূচকের চাঙ্গা হওয়ার কারণ।’’ তবে বাজার চূড়ান্ত ঝুঁকিপূর্ণ, মনে করছেন ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের পর্ষদের চেয়ারম্যান ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর মতে, ‘‘দেশের অর্থনীতির তেমন উন্নতি ছাড়াই সূচক এত উঁচুতে। শুধু আশায় ভর করে। ফলে দেশে বা বিদেশে সামান্য অঘটনে তা পড়তে পারে।’’
এখনই সেই লক্ষণ অবশ্য দেখছেন না আইসিআইসিআই প্রুডেন্সিয়াল মিউচুয়াল ফান্ডের লগ্নি-কৌশল বিভাগের কর্তা চিন্তন হারিয়া। তাঁর মতে, ‘‘বাজার দাঁড়িয়ে রয়েছে নগদ জোগানের উপরে ভর করে। তা বজায় থাকলে বড় পতনের আশঙ্কা কম।’’