ফাইল চিত্র।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছে দেশ জুড়ে। রাজ্যে রাজ্যে জারি হচ্ছে লকডাউন, নাইট কার্ফু। আশঙ্কা বাড়ছে শিল্পমহলে। তবে এর মধ্যেও করোনা সমস্যা গত বছর দেশকে যতটা কাবু করেছিল, এ বছর ততটা করতে পারবে না বলে দাবি করলেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। কেন্দ্র যে দেশ জুড়ে পুরো লকডাউনের বিরুদ্ধে, জানালেন সেই কথাও। বললেন, রাজ্যগুলির সঙ্গে লাগাতার কথা চলছে। তারা প্রয়োজনে স্থানীয় ভাবে তা করতে পারে। সেই সঙ্গে কলকাতায় মার্চেন্ট চেম্বারের সভায় মঙ্গলবার শিল্পমহলের কাছে সরকারের উপরে ভরসা রাখার আবেদনও করেছেন নির্মলা। পরে এ দিন সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও লকডাউনকে শেষ সমাধান হিসেবে দেখতেই রাজ্যগুলিকে আর্জি জানিয়েছেন। মনে করিয়ে দিয়েছেন দেশ করোনা মোকাবিলায় গত বছরের চেয়ে অনেকটাই তৈরি।
২০২০ সালের মার্চে করোনার প্রথম দফায় লকডাউনের জেরে থমকে গিয়েছিল দেশের আর্থিক কর্মকাণ্ড। ধাক্কা খেয়েছিল অর্থনীতি। তবে এ বারের পরিস্থিতি অনেকটাই আলাদা বলে দাবি করেছে মোদী সরকার। প্রধানমন্ত্রীর মতো সীতারামনের কথায়, ২০২০ সালে ওই সমস্যা মোকাবিলার জন্য পরিকাঠামো দেশে প্রায় ছিলই না। সরকার তার পর থেকে দ্রুত সেই পরিকাঠামো অনেকটাই গড়ে তুলেছে। বর্তমানে দেশে করোনা পরীক্ষার জন্য ২৩০০টি ল্যাবরেটরি রয়েছে। দিনে ১৫ লক্ষ লোকের পরীক্ষা করানো সম্ভব। তার উপরে চালু হয়েছে প্রতিষেধক দেওয়া। অর্থমন্ত্রীর দাবি, সরকার টিকাকরণে জোর দিতে সিরাম ইনস্টিটিউট এবং ভারত বায়োটেককে আগাম ৪৬৫০ কোটি টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিষেধক নেওয়ার ন্যূনতম বয়স ১৮ বছর করায় যাতে অন্তত আগামী জুলাই পর্যন্ত জোগানে ঘাটতি না-হয়, সে জন্যই ওই টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এর পাশাপাশি ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণ, শ্রমবিধি তৈরির মতো আর্থিক বা অন্যান্য ক্ষেত্রে যে সমস্ত সংস্কারের পথে তাঁরা হেঁটেছেন, তার সুফলও ২০২১ সালে পাওয়া যাবে বলে এ দিন জানিয়েছেন নির্মলা। তবে সেই সঙ্গেই মনে করিয়েছেন, দেশকে শিল্পায়ন ও আর্থিক বৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে সরকারের উপরে শিল্পমহলের আস্থা থাকতে হবে। জরুরি বিশ্বাসের সম্পর্ক থাকাও। তাঁর কথায়, ‘‘এই সম্পর্ক এমন হওয়া উচিত যেখানে সরকার এবং শিল্প উভয়েই উভয়ের উপর আস্থা রাখবে এবং দু’পক্ষই একে অন্যকে বিশ্বাস করবে। সরকারের সব কাজকে অবিশ্বাসের চোখে দেখলে আখেরে সব পক্ষেরই ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’’
এ দিন বিভিন্ন বণিকসভা এবং বিভিন্ন শিল্পের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনার মধ্যেই কৌশলে কিছুটা বিধানসভা ভোটের প্রচারও সেরে ফেলেছেন অর্থমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে শিল্পায়ন প্রক্রিয়ায় অক্সিজেনের জোগান জরুরি হয়ে পড়েছে। এক সময়ে যে পশ্চিমবঙ্গ শিল্পে অনেকের থেকেই এগিয়ে ছিল, এখন তার অবস্থান নীচের সারির রাজ্যগুলির মধ্যে।’’ এই প্রসঙ্গে দার্জিলিং চায়ের প্রসঙ্গ টেনে নির্মলা বলেন, ‘‘এক সময়ে দার্জিলিং চায়ের নাম বিশ্বজোড়া ছিল। এখন তা মুছে যাওয়ার পথে। আমি চাই পশ্চিমবঙ্গ ফের শিল্পায়নে তার পুরনো ঐতিহ্য ফিরে পাক।’’ পরে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলার সময়ে নির্মলা দাবি করেন, ক্ষমতায় এলে বিজেপি সে দিকে লক্ষ্য রেখেই কাজ করবে।
মঙ্গলবার ইন্ডিয়ান চেম্বারের প্রতিনিধি দলও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে। করোনা সমস্যা, জিনিসের দাম বৃদ্ধি, সুদের হার, মূল্যবৃদ্ধি এবং নগদের জোগান-সহ একাধিক বিষয়ে তাদের মতামত অর্থমন্ত্রীকে জানায় তারা।