—ফাইল চিত্র।
একের পর এক শৃঙ্গ জয় করেই চলেছে ভারতের শেয়ার সূচকগুলি। ৯ নভেম্বর সেনসেক্স ছিল ৪২ হাজারের ঘরে। মাত্র এক মাসে, ৯ ডিসেম্বর তা ঢুকে পড়ে ৪৬ হাজারে। দাঁড়ায় ৪৬,১০৩ অঙ্কে। ওই দিন নিফ্টি ছিল ১৩,৫২৯-তে। রেকর্ড উচ্চতা দুই সূচকেরই। আগের সাতটি কাজের দিনের ছ’দিন ধরে উঠে। নামমাত্র সংশোধন হয় বৃহস্পতিবার।
সূচকের এই উত্থানে লগ্নিকারীরা খুশি। বিশেষজ্ঞেরা চিন্তিত। কারণ, অর্থনীতির পরিস্থিতি অনুযায়ী নয়, বাজার মূলত উঠছে সেখানে অতিরিক্ত টাকার জোগান ওএবং সফল টিকা আসার পরে ভবিষ্যতে উন্নতির আশায়।
অথচ লকডাউন শুরুর আগে অর্থনীতির অবস্থা মোটেও ভাল ছিল না। কমছিল বৃদ্ধির হার। নামছিল চাহিদা। তা-ই আরও তলিয়ে গিয়েছে করোনার হানায় ও লকডাউনের ধাক্কায়। ফলে বাজারের এতটা উত্থানের পিছনে তেমন যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই। বরং বলা যায়, বিশ্বের বহু অর্থনীতি রাজকোষ উপুড় করে, এমনকি মোটা ঋণ করে টাকা ঢেলেছে ত্রাণে। যে কারণে বাজারে টাকার জোগানে ঘাটতি নেই। আর এই মোটা তহবিলেরই একাংশ ঢুকছে শেয়ারে।
দেশের অর্থনীতির কোনও কোনও ক্ষেত্রে উন্নতির ইঙ্গিত মিললেও, সামগ্রিক ভাবে ক্ষত এখনও গভীর। কিছু দিনের মধ্যেই টিকা মিলতে পারে এবং সেটা হলে অর্থনীতি আবার দুরন্ত গতি পাবে, এই আশায় ভর করেই উঠে চলেছে সূচক। কিন্তু বাস্তবে তা না-হলে এই উচ্চতা থেকে ধস নামার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
তবে অর্থনীতির উন্নতির আশায় যেমন বিদেশি আর্থিক সংস্থাগুলি ভারতে নাগাড়ে লগ্নি করছে, তেমনই আশঙ্কার কারণে শেয়ার বেচে চলেছে দেশের মিউচুয়াল ফান্ডগুলি। নভেম্বরে তাদের মোট বিক্রির অঙ্ক ছিল ৩০,৭৬০ কোটি টাকা। তা সত্ত্বেও বাজার দুর্বল হয়নি কারণ, এই সময়ে মোটা পুঁজি ঢেলেছে বিদেশি লগ্নিকারীরা। জানুয়ারি-নভেম্বর, এই ১১ মাসে সেই অঙ্ক ১.০৮ লক্ষ কোটি। সূচক এতটা ওঠার পিছনে এটাও বড় কারণ।
গত সপ্তাহে পাওয়া ভাল খবরের মধ্যে একটি, অক্টোবরে শিল্পে ৩.৬% উৎপাদন বৃদ্ধি। যা আট মাসে সর্বাধিক। মনে করা হচ্ছে, উৎসবের মরসুমে বাড়তি চাহিদাই এর কারণ। সপ্তাহের অন্যান্য খবরের মধ্যে আছে—
• পাইকারি (সংস্থার বিক্রি ডিলারদের কাছে) ও খুচরো (ডিলারদের শো-রুম থেকে বিক্রি), দুই বাজারেই উৎসবের মরসুমে যাত্রিগাড়ির বিক্রি বৃদ্ধি। তিন চাকা বাদে সব গাড়িই বেশি কিনেছে ডিলারেরা। কিন্তু তাদের শো-রুম থেকে দু’চাকা, তিন চাকা, বাণিজ্যিক— সব গাড়িরই বিক্রি কমেছে।
• জীবন বিমা শিল্পে নভেম্বরে নতুন ব্যবসা বাবদ প্রিমিয়াম ২৭% কমা। এলআইসি-র ক্ষেত্রে সঙ্কোচন ৩৫%। বেসরকারি বিমা সংস্থাগুলির ৫.১৫%।
• নভেম্বরে দেশে কর্মসংস্থান কমেছে ০.৯%। অক্টোবরে কমেছিল ০.১%। গত মাসে কাজ গিয়েছে ৩৫ লক্ষের।
(মতামত ব্যক্তিগত)