দশ বছর ধরে গড় হিসাবে সেনসেক্স প্রতি বার লগ্নিকারীদের আয় বাড়িয়েছে ২৩ শতাংশ করে। গত অর্থবর্ষে বাজার চূড়ান্ত ভাবে অনিশ্চিত থাকলেও সারা বছরের হিসাবে বৃদ্ধির হার কিন্তু ধরে রেখেছে সূচক। মঙ্গলবারই শেষ হওয়া গত আর্থিক বছরে, অর্থাৎ ২০১৪-’১৫ সালে সেনসেক্স বেড়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ। পাশাপাশি ন্যাশনাল স্টক এক্সচেঞ্জের সূচক নিফ্টির বৃদ্ধি ২৬.৬৫ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের আশা, নতুন আর্থিক বছর ২০১৫-’১৬ সালও নিরাশ করবে না বিনিয়োগকারীদের।
সদ্য শেষ হওয়া ২০১৪-’১৫ আর্থিক বছরে সেনসেক্স বেড়েছে মোট ৫,৫৭১.২২ পয়েন্ট। বছর শুরু হয়েছিল ২২,৩৮৬.২৭ অঙ্ক দিয়ে। মঙ্গলবার তা শেষ হল ২৭,৯৫৭.৪৯ অঙ্কে, সেনসেক্স পড়ল ১৮.৩৭ অঙ্ক। গত অর্থবর্ষে একবার ৩০ হাজারের ঘরও ঘুরে এসেছে সূচক। একই ভাবে নিফ্টির বৃদ্ধি ঘটেছে ১,৭৮৬.৮০ অঙ্ক। এ দিন বাজার বন্ধের সময়ে নিফ্টি দাঁড়ায় ৮,৪৯১ অঙ্কে।
তবে ভারতে সূচকের এই বৃদ্ধি যে প্রধানত বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির বিনিয়োগের সুবাদেই হয়েছে, সে ব্যাপারে একমত বিশেষজ্ঞরা। প্রবীণ বাজার বিশেষজ্ঞ অজিত দে এবং ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন সভাপতি ও স্টুয়ার্ট সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান কমল পারেখ উভয়েই বলেন, ‘‘ভারতে শেয়ার সূচকের উত্থানের ক্ষেত্রে চালিকাশক্তি হিসাবে যে প্রধান ভূমিকায় ছিল বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি, তাতে কোনও সন্দেহ নেই।’’
এক দিকে আমেরিকা এবং ইউরোপের আর্থিক সমস্যার জেরে ভারতের আর্থিক ক্ষেত্র নানা সমস্যার মুখোমুখি। অন্য দিকে দেশের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দীর্ঘ দিন ধরে চলেছে অনিশ্চয়তা। এই দুইয়ের যাঁতাকলে পড়ে শেয়ার বাজারের প্রতি লগ্নিকারীদের আস্থা একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছিল। কেন্দ্রে বিজেপির নেতৃত্বে গঠিত স্থায়ী সরকার সেই অবস্থার অনেকটাই পরিবর্তন করতে সমর্থ হয়েছে। অতিজবাবু বলেন, ‘‘কেন্দ্রের নতুন সরকারের প্রধান অবদান হল, লগ্নিকারীদের মনে শেয়ার বাজার সম্পর্কে আস্থাফিরিয়ে আনা।’’
চলতি আর্থিক বছর কেমন যাবে?
বিশেষজ্ঞরা এ ব্যাপারে বেশ আশাবাদী। শেয়ার বাজারে বর্তমানে চূড়ান্ত অনিশ্চয়তার কথা স্বীকার করে নিয়েও কমলবাবু বলেন, ‘‘ভারতে ৭ থেকে ৮ শতাংশ আর্থিক বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে, যা বিশ্বের অন্য কোনও দেশে আপাতত নেই। পাশাপাশি চিনের আর্থিক হালও ক্রমশ খারপ হয়ে পড়ছে। এই অবস্থায় বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির পক্ষে ভারত ছাড়া বিনিয়োগের জন্য অন্য কোনও দেশের শেয়ার বাজার খুঁজে পাওয়া মুশকিল।’’
অজিতবাবু বলেন, ‘‘নতুন আর্থিক বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের পর থেকে ভারতের শেয়ার বাজারের হাল উল্লেখযোগ্য ভাবে ফিরতে শুরু করবে বলে আমার বিশ্বাস।’’